আমার ব্লগ জীবন
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:২৫:৫৫ রাত
২০১২ সালের জুন মাসের আগে আমি কখনও ‘ব্লগ’ শব্দটিই শুনিনি। নেটজগতে আমার যাতায়াত ছিলনা বললেই চলে। একদিন ‘রোদের আলো’র বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন সে মাত্র ব্লগ জগতে প্রবেশ করেছে। এসবি ব্লগে তার লেখা প্রকাশ হয়েছে। উৎসাহ নিয়ে আমাকে লেখা দেখাল। আমি দেখলাম, পড়লাম, উৎসাহ দিলাম এবং ব্লগে কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় তা জেনে আসলাম।
প্রায় পুরো মাসই আমি এসবি , আমার বর্ণমালা এবং আরও ২/১ টা ব্লগে ভিজিটর হিসেবে যাতায়াত শুরু করলাম। এসবি ব্লগের কয়েকজন ব্লগারের লেখা নিয়মিত পড়তাম। এসবি ব্লগই আমার পড়া প্রথম ব্লগ। ওখান থেকে বিভিন্ন ব্লগারের লেখার লিঙ্ক থেকে আমার বর্ণমালা এবং অন্যান্য ব্লগগুলোও পড়া শুরু করি। এসবি ছাড়াও আমার বর্ণমালা পড়তে ভালো লাগতো। তবে এই ব্লগের প্রায় সব ব্লগারই এসবিতে লিখত। জুলাই মাসের শেষের দিকে আমি প্রথমে এসবিতে রেজিস্ট্রেশন করি। এরপরে আমার বর্ণমালায়।
এসবি ব্লগের নিয়মানুযায়ী আমি কোন পোস্টে কমেন্ট করতে পারতাম না। আমি শুধুমাত্র আমার পছন্দের লেখাগুলোতে লাইক দিতাম। কত লেখায় যে লাইক দিয়েছি!!! মনেমনে ভাবতাম- আমি যদি শুধুমাত্র মন্তব্য করার অধিকার পেতাম তাহলে প্রিয় ব্লগারদের লেখায় মন্তব্য করতাম! আমি নিজে কিছু লিখব এই সাহস মনের মধ্যে কোনভাবেই আসতোনা। এত্ত সুন্দর সুন্দর ও মানসম্মত লেখা সবাই লিখছে। এইখানে লিখার মত কি যোগ্যতাইবা আমার আছে?
প্রায় দুইমাসেরও বেশি সময় নিরব পাঠিকা হিসেবেই ছিলাম। একসময় চিন্তা করলাম পরবর্তীতে কিছু লিখি আর নাই লিখি, নিয়মানুযায়ী মন্তব্য করার জন্য হলেও তো আমাকে দুইটা পোস্ট লিখতে হবে! যেই ভাবা সেই কাজ! মাথায় একটা আইডিয়া আসলো-'মুত্তাফাকুন আলাইহি' নামে একটি হাদিসের সিরিজ চলাতে পারি।' তাই কয়েকটি হাদিস সংগ্রহ করলাম। এরপর দুইটা নির্ভেজাল কপিপেস্ট লিখা দিলাম। একটা ছিল মুত্তাফাকুন আলাইহির প্রথম পর্ব; আরেকটি ছিল একজন সাহাবীর জীবনের একটি ঘটনা।
কিন্তু মন্তব্য করার অধিকার কিংবা প্রথম পাতায় স্থান কোনটাই হচ্ছেনা। পোস্ট দুইটা ডিলিট করে দিলাম। এই পোস্ট দুইটাই আমার বর্ণমালায় দিলাম। কয়েকজন সিনিয়র ব্লগার আমাকে ‘স্বাগতম’ জানাল। উৎসাহের সাথে এই ব্লগের বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্য করতে লাগলাম।
কিছুদিন পর আবারও এসবিতে ঐ পোস্ট দুইটা দিলাম। তখন কুরবানি ঈদের সময় ছিল। দেখলাম সবাই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমি মন্তব্য করতে না পেরে প্রিয় কয়েকজন ব্লগারকে বার্তার মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম। সবাই-ই আমার বার্তার জবাব দিলেন। লিখতে উৎসাহ দিলেন। এবার দুই ব্লগেই সম্ভবত তিন পর্বে সুরা আল মাউনের দারস দিলাম। তখন এসবিতে আমার মোট পোস্টের সংখ্যা হল পাঁচটি। এরই মধ্যে মন্তব্য করার সুযোগ পেলাম।
