একজন ব্যর্থ ঘটক ও বেলতলা
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:২৫:২০ দুপুর
সবাই বিয়ে বিষয়ক চমৎকার লেখা লিখে যাচ্ছেন। কেউ নিজের বিয়ের অভিজ্ঞতা, আবার কেউ সচক্ষে দেখা কোন ঘটনা, আবার কেউ কেউ মিষ্টিমধুর গল্পের মাধ্যমে মনের সুপ্ত বাসনাকে জাগিয়ে তুলছেন, আবার কেউবা কাল্পনিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে পোলাও কোর্মার সুবাসে মন প্রাণ আচ্ছন্ন করছেন .........যে ভাবেই হোকনা কেন আসর বেশ জমে উঠেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই জমজমাট আসরে আমার এই কাহিনীসম্ভার চলবে কিনা তাও বুঝে উঠতে পারছিনা। যা-ই হোক নিজেকে নিজেই অভয়দানের মাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা শুরু করছি......।
ঘটনা-১
নাহার আমার প্রতিবেশী ও বান্ধবী। আমার বিয়ের প্রায় একবছর পর ওর আম্মা একদিন আমাকে বললেন, ‘মা জামাইকে বলবে ভালো কোন পাত্র পেলে নাহারকে বিয়ে দিয়ে দিতে।' আমি যথাস্থানে খবর পৌঁছে দিলাম। কিছুদিন পরে আমার ‘তিনি’ আমাকে একজন সৎপাত্রের সন্ধান দিলেন। যথারীতি বায়োডাটা আদান প্রদান, পাত্র- পাত্রী দর্শন, হাজারটা কথা ও ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদির পর পাত্র নিজেই বিয়েতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেন এবং বিয়েটা হল না। আমার জীবনের প্রথম ঘটকালী এভাবেই ব্যর্থ হয়ে গেল।
এখানে উভয়পক্ষের নেতিবাচক যে দিক আমার কাছে ধরা পড়েছে তা হল পাত্রের অতি নাক উঁচু স্বভাব আর পাত্রীপক্ষের অতি উৎসাহ। প্রথম বার পাত্র-পাত্রীর দেখার ব্যবস্থা আমার বাসাতেই করি। পাত্রসাহেব পাত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই করেন। প্রথমদিনেই সে জানায় পাত্রী তার বেশ পছন্দ হয়েছে। এরপর উভয় পক্ষের মাঝে কথাবার্তা বেশ অনেকটা এগিয়ে যায়। এই পর্যায়ে পাত্র আবারও পাত্রীকে দেখার খায়েশ জানায়। এই বিষয়টা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই দ্বিতীয়বার কন্যা দেখানোর ব্যাপারে আমার নেতিবাচক মনোভাব পাত্রকে জানিয়ে দেই।
আমার ইচ্ছে ছিল যেহেতু পাত্র পাত্রী উভয়ে উভয়কে পছন্দ করেছে, এবার পাত্রের পরিবার পাত্রীর পরিবারের সাথে পরিচিত হোক। এবং পারিবারিক পর্যায়েই কথাবার্তা চলুক। এবং দেখাদেখিও পারিবারিকভাবেই হোক। কিন্তু সে মেয়েকে আবার দেখবেই! এবার সে নিজেই মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং মেয়েকে নিয়ে মেয়ের বড়ভাই বাইরে কোথাও পাত্রের সাথে সাক্ষাৎ করে। ...... এরপর কি হয়েছিলো তা আগেই উল্লেখ করেছি।
ঘটনা-২
আগের ঘটনার কিছুদিন পরের কথা। এবারের পাত্রী আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ভার্সিটিতে যে কয়টা মেয়ের সাথে আমার একেবারে দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে ‘ও’ ছিল অন্যতম। ও এত্ত ভালো ছিল ...... আমি খুব কমই এধরণের মেয়ে দেখেছি। খুব সংসারী টাইপের মেয়ে। ফ্রেন্ড সার্কেলে ওর খেতাব ছিল ‘শরৎচন্দ্রের নায়িকা’ ।
আর পাত্র আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। এই ভাইয়াকে অনেক দিন ধরে চিনি। সত্যিকার অর্থেই একজন ভদ্রলোক। একজন ভালো মানুষের যতগুলি গুণ থাকে তার সবগুলিই উনার মধ্যে ছিল। শিক্ষিত এবং রুচিবান একজন মানুষ। তো এই ভাইয়া বিয়ের জন্য পাত্রীর সন্ধান করছিলেন। আমার মাথায় আবার কি হল……. আমি ঘটকালী শুরু করলাম। মেয়ের ছবি দেখালাম। ছবি দেখেই উনি মেয়ে পছন্দ করলেন। আমার মাধ্যমে বায়োডাটা আদান প্রদান হল।অবশেষে পাত্রপাত্রী দেখার পালা এলো। দেখানো হল.....এবং উভয়ে উভয়কে বেশ পছন্দ করলো। তার কিছুদিন পরে শুধুমাত্র পাত্রের খামখেয়ালীর কারণে বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।
ঘটনা-৩
এবার বেশ কয়েক বছরের বিরতি। এবার আমাদের প্রতিবেশী এক আপার কথা। এই আপার জীবন খুবই কষ্টের। দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। অনেক পুরনো প্রতিবেশীদের সাথে এক ধরণের আত্মীয়তার মত সম্পর্ক গড়ে ওঠে । উনি সেরকমই একজন। আপা নিজে কর্মজীবী। তার জীবন কাহিনী লিখতে গেলে কয়েক পর্ব লেখা লাগবে। তাই ওটা আর লিখলামনা। উনার মেয়ের কথাই বলি। এই আপা প্রায়ই বলতেন ‘তোরা দেখেশুনে আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দে।'
