মুত্তাফাকুন আলাইহি-২৭
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৪৬:১০ সন্ধ্যা
জুলুম করা হারাম এবং জুলুম প্রতিরোধ করার নির্দেশ-২
৯০) হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম ﷺ আমাকে ইয়ামেনের শাসকরূপে পাঠানোর সময় বলেন,’ তুমি আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত একটি জনগোষ্ঠীর কাছে যাচ্ছো। তুমি তাদেরকে এরূপ সাক্ষ্য দিতে আহবান জানাবে যে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।’ তারা যদি এ আহবানে সাড়া দেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, প্রতিটি দিন-রাতের নির্দিষ্ট সময়-সীমার মধ্যে আল্লাহ তাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা যদি তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন। এটা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে তাদের গরীবদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। তারা যদি তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে বেছে বেছে তাদের উত্তম মালগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। আর ‘মজলুম বা নির্যাতিতদের অভিশাপকে ভয় করো। কেননা তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল নেই।’
৯১) হযরত আবু হুমাইদ আবদুর রহমান ইবনে সা’দ আস্ সা’ইদী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আযদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলে আকরাম ﷺ যাকাত আদায়ের কাজে নিয়োগ করেন। লোকটির ডাক নাম ছিলো ইবনে লুতবিয়্যাহ। সে যাকাত আদায় করে ফিরে এসে রাসূলে আকরামﷺকে বললো,’ এই মাল আপনাদের আর এই মাল আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে।’
এ কথা শুনে রাসূলে আকরাম ﷺ মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেন, ‘দেখো, আল্লাহ আমাকে যেসব পদের অভিভাবক নিযুক্ত করেছেন, তার মধ্য থেকে কোন পদে তোমাদের কাউকে নিযুক্ত করি। সে আমার কাছে ফিরে এসে বলে ‘এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে উপহার স্বরূপ দেয়া হয়েছে।’
এ ব্যক্তি তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থাকে না কেন? সে যদি সত্যভাষী হয় তবে সেখানেই তো তাকে উপহার পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ অন্যায় বা অবৈধভাবে কিছু গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন সে তা বহন করতে করতে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। কাজেই আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর দরবারে এ অবস্থায় হাজির হতে দেখতে চাই না যে, সে আস্ত উট বহন করবে আর তা আওয়াজ করতে থাকবে অথবা গাভী বহন করে নিয়ে আসবে আর তা হাম্বা হাম্বা রব করতে থাকবে। অথবা ছাগলের বোঝা বহন করে নিয়ে আসবে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ রব করতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি স্বীয় দু’হাত এত ওপরে তুললেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা লোকদের দৃষ্টিগোচর হলো।
তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি কি তোমার আদেশ লোকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি?’
তিনবার তিনি একথা বললেন।
৯২) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেন,’ মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস পরিহার করে চলে।’
(বুখারী ও মুসলিম)
.
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ২০৮, ২০৯ ও ২১১]
মুত্তাফাকুন আলাইহি-২৬
বিষয়: বিবিধ
১২৮৬ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়।'
[ আন্ নিসা; আয়াত নং- ৩০]
ধন্যবাদ আপা৷
“যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।”
[আল বুরূজ; আয়াত নং-১০]
'এভাবে যারা কুফরী ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে এবং জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনো মাফ করবেন না'
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১৬৮ ]
'তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।'
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১১০]
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলেন,'তোমরা জুলুম করা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকারময় ধোঁয়ায় পরিণত হবে। (তোমরা) কার্পণ্যের কলুষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা, কার্পণ্যই তোমাদের পূর্বেকার অনেক জনগোষ্টীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কার্পণ্য তাদেরকে রক্তপাত ও মারপিট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি যুগিয়েছে।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন; 'একদা রাসূলে আকরাম ﷺ জিজ্ঞেস করলেন,' তোমরা কি জানো কোন্ ব্যক্তি দরিদ্র-নিঃস্ব?'
সাহাবীগণ বললেন,' আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র যার কোন ধন-মাল নেই।'
তিনি বললেন,' আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচাইতে দরিদ্র হবে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু দেখা যাবে যে সে কাউকে গালমন্দ করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মারধোর করেছে অর্থ্যাৎ এসব অপরাধ ও সে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। এদেরকে তার সৎকাজগুলি দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ করার পর্বেই যদি তার সৎকাজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। এরপর তাকে দোযখে ছুঁড়ে মারা হবে।'
(মুসলিম)
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন,'মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে।
(বুখারী)
হযরত আদী ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম ﷺ কে বলতে শুনেছি, 'আমরা তোমাদের কাউকে কোন সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। এরপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তারচেয়ে বেশি কিছু যদি আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারীরূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে।'
আনসার গোত্রের জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,' হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন।'
বর্ণনাকারী বলেন,' আমি যেন এ দৃশ্যটা এখনও দেখতে পাচ্ছি।'
তিনি বললেন,' তোমার হি হয়েছে?'
সে বললো, 'আমি আপনাকে এভাবে এভাবে বলতে শুনেছি।'
তিনি বললেন,' আমি এখনও তাই বলবো। আমরা তোমাদের কাউকে কোন পদে নিয়োগ করলে সে কম-বেশি সবকিছু নিয়ে আসবে। তার থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা-ই সে নেবে আর যা থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা থেকে বিরত থাকবে।'
(মুসলিম)
'যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়।'
[ আন্ নিসা; আয়াত নং- ৩০]
“যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।”
[আল বুরূজ; আয়াত নং-১০]
'এভাবে যারা কুফরী ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে এবং জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনো মাফ করবেন না'
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১৬৮ ]
বারাকাল্লাহু ফীক
'তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।'
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১১০]
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলেন,'তোমরা জুলুম করা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকারময় ধোঁয়ায় পরিণত হবে। (তোমরা) কার্পণ্যের কলুষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা, কার্পণ্যই তোমাদের পূর্বেকার অনেক জনগোষ্টীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কার্পণ্য তাদেরকে রক্তপাত ও মারপিট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি যুগিয়েছে।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন; 'একদা রাসূলে আকরাম ﷺ জিজ্ঞেস করলেন,' তোমরা কি জানো কোন্ ব্যক্তি দরিদ্র-নিঃস্ব?'
সাহাবীগণ বললেন,' আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র যার কোন ধন-মাল নেই।'
তিনি বললেন,' আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচাইতে দরিদ্র হবে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু দেখা যাবে যে সে কাউকে গালমন্দ করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মারধোর করেছে অর্থ্যাৎ এসব অপরাধ ও সে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। এদেরকে তার সৎকাজগুলি দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ করার পর্বেই যদি তার সৎকাজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। এরপর তাকে দোযখে ছুঁড়ে মারা হবে।'
(মুসলিম)
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন,'মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে।
(বুখারী)
মন্তব্য করতে লগইন করুন