কিন্তু প্রথমপাতা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল। ফিডব্যাক এ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলাম। তারা জানাল - 'সৃজনশীল লেখা দিতে হবে।' লিখলাম সুরা আত তাকাসুরের ভাবানুবাদ নিয়ে একটি কবিতা দুনিয়ার মোহ এবং ছোটগল্প উপলব্ধি। তারপরও প্রথম পাতার দেখা নেই। এই সময়ে বেশ কয়েকজন নতুন পুরাতন ব্লগার আমাকে নিয়মিত উৎসাহ দিতেন। মুক্তিযোদ্ধার ভাগনে, হাবিব ভাই(বাকপ্রবাস), জান্নাত(জোছনার আলো), আবু ওয়াফি এবং আরও কয়েকজন। সবার নাম মনে পড়ছেনা।
কয়েকদিন পরে প্রথম পাতার সুযোগ পেলাম। প্রায় পুরো অক্টোবর মাস এভাবেই গেল। এরপর যখন যা-ই লিখতাম দুইটি ব্লগেই তা একই সময়ে পোস্ট করতাম। নভেম্বর থেকে জানুয়ারী এভাবেই গেল। জানুয়ারীর প্রথম দিকে অনলাইনে আমারদেশ পত্রিকা পড়তে গিয়ে টুডে ব্লগের সন্ধান পেলাম। বিজ্ঞাপনটা আমার জন্য বেশ আকর্ষণীয় ছিল-'রেজিস্ট্রেশন করলেই প্রথম পাতায় লেখা প্রকাশিত হবে।' সাথে সাথে রেজিস্ট্রেশন করে লেখা দিলাম। এসবিতে বার্তায় অনেককে এই নতুন ব্লগের কথা জানালাম এবং রেজিস্ট্রেশন করতে বললাম।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এসবি বন্ধ হয়ে গেল। তারও কিছুদিন পরে আমার বর্ণমালাও বন্ধ। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আল্লাহর অসীম রহমতে টুডে ব্লগ টিকে আছে। এর মধ্যে অবশ্য আরও দুইএকটা ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করেছি; কিন্তু ওগুলোতে নিয়মিত হতে পারিনি। খানভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসের লিঙ্ক ধরে উনাদের লাইট হাউসে গিয়েছি, আছি......থাকব ইনশাআল্লাহ।
আমি যখন প্রথম ব্লগে রেজি করি তখন মূল উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াতি কাজ করা। এখন যদিও অনেক হাবিজাবি পোস্ট লিখি, প্রথমে এ ধরণের কিছু লিখার চিন্তাও ছিলনা। আর ব্লগে দাওয়াতি কাজ প্রবন্ধ বা গল্পের মাধ্যমে করাটাই মনে হয় বেশি ভালো। আমি এর ধারে কাছেও নেই। গল্প বা প্রবন্ধ ভালোভাবে লিখতে পারিনা। তাই ঐ পথে যেতে চাইনা।
আল্লাহর রহমতে সব ব্লগেই অন্য ব্লগারদের সীমাহীন উৎসাহ পেয়েছি যা এতটুকু আসতে সাহায্য করেছে। প্রত্যেকের প্রতিই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আরেকটা হাবিজাবি পোস্ট পড়ার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭০ বার পঠিত, ৯১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
< < < < দ খ ল > > > >
< < < < দ খ ল > > > >
< < < < দ খ ল > > > >
হুমম... না পড়েই জায়গা দখল? এই যুগে আরও কত কি দেখব!!!
রোদের আলোতো ফেসবুকে সবসময়ই আছে.... ব্লগে কম আসে।
আপনার লক্ষ্য আল্লাহ কবুল করুন সেই দোয়া করি ,,আমীন
আপনি এসবিতে ছিলেননা?
আপনার ব্লগিং জীবনি পড়ে মনে পরে গেছে।
আপনার মতো আমারও মূল উদ্দেশ্য ছিল দাওয়াতি কাজ করা। কিন্তু কেমনে জানি কি হয়ে গেল আমার, কত্তো হাবজাব পোস্ট যে করি!!