আমাদের পরিচিত একটি ছেলের কথা আপাকে জানালাম। ছেলে লম্বায় বেশ খাটো ছিল এবং দেখতেও আহামরি কিছু না। মেয়েও তাই। তিনি ছেলের এবং নিজ মেয়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অগ্রসর হলেন। আপা নিজে তার এক আত্মীয়কে নিয়ে ছেলের অফিসে গিয়ে ছেলেকে দেখে আসলেন। উনি এবং উনার আত্মীয়ের পাত্র পছন্দ হল। এবার এল পাত্রপাত্রী উভয়কে দেখার পালা। পাত্র মেয়েকে মোটামুটি পছন্দ করলো কিন্তু মেয়ে বেঁকে বসলো। তার পাত্র পছন্দ হয়নি। এটা শোনার পর আমি আর অগ্রসর হতে রাজী হলামনা।
কয়েকদিন দিন পরে মেয়ের মা এবং মামী আমাকে জানালেন মেয়ে এখন রাজী হয়েছে। এবার আমি যেন ছেলের সাথে যোগাযোগ করে কথাবার্তা পাকা করি। এই পর্যায়ে মেয়ে পক্ষের কয়েকজন আত্মীয় গিয়ে ছেলের গ্রামের বাড়ী দেখে এলো। এর কিছুদিন পর ঘরোয়া আয়োজনে আকদ হয়ে গেল। আকদের দিন মেয়েটির কিছু আচরণ আমার কাছে কেমন যেন মনে হল। তখন ওর কয়েকজন আত্মীয়া আমাকে জানালেন মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওর মা ওকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। তারপর আট/নয় মাস পর...... ডিভোর্স। এই কয়মাসে ছেলেটি কয়েকবার তার বউয়ের সাথে দেখা করতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটি ওর সাথে কথাও বলেনি।
এই ঘটনায় আমার যে ভুল হয়েছিলো তা হল আমি মেয়ের কাছে সে বিয়েতে রাজী আছে কি না তা জানতে চাইনি। ওর মা ও আত্মীয়দের সাথেই সবসময় কথা হত। এদের কথাকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আমার উচিৎ ছিল পাত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলে ওর মনোভাব জানা। কারণ ও প্রথমে রাজী ছিলনা। পরে কিভাবে রাজী হল এইটুকু জানতে গেলেও আসল কাহিনী বের হত এবং বিয়ের আগে এটা জানলে আমি কিছুতেই এ বিয়ে হতে দিতাম না।
এই তিনটি ঘটনার সব কথা আমি এই লেখায় আনতে পারিনি। কারণ তাহলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। এই ছয়জনই এখন তাদের আলাদা আলাদা জগতে বেশ সুখে আছে। মহান প্রভুর রহমতের ছায়া তাদের উপর থাকুক- এই প্রার্থনাই করি। আর আমি? বেলতলায় আর যাইনি......... যাওয়ার ইচ্ছেও নেই।
বিষয়: বিবিধ
২৪৭৩ বার পঠিত, ৮৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কবির ভাষা। আপনি প্রফেশনাল ঘটক নয়। তাই আপনার তিনটি কাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনটি বিয়ের পূণ্য পেয়ে গেছেন। তাই আপনার লস হয়নি । দেখবেন একদিন সফল হবেন সেদিন পূর্বের সব ব্যার্থতা ভুলে যাবেন।
যাইহোক ভালো লাগল, অনেক ধন্যবাদ।
আপু স্কাইপে আসবেন সময় করে। ফাটাফাটি একটা আনন্দের সংবাদ আছে।
@হারিকেন কোথায় তুমি??? দেখা দাও...
@হারিকেন, কোথায় তুমি তোমার আকদের প্রগ্রাম চলছে...যোগদান করো।
উপকারীর উপকার স্বীকার না করলে কি হয়
ঘটনা তিনটি কিন্তু তা প্রমান করেনা:
আর বেলতলা?
apnara khento hoile amader ki hobe?
jatir brihottoro sharthe apni abar ai mohot kaje agiye ashben In-Sha-Allah.
আপনি তো বেল তলায় আর যাননি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এ ধরনের বেশ কয়েক বার বেল তলায় যাওয়া হয়েছিল। তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে আমার। কিন্তু বেশ কয়েকজনের জন্য আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বেল তলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও বেলের আঘাত থেকে কিন্তু রক্ষা পাইনি। এখনো পর্যন্ত আমার মাথায় বেলের আঘাতের চিহ্ন আছে।
ওখানে এই ছাতা চলবেনা।
যদিওবা একখান ছাতা পাওয়া গেল তাও সেটা বেলতলার জন্য নয়।
এখন কি হবে?: : :
আর আমিতো মাত্র তিনবার গিয়েছি।
অভয় দিলে নাহয় আর একবার যেতে পারি .....কি যাব?
অনেক ধন্যবাদ আপুজ্বী আপনাকে লেখাটার জন্য।
তোমার হঠাৎ আগমনে ভীষণ খুশী হইলাম
এ তিনটি ঘটনা থেকে আমার শিক্ষা হলো-...'বেলতলা আর নয়'
অনেক দিন পরে আসলেন মনে হয়! কেমন আছেন?
সময় হোক।
নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালো সফল ঘটক মিলিয়ে দেবেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন