মুত্তাফাকুন আলাইহি-২৬
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:১৭:২৮ দুপুর
জুলুম করা হারাম এবং জুলুম প্রতিরোধ করার নির্দেশ-১
৮৭) হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদা আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে পরস্পরে কথাবার্তা বলছিলাম। তখন রাসূলে আকরাম ﷺ আমাদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন। তখনও বিদায় হজ্জ কি এবং বিদায় হজ্জ কাকে বলে? এ বিষয়ে আমাদের ধারণা ছিল না। এ অবস্থায় রাসূলে আকরামﷺ আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর মসীহে দাজ্জাল সম্পর্কে খোলামেলা কথাবার্তা বললেন।
তিনি বললেন,’ আল্লাহ এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি স্বীয় উম্মতকে দাজ্জালের ভয় দেখাননি। নূহ আলাইহিস সালাম এবং তাঁর পরবর্তী নবীগণ স্ব স্ব উম্মতকে দজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন এবং এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে দজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবেই। এ বিষয়টা তোমাদের কাছে মোটেই গোপন থাকবে না। এটাও তোমাদের অজানা নয় যে তোমাদের প্রভু একচোখ বিশিষ্ট বা অন্ধ নন। তোমরা এটা জেনে রাখো যে দজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে এবং তা বড় আঙ্গুরের মতো ফোলা হবে। কাজেই তোমরা সাবধান হও। তোমাদের পরস্পরের জীবন (রক্ত ) ও ধন-মাল পরস্পরের জন্যে হারাম ও সম্মানিত। যেমন তোমাদের এদিনটি সম্মানিত এবং তোমাদের এমাসটি সম্মানিত। সাবধান থেকো। আমি কি আল্লাহর বিধান তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি?’
উপস্থিত সবাই বললেন,’ হ্যাঁ (আপনি পৌঁছে দিয়েছেন)।’
এরপর তিনি তিনবার বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো।’
তিনি আবার বললেন, ‘ধ্বংস হোক অথবা আফসোস হোক, খুব মনযোগ দিয়ে শোন! আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা পরস্পর রক্তপাত করে আবার কুফরীতে ফিরে যেও না।’
৮৮) হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলেন,’ যে ব্যক্তি এক বিঘৎ পরিমাণ জমিতে জুলুম করল অর্থ্যাৎ জোরপূর্বক দখল করল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গলায় সাত তবক জমিন লটকিয়ে দেবেন।
৮৯) হযরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর রেহাই দেন না।’
এরপর বিশ্বনবী ﷺএই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘আর তোমার প্রভু যখন কোন জালিম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এ রকমই কঠিন হয়ে থাকে। তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন ও নির্মম।’ (সূরা হূদঃ ১০২)
(বুখারী ও মুসলিম)
.
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে-২০৫, ২০৬ ও ২০৭]
মুত্তাফাকুন আলাইহি-২৫
বিষয়: বিবিধ
১৪৯১ বার পঠিত, ৫৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
'যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়।'
[ আন্ নিসা; আয়াত নং- ৩০]
“যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।”
[আল বুরূজ; আয়াত নং-১০]
'এভাবে যারা কুফরী ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে এবং জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনো মাফ করবেন না'
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১৬৮ ]
'তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।'
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১১০]
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলেন,'তোমরা জুলুম করা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকারময় ধোঁয়ায় পরিণত হবে। (তোমরা) কার্পণ্যের কলুষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা, কার্পণ্যই তোমাদের পূর্বেকার অনেক জনগোষ্টীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কার্পণ্য তাদেরকে রক্তপাত ও মারপিট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি যুগিয়েছে।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন; 'একদা রাসূলে আকরাম ﷺ জিজ্ঞেস করলেন,' তোমরা কি জানো কোন্ ব্যক্তি দরিদ্র-নিঃস্ব?'