আপনার প্রতিটি পোস্ট খুব চমৎকার ও আকর্ষণীয়। কোন হাবিজাবি পোস্ট আমি কিন্তু দেখিনি।
মারিয়াম আপি ধন্য
গল্প কবিতার জন্য
লেখা গুলো খুব
াপড়ার মাঝে সুখ
লেখনী কলম তোমার
ছাড়বে না কভু
আসবে বাঁধা লেখে যাবে তবু ।
চমৎকার কাব্যিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
এ যাবত আপনার যত পোস্ট আমি পড়েছি তাতে একটাতেও কোন হাবিজাবি লেখার সন্ধান পাইনি। আপনার কবিতাগুলো যেমন দাওয়াতী কাজের অংশ তেমনি অন্যন্যা লেখাগুলোও মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ। দাওয়াতী কাজগুলো তখনই ফলদায়ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী যখন মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সদুত্তর পাওয়া যাবে দাওয়াতী কার্যক্রমের মধ্যে। আমরা যারা টুকটাক লেখালেখির সাথে নিজেকে জড়িত করার সুযোগ পেয়েছি তাদের লেখাতে যদি মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান ইসলামের আলোকে ফোকাস করে তুলে ধরতে পারি তবে তাওয়াতী কাজের ইফেক্ট হয়তো আরো মজবুত হতে পারে।
আপনার লেখালেখিতেও জীবন ঘনিষ্ঠ জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া যাচ্ছে। যদি সম্ভব হয় এসব জিজ্ঞাসার জবাবের পরিধি আরো বাড়ানো যেতে পারে।
বি. দ্র.: আপনি আমার অনেক সিনিয়র এবং আমার চেয়ে অনেক জ্ঞানী। আমার মন্তব্যটি কিছুটা পরামর্শমূলক হয়ে গেলো। আসলে এই মুহুর্তে আপনার ব্লগটি পড়ে বিষয়টি আমি সেভাবেই চিন্তা করেছি। তাই আমার কথায় মনে কষ্ট পেলে ক্ষমা চাই। বেয়াদবী মাফ করবেন। দোয়াও চাই।
আপনার এত চমৎকার মন্তব্যে মনে কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। আপনি অবশ্যই অনেক বিচক্ষণ ও জ্ঞানী একজন ব্লগার। আপনাদের পরামর্শ সব সময়ই চাই।
দাওয়াতি কাজের ব্যাপারে আপনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করছি। ধন্যবাদ।
তবে চুল কালো আর ঘন করার জন্য 'বড়আপা'র ভূমিকা নিতে আমি এখনও রাজি আছি
আপনাদের এত উৎসাহ পাই বলেইতো আবারও লিখতে সাহস পাই। বৃত্তমণিকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য সব রকমের দুয়া রইলো
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন । এই প্রত্যাশা রইল ।
কিন্তু সে হারালো কোথায় বলেন তো?
আমার ব্লগ যাত্রার শুরুটাও ছিল ঐ এসবির মধ্যে দিয়ে।
আপনার লেখনি দিয়েই আশাকরি আরো অনেক উপরে উঠে আসবেন। এমনও তো হতে পারে আপনার বই কিনতে কিংবা অটোগ্রাফ নিতে আমরা ভিড় জমালাম বই মেলার কোন এক পড়ন্ত বিকেলে। তখন বলব চিনতে পারছেন ????
অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
আমার জুনিয়রকে বলে দেব-অটোগ্রাফের সিরিয়ালে আপনার নাম এক নাম্বারে রাখতে
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যারা নতুন লিখছে তাদেরকে সব সময় প্রথমপাতায় আসা এবং অন্যান্য বিষয়গুলিতে সাহায্য করব; কিন্তু ব্লগটাই যে বন্ধ হয়ে গেল!!!
তবে আল্লাহ যা করেন তারমধ্যেই নিহিত থাকে কল্যাণ। তা না হলে ব্লগেও আসা হতো না আর আপনাদের মত বোনদেরকেও পাওয়া হতো না। এসবিতে আপনি যখন বার্তা পাঠাতেন, ছোটবোন কেমন আছো? অনেক ভালো লাগতো। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপু।।
আমিও তোমার মতই খুবই অল্পদিন এসবিতে ছিলাম। তারপরও কতজনকে আপন করে পেয়েছি।
ধন্যবাদ
চমত্কার একজন ব্লগারের সাথে সাক্ষাত্ হল
নতুন করে আজ।
আপু শুকরিয়া।
খুব ভালো লাগলো।
কিন্তু তুমি থাক কই? কেমন আছ?
আর আমি না চাইতেই সবকিছু পেয়ে যাই আলহামদুলিল্লাহ ।
অনেক ধন্যবাদ।
সচরাচর দাওয়াতী পোস্ট (সরাসরি আয়াতের ব্যাখ্যা, হাদীসের বিশ্লেষণ) তেমন একটা ভিজিটর এ্যট্র্যাক্ট করতে পারে না। তাই বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে, বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে দাওয়াতী কাজ করাটাই বেশি বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনেহয় আমার কাছে।
আপনার প্রত্যেকটা পোস্টই শিক্ষণীয়, আকর্ষনীয়। জাযাকিল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন