বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি-২

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:০০:৩৩ রাত

‘ছোট্টবেলার শত রঙ করা মুখ

সুর তোলে আজও এই মনকে ঘিরে....’

******************************************


আমাদের বাসার সামনে একটি প্রাইমারী স্কুল ছিল। এখনও আছে। তবে ওটা এখন মাধ্যমিক স্কুল হয়েছে। আমার চোখের সামনেই স্কুলটি হয়েছে। সে-ই প্রথমে উপরে টিনের চাল ও চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সেই স্কুলটি চারতলা ভবন। আমি অবশ্য এই স্কুলে পড়িনি। আমার স্কুল বাসা থেকে মোটামুটি দূরত্বে ছিল। আমি তখন বেশ ছোট। সম্ভবত স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগের কথা। পাড়ার বড় ভাইরা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলো। নামটা সম্ভবত 'নবারুণ সংঘ' ছিল। অথবা অন্য কোন নামও হতে পারে। কারণ ঐ সময় আমাদের এলাকায় এইরকম ৩/৪টি সংগঠন ছিল।

কিভাবে যেন একদিন জানলাম স্কুলঘরে প্রতিদিন দুপুরের পর নাটকের রিহার্সাল হয়। এটা শোনার পর আমি দেখতে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম। দুপুরের খাওয়ার পর আম্মাকে বলে বাহিনীর অন্য সদস্যদের সাথে স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হই। গিয়ে দেখি সবাই আমার পরিচিত। তবে যারা অভিনয় করছিলো তারা সবাই ছেলে। আমাদের পাড়ার কোন মেয়েকেই ওখানে দেখলামনা। তখনও ছেলেমেয়ে একসাথে বসে প্রকাশ্যে আড্ডা দেয়ার রেওয়াজ চালু হয়নি। আর নাটক করারতো প্রশ্নই আসেনা। এই নাটকে একটি নারী চরিত্র ছিল। তাকে অন্য কোথাও থেকে আনা হয়েছিলো।

আমাদেরকে বড়ভাইরা বলে দিলেন চুপচাপ থাকতে হবে। কথা বললে রিহার্সাল দেখতে দেওয়া হবেনা। আমরা সবাই চুপকরে একপাশে বসে পড়লাম। শুরু হল তাঁদের অনুশীলন। একজন প্রশিক্ষক ছিল। উনাকে আমি চিনতে পারলামনা। আমি অবাক চোখে উনাদের কাণ্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। সেই ‘প্রশিক্ষক’ একেকজনকে তাদের অংশ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তারা সেই অনুযায়ী একজনের পর একজন সংলাপ বলে চলেছেন। কেউ কেউ ভুল করছে। উনি আবার তা সংশোধন করে দিচ্ছেন। মোটামুটি এই ছিল তাদের রিহার্সাল।

আমি নিয়মিত হাজিরা দেয়া শুরু করলাম। প্রতিদিন একই ডায়ালগ, একই অঙ্গভঙ্গি দেখতে দেখতে আমার প্রায় মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। একজন একটা ডায়ালগ বলার পর পরবর্তী অভিনেতা কি বলবে তা আমি মনে মনে বলতাম। উনি তা বলার পর দেখতাম যে মিলে গেছে। আবার কখনও কেউ সামান্য ভুল করলেই তার উপর ভীষণ রাগ হত! এটা আমি পারি আর এত্ত বড় হয়েও উনি পারলেননা?

একদিন এক ভাই আমাকে বললেন, ‘তোমাকে আমাদের রিহার্সাল দেখতে দিব যদি তুমি আমাদের জন্য বরই নিয়ে আস।‘ আমাদের বাসার সামনের উঠানে একটি বেশ বড় বরই গাছ ছিল। টকমিষ্টি বেশ রসালো বরই। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে আমি দৌড়ে বাসায় গিয়ে আম্মাকে বলি ভাইয়াদের জন্য কিছু বরই দিতে। আম্মা বড় একটা প্যাকেটে করে অনেক গুলি বরই দিয়ে দিলেন। আমি আবার একদৌড়ে ওখানে চলে গেলাম। উনাদের হাতে প্যাকেটটা দিয়ে আমি একপাশে বসে যাই। এরপর আরও কয়েকদিন দিন তাদের জন্য বরই নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষ টিকিট কেটে নাটক দেখে। আর আমি বড়ই দিয়ে রিহার্সাল দেখতাম। এখন ভাবতেই খুব মজা লাগে! আমি এত বোকা ছিলাম!!!

এই নাটক নিয়ে পুরো এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সমানে মাইকিং চলতে থাকে। ‘ভাইসব একটি বিশেষ ঘোষণা; -তারিখে সন্ধ্যা –টার সময় মঞ্চস্থ হবে দম ফাটানো হাসির নাটক ফাঁস আপনারা সপরিবারে আমন্ত্রিত। ভাইসব....ভাইসব........’ ঠিক কতদিন এই নাটকের রিহার্সাল হয়েছিল তা আজ মনে নেই। তবে যেদিন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিলো সেদিনের কিছু কথা আমার মনে আছে। সন্ধ্যার পর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কি কারনে যেন বেশ দেরি করেই শুরু হয়। কিছুক্ষণ দেখার পর আমার বড়ভাই আমাকে বাসায় দিয়ে আসে। তাই সেদিন আর পুরোটা দেখা হয়নি।

কত বিচিত্র মানব জীবন। কতইনা বিচিত্র মানুষের মনের গতিবিধি। যেই নাটকের রিহার্সাল দেখার জন্য আমার দুনিয়া একপাশে আর ঐ স্কুলঘর একপাশে হয়ে গিয়েছিল। সেই নাটকের মঞ্চায়ন যে দেখা হলনা তা নিয়ে মনে কোন আফসোস হলোনা। অথবা হয়তো হয়েছিল তা আজ আর মনে নেই। তবে আমার কাছে যা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় তা হল রিহার্সাল দেখতে দেখতে হয়ত নাটক দেখার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম!!!

বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি-১

বিষয়: বিবিধ

১৮৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File