সাহাবীগণ বললেন,' আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র যার কোন ধন-মাল নেই।'
তিনি বললেন,' আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচাইতে দরিদ্র হবে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু দেখা যাবে যে সে কাউকে গালমন্দ করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মারধোর করেছে অর্থ্যাৎ এসব অপরাধ ও সে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। এদেরকে তার সৎকাজগুলি দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ করার পর্বেই যদি তার সৎকাজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। এরপর তাকে দোযখে ছুঁড়ে মারা হবে।'
(মুসলিম)
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন,'মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে।
(বুখারী)
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন,'মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে।
(বুখারী)
হযরত আদী ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম ﷺ কে বলতে শুনেছি, 'আমরা তোমাদের কাউকে কোন সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। এরপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তারচেয়ে বেশি কিছু যদি আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারীরূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে।'
আনসার গোত্রের জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,' হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন।'
বর্ণনাকারী বলেন,' আমি যেন এ দৃশ্যটা এখনও দেখতে পাচ্ছি।'
তিনি বললেন,' তোমার হি হয়েছে?'
সে বললো, 'আমি আপনাকে এভাবে এভাবে বলতে শুনেছি।'
তিনি বললেন,' আমি এখনও তাই বলবো। আমরা তোমাদের কাউকে কোন পদে নিয়োগ করলে সে কম-বেশি সবকিছু নিয়ে আসবে। তার থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা-ই সে নেবে আর যা থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা থেকে বিরত থাকবে।'
(মুসলিম)
'যে ব্যক্তি জুলুম ও অন্যায় বাড়াবাড়ি করে এমনটি করবে তাকে আমি অবশ্যি আগুনে নিক্ষেপ করবো। আর আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন কাজ নয়।'
[ আন্ নিসা; আয়াত নং- ৩০]
’
“যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।”
[আল বুরূজ; আয়াত নং-১০]
'এভাবে যারা কুফরী ও বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে এবং জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাদেরকে কখনো মাফ করবেন না'
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১৬৮ ]
'তবে যে ব্যক্তি জুলুম করার পর তাওবা করবে এবং নিজের সংশোধন করে নেবে, আল্লাহর অনুগ্রহের দৃষ্টি আবার তার দিকে ফিরে আসবে।আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।'
[ আল মা-য়েদাহ; আয়াত নং- ৩৯]
“যদি কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করে বসে অথবা নিজের ওপর জুলুম করে এবং এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও পরম দয়ালু হিসেবেই পাবে।”
[আন্ নিসা; আয়াত নং- ১১০]
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলেন,'তোমরা জুলুম করা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকারময় ধোঁয়ায় পরিণত হবে। (তোমরা) কার্পণ্যের কলুষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা, কার্পণ্যই তোমাদের পূর্বেকার অনেক জনগোষ্টীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কার্পণ্য তাদেরকে রক্তপাত ও মারপিট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি যুগিয়েছে।
(মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন; 'একদা রাসূলে আকরাম ﷺ জিজ্ঞেস করলেন,' তোমরা কি জানো কোন্ ব্যক্তি দরিদ্র-নিঃস্ব?'
সাহাবীগণ বললেন,' আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র যার কোন ধন-মাল নেই।'
তিনি বললেন,' আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচাইতে দরিদ্র হবে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু দেখা যাবে যে সে কাউকে গালমন্দ করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মারধোর করেছে অর্থ্যাৎ এসব অপরাধ ও সে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। এদেরকে তার সৎকাজগুলি দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ করার পর্বেই যদি তার সৎকাজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। এরপর তাকে দোযখে ছুঁড়ে মারা হবে।'
(মুসলিম)
হযরত ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন,'মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে।
(বুখারী)
হযরত আদী ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম ﷺ কে বলতে শুনেছি, 'আমরা তোমাদের কাউকে কোন সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। এরপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তারচেয়ে বেশি কিছু যদি আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারীরূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে।'
আনসার গোত্রের জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,' হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন।'
বর্ণনাকারী বলেন,' আমি যেন এ দৃশ্যটা এখনও দেখতে পাচ্ছি।'
তিনি বললেন,' তোমার হি হয়েছে?'
সে বললো, 'আমি আপনাকে এভাবে এভাবে বলতে শুনেছি।'
তিনি বললেন,' আমি এখনও তাই বলবো। আমরা তোমাদের কাউকে কোন পদে নিয়োগ করলে সে কম-বেশি সবকিছু নিয়ে আসবে। তার থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা-ই সে নেবে আর যা থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা থেকে বিরত থাকবে।'
(মুসলিম)
মন্তব্য করতে লগইন করুন