প্রোষিতভর্তৃকা-২
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৫৪:১২ সকাল
ঘটনা-২
আমার আপন খালাতো বোনের কথা। প্রবাসী পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে পিতামাতা ভীষণ তৃপ্ত। বিয়ের কয়েকমাস পরে দুলাভাই তার কর্মস্থলে চলে গেলেন। এবার আপার কিছু সমস্যা শুরু হল। কিছুটা শারীরিক, কিছুটা মানসিক। চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসলেন। ভাশুরের বাসায় উঠলেন। উনার বড় জা উনাকে ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দিলেন। কোন রোগ ধরা পড়লোনা।
ডাক্তার বললেন, 'উনার স্বামী যদি দেশে চলে আসেন তা হলে হয়তো উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।' কিন্তু এটা তো আর সম্ভব না। ফলে আপাও সুস্থ হলেননা। নিকটতম দূরতম সকল আত্মীয় স্বজন নিয়মিত তার খোঁজখবর নেয়া শুরু করলেন। সে দুঃশ্চিন্তা করে কি না এই বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে আপা সাফ জানিয়ে দিতেন - 'আমি কোন দুঃশ্চিন্তা করিনা।' এভাবে ২/৩ বছর কেটে গেল। দুলাভাই দেশে আসলেন। আপা পুরো সুস্থ। উনার কোন সমস্যা নেই।
এভাবে দুলাভাই দুই /তিন বছর পরপর দেশে আসতেন। বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। আপা তিন কন্যাসন্তানের জননী হয়েছেন। রোগটা রয়েই গেছে তবে তীব্রতা আগের চাইতে কম। আরও কয়েকবছর পর দুলাভাই স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসলেন। আপা সম্পূর্ণ সুস্থ।
ঘটনা-৩
আমার গ্রামের এক বধুর কথা বলছি। উনি, উনার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি এই চারজন নিয়ে সংসার। উনার শ্বশুরের আরও ৩/৪টি ছেলে আছে। তারা প্রত্যেকে পৃথক সংসারে থাকে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সবাই তাদের শ্বশুরবাড়িতে আছে। জীবিকার প্রয়োজনে তার স্বামী একসময়ে প্রবাসী হতে বাধ্য হয়।
সন্তানাদি হয়নি, কমবয়সী মেয়ে। এই মেয়ের উপর যদি বাইরের শকুনের দৃষ্টি পড়ত সবাই আর দশটা ঘটনার মতই হয়ত মনে করত। কিন্তু এই বধূটি তার স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর (ঠিক কতদিন পরে তা আমি জানিনা) নিজ শ্বশুর দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছে।
এই ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় ঢিঢি পড়ে যায়। একপর্যায়ে ছেলের কানেও এই কথা যায় এবং ছেলে তার মাকে বলে বউকে যেন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। সেই বউটি এখন কোথায় আছে, কেমন আছে, আদৌ বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা। গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয়না। আমার বড়ফুফুর মুখে ঘটনাটা শুনেছিলাম।
ঘটনা-৪
প্রায় একমাস আগের কথা। আমার এক চাচাত দেবরের মেয়েকে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক দোজবরে পাত্রের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের বাড়ীর যা অবস্থা শুনেছি, কোনভাবেই এই মেয়ের পরিবারে তাদের আত্মীয়তা করার কথা নয়। গতবছর তার প্রথম বউ একজনের সাথে পালিয়ে যায়। সে এবার দেশে এসে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ে করেছে। তাদের যুক্তি হল যেহেতু গরীব ঘরের মেয়ে তাই এই মেয়ে তাদের কথামত চলবে। শুনেছি এ মাসের শেষের দিকে সে চলে যাবে। আবার ২/৩ বছর পর আসবে।
ঘটনা-৫
গতকাল সকালবেলা আমার ফুফাত ভাই ফোন করে উনার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিলেন। মেয়েটি এবার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিবে। আমি জানতে চাইলাম- 'পাত্র কি করে, পড়াশোনা কতটুকু করেছে?'
ভাই জবাব দিলেন,' বিদেশ থাকে, অবস্থা বেশ ভালো। আর পড়ালেখা তেমন একটা নাই।' ছেলে এস.এস.সি পাশ কি না এটাও উনি স্পষ্টভাবে বলতে পারলেননা।
এক পর্যায়ে আমি জানতে চাইলাম- 'বিয়ের পর কি মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যাবে?'
উনি অবাক হয়ে বললেন,'ওকে নিবে কেন?'
এই হচ্ছে আমাদের অভিভাবকদের অবস্থা।
ঘটনা-৬
এবার আমার শোনা একটি ঘটনা। ভদ্রমহিলার বয়স খুব বেশী নয়। এক বা দুই সন্তানের জননী। ইনি চেষ্টা করেন ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলতে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্বামীর অনুপস্থিতির কারনেই হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক তিনি একজনের সাথে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন।
অনেকেই মনে করেন ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই ধার্মিক মেয়েটিকে একটি ইতিবাচক পরিবেশ দেয়াও যে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দায়িত্ব তা আমরা জানিনা। অথবা জানলেও মানিনা। শুধুমাত্র তাকওয়াসম্পন্ন স্ত্রী সন্ধান করলেই কি এসব সমস্যার সমাধান হবে? স্বামীকেও তাকওয়াসম্পন্ন হতে হবে এবং বউ যাতে তার প্রাপ্য সব অধিকার পায় তা-ও স্বামীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এই নারীও যে ‘রক্ত মাংসের তৈরি’ এই বোধটুকু যদি তার স্বামীর থাকত তবে সে নিশ্চয়ই তার বউকে ছোট বাচ্চা সহ ঢাকায় একা একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখতনা। এই চরম ঘৃণিত কাজটি করার পর সেই মহিলাই বা কতটুকু ভালো আছে তা জানিনা। তবে এই ধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে এখন খুব বেশী মাত্রায়ই ঘটছে।
প্রোষিতভর্তৃকা-১
বিষয়: বিবিধ
২২৮২ বার পঠিত, ৮৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তবে এটি যেন কোনভাবেই প্রবাসীদের আত্মসম্মানকে আহত না করে সে বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচনা এগুনোর জন্য লেখিকার কাছে বিনীত অনুরোধ।
২। প্রবাসীরা এ দেশের অর্থনীতির অক্সিজেন। একজন প্রবাসী নিজে অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েও তার পরিবারে যে অবদান রেখে চলেন সেটা অনস্বীকার্য। প্রবাসীর অবদানকে মাথায় রেখে প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা যদি তার স্ত্রীকে একটু মমতা দিয়ে আগলে রাখেন, পরিবারে ইসলামচর্চার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখেন তাহলে এসব অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
৩। শখ করে মানুষ ভ্রমণ করে। কিন্তু শখ করে প্রবাসী হয়না কেউ। অনেক অবস্থাসম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত ঘরের লোককেও প্রবাসী হতে দেখেছি। কপালের লিখন না যায় খন্ডন।
৪। প্রবাসী নন কিন্তু সীমিত আয়ের অনেক চাকরিজীবি আছেন যাদের পক্ষে স্ত্রীকে কাছে রাখার সঙ্গতি নেই। এরা অনেকেই হয়তো মাসশেষে এক/দুই দিন স্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়ে থাকেন। গড়পড়তা তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবনে একজন প্রবাসীর চেয়েও কম স্ত্রীর সান্নিধ্য পান তারা।
৫। একজন প্রবাসী বছর শেষে বা দু/একবছর শেষে ৩০/৪০/৬০ দিনের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। তখন যতটা স্বাধীনভাবে মুক্তভাবে স্ত্রী/সন্তান/স্বজনদের সান্নিধ্য পেয়ে উপভোগ করেন সেটা যারা আমরা দেশে আছি তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এ ব্যস্ততাময় জীবনে।
শেষ কবে টানা এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছি ভুলেই গিয়েছি।
আমি নিজের জীবন নিয়ে অনেক ফান করি কিন্তু অন্যের জীবন নিয়ে ফান করার অধীকার আমার নেই, তাই আমি বিয়ের আগে চেষ্টাও করেছি বিষয়টা এভয়েড করার, আর যখন করতেই হচ্ছে তখন অগ্রীম বলে দিয়েছি সবাইকে, পাত্রী বিদেশ আসবে সেটা যেন কেউ কল্পনা না করে, আমি ১পার্সেন্ট গ্যারান্টি দেবনা, আমি আসলে না করার জন্য এটা ফ্যামিলিকে বুঝলাম, ফ্যামিলি সেটা বুঝে ওভাবে সব এরেন্জ করেছে তাই বললাম কপালে আছে,
এখন কথা হল, আমার ব্যাক্তিগত অভিমত এভাবে বিয়ে করার চাইতে না করাই ভাল, করতে হলে বিয়ের আগেই বলা উচিত ফ্যামিলি দেশে থাকবে আর ছুটি ছাটার ধরণ, আমি সেটা করেছি, অনেকে গোপন করে
সবশেষে বলা যায় আমার জন্য কেউ কষ্ট পাবে আমি সেটা মানতে পারিনা, আমাকে পিড়া দেয়, তাই আমি মন্তব্যটা করেছি, আমি এখনো মনে করি বিয়ে করা উচিত নয়, তবুও করতে হয় এটাই বাস্তবতা
উপসংহার হল আমি ইমোশনাল হয়ে বলছি কথা গুলো এমন ভাবার দরকার নেই, আমি নিজের বেলায় ফানী, অন্যের বেলায় ইমোশনাল হতে পারি, আর তাই মন্তব্যটা করা
রিকশায় উঠলাম,
ভাই কেমন আছেন
জ্বি ভাল
বাড়ি কোথায়
রংপুর
ছেলে মেয়ে আছে?
হুম আছে তিনটা
কি করে?
স্কুলে দিছি
দেশে কবে গেছেন শেষ বার
বছর খানেক হইছে
আবার কবে যাবেন?
দেখি..
ঈদে যাবেন না?
আমাগো ঈদ আবার কি
বেশ খারাপ লাগলো এই ভেবে যে আমিতো শুধুমাত্র আমার দেখা বা জানা ঘটনাগুলোর সারমর্ম থেকেই এই পোস্ট লিখেছি।
এটা শুধুমাত্র একটা সচেতনতামূলক পোস্ট ছাড়া আর কিছুই না।
এখন আপনার মন্তব্য দেখে আমিও ওহিদ ভাইয়ের সাথে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রবাসী ভাইদের প্রতি অনুরোধ সম্ভব হলে স্ত্রী সাথে নিয়ে যাবেন, নচেত আল্লাহর কাছে দোয়া ও চেষ্টাফিকির করবেন দেশেই যেন উত্তম রিজিকের ফয়সালা করে দেয়।
আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।
আর বিয়ে সহ অন্যান্য সামাজিক আচারাধি সহজতর করা উচিৎ
এখন যেগুলো হচ্ছে সব এটেনশান হাঙ্গরী মানে লোক দেখানো ব্যাপার
১। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। তবে এটি যেন কোনভাবেই প্রবাসীদের আত্মসম্মানকে আহত না করে সে বিষয়টি মাথায় রেখে আলোচনা এগুনোর জন্য লেখিকার কাছে বিনীত অনুরোধ।
২। প্রবাসীরা এ দেশের অর্থনীতির অক্সিজেন। একজন প্রবাসী নিজে অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েও তার পরিবারে যে অবদান রেখে চলেন সেটা অনস্বীকার্য। প্রবাসীর অবদানকে মাথায় রেখে প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা যদি তার স্ত্রীকে একটু মমতা দিয়ে আগলে রাখেন, পরিবারে ইসলামচর্চার সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখেন তাহলে এসব অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
৩। শখ করে মানুষ ভ্রমণ করে। কিন্তু শখ করে প্রবাসী হয়না কেউ। অনেক অবস্থাসম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত ঘরের লোককেও প্রবাসী হতে দেখেছি। কপালের লিখন না যায় খন্ডন।
৪। প্রবাসী নন কিন্তু সীমিত আয়ের অনেক চাকরিজীবি আছেন যাদের পক্ষে স্ত্রীকে কাছে রাখার সঙ্গতি নেই। এরা অনেকেই হয়তো মাসশেষে এক/দুই দিন স্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়ে থাকেন। গড়পড়তা তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবনে একজন প্রবাসীর চেয়েও কম স্ত্রীর সান্নিধ্য পান তারা।
৫। একজন প্রবাসী বছর শেষে বা দু/একবছর শেষে ৩০/৪০/৬০ দিনের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন। তখন যতটা স্বাধীনভাবে মুক্তভাবে স্ত্রী/সন্তান/স্বজনদের সান্নিধ্য পেয়ে উপভোগ করেন সেটা যারা আমরা দেশে আছি তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এ ব্যস্ততাময় জীবনে।
শেষ কবে টানা এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছি ভুলেই গিয়েছি।
কেহ আমাকে দরেন-------
আমি পড়ে গেলাম------
হেতে কিতা কয় ------
এটি একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমস্যা!
শ্রমিক ভিসার প্রবাসীরা ইচ্ছে করলেও স্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারেননা, আইনের বাধা!
আবার দেশে এসে সংসার করবেন- সেটা দুঃসাধ্য এজন্য যে, সংসার নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে!
কষ্ট তো উভয়েরই- কিন্তু রুজি-রোজগারের প্রয়োজনে এটা করতে বাধ্য হন!
যদি প্রবাসীদের চাকুরিবিধি ও ছুটির শর্তগুলো উভয় দেশের সরকার সেভাবে নির্ধারণ করতো তবে এ সমস্যার সমাধান সহজ হতো!
ছয়মাসে একমাস বাধ্যতামূলক ছুটি- তাহলে এ সমস্যার সমাধান ৯০% হয়ে যেতো মনে করি!
অসংখ্য সুহৃদ ও আত্মীয়ের সাথে আলাপের বিশ্লেষণ ও আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় "প্রোষিতভর্তৃকা" ও "প্রোষিতপত্নীক" উভয় পক্ষেরই সমস্যা ও কষ্ট তাঁরা সহ্য করে যান নিরুপায় হয়ে, বিকল্প সহজতর উপায় না থাকায়!
সুতরাং এ সমস্যার সমাধান ব্যক্তি বা সামাজিক উদ্যোগে সম্ভব নয়- যতক্ষণ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমঝোতা ও চুক্তিতে এটিকে বিবেচনায় না আনা হয়!
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে! (যদিও তাদের কারো কারো নীতি/আচরণের কারণে ঐ শব্দটা উচ্চারণেও ঘৃণা জাগে আমার)
১) এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যেগ একান্তভাবে কাম্য।
২) পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
৩)এছাড়াও আমার মনে হয় প্রবাসীগণও
যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে পারে।
৪) যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর রেমিটেন্সের একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে তাই উর্ধ্বতন মহলে এই বিষয়কে আমলে নেয়ার জন্য প্রবাসীগণ যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রত্যেক নবজাতক শিশুই জন্মের সময় ফিতরতুল ইসলাম তথা ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। শিশুটির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি তার ব্যক্তি জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি ইসলামাইজড না হয়ে যদি তা'গুতী শক্তির প্রভাবে প্রভাবাহ্নিত হয় তখন সেও ক্রমান্নয়ে তা'গুতী শক্তির পুজারী হয়ে তার প্রতিনিধিত্ব করে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ায়। আবার এদের মধ্যে অনেক প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বও ক্ষেত্র বিশেষে উল্টোরথ যাত্রা করে।
এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- সমাজপতি ও রাজনীতিবিদরা কি হাদিসে উল্লেখিত ফরমূলা অনুযায়ী কি ব্যবস্থা তৈরী করতে পেরেছেন আমাদের জেনারেশন তৈরীর কারখানাগুলোতে? এই কারখানাগুলোর (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থা) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবতই পড়ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ও পারিবারিক ব্যবস্থায়! যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশার সহশিক্ষার বুনিয়াদী অবস্থাতেই পেয়ে যাচ্ছে সেই ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে (এখানে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের বেশীর ভাগই সম্ভবত শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করেছে তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য) সংসার রচনা করছে তখন জীবিকার তাগিদে প্রবাসী হওয়া স্বজনের প্রতি কার অধিকার কতটুকু বা কার উপর কতটুকু হক রয়েছে তা বুঝার সেই পরিবেশ কতটুকু বিকাশ ঘটাতে পেরেছিল? একটি যর্থাথ কার্যকর ব্যবস্থার নিশ্চিত করা কি সমাজপ্রতি ও রাজনীতিবিদদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? এতো গেলো শিক্ষার ব্যবস্থার কুফলের কথা।
এখন আসি অন্যন্যা প্রসংঙ্গ-
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৩ বছর পার হতে চললো। এই দেশটা কি স্বাধীনতা অর্জন করেছে শুধূ উন্নত জাতি তথা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে শ্রমিক প্রেরণ করে তথা উন্নত জাতির গোলাম ও দাসী তৈরীর একটি বিশাল কারখানা বানানোর জন্য? আজ বলা হয় আমাদের দেশের ষোল কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত রয়েছে। এসব হাতকে কেন আমরা অন্যের গোলামীর পেছনের নিয়োজিত রেখে প্রবাস জীবন বেচে নেবো? এই বত্রিশ কোটি হাতগুলোর উপযুক্ত ইউটিলাইজ করার ব্যবস্থা করতে না পারার পেছনে কাদের ভূমিকা সব চেয়ে বেশী? হতভাগা প্রবাসীরা? নাকি আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক তথাকথিত সমাজপ্রতি ও রাজনীতিবিদরা? অথচ রাজনৈতিক ও নীতির্নিধারক নামের এসব টাউট-টন্নীগুলোই আবার নির্ধারণ করে দেয় আমাদের দেশের শ্রমিকের ঘামঝড়া শ্রমের বিনিময়মূল্য সমুদ্রের লবনাক্ত পানির চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে! আমাদের প্রবাসীরা পানির মূল্য শ্রম বিক্রি করে দেশের রেমিটেন্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন ঠিকই কিন্তু তাদেরকে দেশের সামাজিক ও পারিবারিক ট্রানজেকশনে ন্যুনতম সুযোগ সুবিধাটুকু নিশ্চিত করতে ব্যর্থ এসব নীতিনির্ধারকরা। প্রবাসীদের এই মিস-ট্রানজেকশনের কারণে সৃষ্ট হয় কারো ক্ষেত্রে পারিবারিক অশান্তি আবার কারো ক্ষেত্রে সামাজিক বিশৃঙ্খল অবস্থা! এর কি কি প্রবাসীরাই দায়ী? নাকি সমাজপতি ও নীতির্নিধারকরা?
আসলে আমি চেয়েছিলাম এই প্রসংঙ্গে আরো কিছু লিখতে। কিন্তু আমার মন্তব্যটি বেশী লম্বা হয়ে যাচ্ছে বিধায় আর বাড়ানো উচিত মনে করছি না। পাঠকদের আবার ধর্য্যচুতির ব্যাপারও আছে। হয়তো পরে কোন সময় আমার নিজের ব্লগ পাতায় এ বিষয়ে কিছু লিখার চেষ্টা করবো।
১) এসব সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি অথবা এগুলো ধারাবাহিক কোন সমস্যাও নয়।
২) নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা বা খামখেয়ালীপনা।
৩) জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে জাতি উন্নত জাতিতে রুপান্তরিত হবেনা।
৪)আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে আমাদের শ্রমমূল্য আরও বাড়াতে হবে।
৫) ইসলামী শরীয়া ভিত্তিক অর্থনীতি চালু করতে হবে।
দ্বিতীয় অংশে পেলাম-
১) আমাদের এই শ্রমশক্তিকে আমরাই ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারি।
২) যদি তারা দেশে থেকেই কর্মসংস্থান করতে পারেন। তবে তাদের পরিবারগুলোর এই ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব।
৩) নীতিনির্ধারকগণ সঠিক নীতি গ্রহণ করলে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
আপনি আপনার মন্তব্য দু'টি নিয়ে একটি চমৎকার পোস্ট দিয়ে ফেলেন। কেউ কেউ আমাকে ভুল বুঝতে শুরু করেছে। আমিই হয়ত বোঝাতে পারিনি। ধন্যবাদ।
১. দিনবদলের উদ্দেশ্যে যারা প্রবাস করবে তারা যেন বিয়ের আগেই প্রবাস জীবনের ইতি ঘটাতে পারে সেই টার্গেট নিয়েই উপার্জন ও তহবিল করতে হবে।
২. সদ্য বিয়ে করার ২/৩ বছরের মধ্যে আর্থিক যত অসচ্ছলতাই থাকুক প্রবাসী হওয়া যাবে না।
৩. সদ্য বিয়ের পর নিত্যান্তই প্রবাসী হতে বাধ্য হলে স্ত্রীকে তার বাবা-মায়ের কাছে রেখে যেতে হবে।
৪. স্ত্রীকে নিজের কাছে নিয়ে রাখা যায় এমন ব্যবস্থ্যা থাকলে অবশ্যই স্ত্রীকে নিজের সাথে নিয়ে প্রবাস করতে হবে। (কষ্ট: সৌদিতে ফ্যামিলি ভিসা বন্ধ)
৫. স্ত্রীকে দেশে রেখে প্রবাসী হলে ৬ মাস কিংবা ১ বছর পর বাধ্যতামূলক ছুটিতে আসতে হবে।
৬. যতদিনই প্রবাস জীবন হোক না কেন প্রতিদিনই দীর্ঘসময় ধরে স্ত্রীর সাথে কথোপকথন করতে হবে।তার সুবিধা-অসুবিধা মনযোগ দিয়ে শুনতে ও তা পূরনে সচেষ্ট হতে হবে।
৭. যতদ্রুত সম্ভ্যব প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে নিজের যৌবন বয়সটা স্ত্রীকে নিয়ে কাটাতে হবে।
(পরে আরো কোন পয়েন্ট মাথায় আসলে যোগ করে দিব)
১) আপনার এই পয়েন্টটা এক অর্থে ইতিবাচক। তবে এ ক্ষেত্রে ছেলেদের বিয়ের বয়স বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৩০ এর উপরে চলে যাবে।
২) সম্পূ্র্ণ একমত।
৩)এটা ছেলের পরিবার মানবেনা বলেই জানি। তবে বউটি যে পিত্রালয়ে থেকেও কোন অনৈতিক সম্পর্কে জড়াবেনা তার গ্যারান্টি কি?
৪) একমত।
৫) একমত।
৬) একমত । সাথে পরিবারের অন্যদের কথাও গুরুত্ব সহকারে শুনতে হবে।
৭) জোরালোভাবে একমত।
=> ১৬ কোটি লোকের ৩২ কোটি হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করতে বরাবরই ব্যার্থ আমাদের সরকারগুলো তাই অতিরিক্ত শ্রমের হাত বিদেশে রপ্তানি করে দিয়েছে সবসময়।
=> সীমাহীন দূর্নীতি আর লোটপাটের নীচে চাপা পরে গেছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি তাই প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে।
=> পুথিগত শিক্ষায় শিক্ষিতের হার বাড়লে বাস্তব শ্রমের হাত বেড়েছে কদাচিৎ তাই প্রবাসই হচ্ছে শেষ লক্ষ্যবস্তু।
=> শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য চাকরী ভাবতে গিয়ে স্বনির্ভর কোন পেশা নিতে অনিহাই আমাদের প্রবাসী হতে উৎসাহ যোগাচ্ছে
আপনি প্রথম পোস্ট এবং এই পোস্টের এ পর্যন্ত যতগুলো মন্তব্যের জবাব আমি দিয়েছি তা পড়ুন। এবং তারপর আমি কি প্রবাস জীবনের বিরোধী কি না তা বলুন.... প্লীজ। ধন্যবাদ
একমত
১) এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যেগ একান্তভাবে কাম্য।
২) মানবাধিকার/ সামাজিক সংগঠনগুলো সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
৩)এছাড়াও আমার মনে হয় প্রবাসীগণও যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে পারে।
৪) যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর রেমিটেন্সের একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে তাই উর্ধ্বতন মহলে এই বিষয়কে আমলে নেয়ার জন্য প্রবাসীগণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
৫) সামাজিক কোন সংগঠন যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তবে প্রবাসীরা স্ব-উদ্যেগে এরকম সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। তারপর সেই সংঠনের মাধ্যমে তাদের দাবী-দাওয়া সংশ্লিষ্ট মহলে পেশ করতে পারে।
৬) যদি এ ধরণের সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা যায় তবে এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পরিবারগুলোকে এই সংগঠনগুলো নিয়মিত ফলোআপ করতে পারে।
বিনা দোষে শাস্তি পেল মেয়েটি । সচেতন মুলক পোষ্টের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ।
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের
আমাদের দেশে কর্ম সংস্থানের অভাবে মানুষ বাধ্য হয়ে বিদেশ যায় ।সেখানে তারা যেমন কষ্ট করে তেমনি আপনজনদের বিরহে তাদের বুকের হাহাকার কেউ দেখার নেই ।
জীবনের জন্য টাকার প্রয়োজন আছে ।টাকা না থাকলে নাকি ভালবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় ।
আর প্রবাসীদের সব বউরাই খারাপ তা কিন্ত নয় ।এমন অনেক বউ আছে স্বামী পাশে থাকার পরোও পরকিয়া করে ।
ধন্যবাদ আপু ।
যেসব প্রবাসী নানাবিধ অপারগতার কারণে দেশে স্ত্রী রেখে দীর্ঘ প্রবাস জীবন যাপনে বাধ্য হন তাদের প্রতি সহানুভূতির সাথে আমার পরামর্শ থাকে- কিছু ন্যুনতম পুঁজি জোগাড় করে দেশে গিয়ে অন্তত একটা সিএনজি ক্রয় করে তা চালিয়ে হলেও স্ত্রী সন্তানদের কাছে থাকার চেষ্টা করুন।
যারা স্ত্রীকে সাথে রাখার সমর্থ থাকা সত্বেও টাকা বাঁচিয়ে বাড়ী-গাড়ী আর দামী প্লট কেনার নেশায় মত্ত হয়ে প্রবাস নামের ঢং করেন তারাই বড় অপরাধী।
আবার অনেক তথাকথিত মাতা-পিতা ভক্ত পুরুষ আছে যারা মা-বাবার সেবার জন্য(!)সামর্থ থাকা সত্বেও নিজের সাথে প্রবাসে স্ত্রীকে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিবাহিত জীবনে সুখ-শান্তি এবং স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকতে পারার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করে সে আলোকে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন। ধন্যবাদ।
২) মানবাধিকার/ সামাজিক সংগঠনগুলো সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
৩)এছাড়াও আমার মনে হয় প্রবাসীগণও যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে পারে।
৪) যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর রেমিটেন্সের একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে তাই উর্ধ্বতন মহলে এই বিষয়কে আমলে নেয়ার জন্য প্রবাসীগণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে।
৫) সামাজিক কোন সংগঠন যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে না আসে তবে প্রবাসীরা স্ব-উদ্যেগে এরকম সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। তারপর সেই সংঠনের মাধ্যমে তাদের দাবী-দাওয়া সংশ্লিষ্ট মহলে পেশ করতে পারে।
৬) যদি এ ধরণের সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা যায় তবে এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পরিবারগুলোকে এই সংগঠনগুলো নিয়মিত ফলোআপ করতে পারে।
তবে বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর এই সমস্যা গুলো দুর করার জন্য আর একটি বড় স্টেপ হচ্ছে "সকল ভারতীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধ করা"
আপনাকে ধন্যযুক্ত আপাজি।
ধন্যযুক্ত হলোনা
৬ নং ঘটনার জন্য স্ত্রীটিকে দোষ দিতে মন চাইছেনা, মানুষ মানবিক দুর্বলতার উর্ধ্বে নয়, মানুষের টাকা ছাড়াও আরো অনেক কিছু প্রয়োজন হয়, এই প্রয়োজনগুলোর দিকে যে স্বামী খেয়াল করেন না তার জন্য শুধু আল্লাহর ভয়ে কতদিন পথ চেয়ে থাকা যায়? শয়তান তো বসেই থাকে এসব সুযোগের জন্য!
বিষয়গুলোর মানবিক সমাধান প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন।
৬ নং ঘটনাটা আমাদের সমাজে এখন প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে যতটুকু সম্ভব সবাই চুপ করে থাকে।
আমি কিছু ঘটনা জানি তাদের এই অপরাধের পরও স্বামী এবং পরিবারের অন্যরা ক্ষমা করে দিয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন