দাজ্জাল ও ক্বিয়ামাতের নিদর্শনের বর্ণনা -১

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৫৩:৩০ সকাল



হযরত নাওয়াস ইবনে সাময়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ‘দাজ্জাল’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি কখনো বিষয়টি অবজ্ঞার সুরে প্রকাশ করেন আবার কখনো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেন। এমন কি আমাদের ধারণা হল দাজ্জাল খেজুর বাগানের কোন এক স্থানে লুকিয়ে রয়েছে। যখন আমরা তাঁর নিকট হতে ফিরে যাচ্ছিলাম তিনি আমাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝে ফেললেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমাদের কি হয়েছে?'

আমরা বললাম, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আপনি সকাল বেলা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। আপনি তা অবজ্ঞাভরে এবং কখনো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছিলেন। এতে আমাদের ধারণা হয়েছিল, সম্ভবত ঐ সময়ে দাজ্জাল খেজুর বাগানের কোথাও অবস্থান করছে।'

তিনি বলেন, 'তোমাদের ব্যাপারে আমি দাজ্জালের ফিতনার খুব একটা আশঙ্কা করি না। যদি আমার উপস্থিতিতে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে আমি নিজে তোমাদের পক্ষ হতে তার বিপক্ষে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াব। আর যদি আমার অবর্তমানে সে আত্মপ্রকাশ করে তবে প্রত্যেকে নিজেরাই তার বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। মহান আল্লাহ আমার অর্বতমানে তোমাদের রক্ষক। দাজ্জাল ছোট ছোট কোঁকড়ানো কেশবিশিষ্ট যুবক। তার চোখ হবে ফোলা। আমি তাকে আবদুল ওযযা ইবনে কাতান সদৃশ মনে করি। যে ব্যক্তি তার সাক্ষাৎ পাবে সে যেন সূরা কাহাফের প্রাথমিক আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে। দাজ্জাল শাম ও ইরাকের সাথে সংযোগে রক্ষাকারী রাস্তায় আত্মপ্রকাশ করবে। সে তার ডানে ও বায়ে হত্যা, ধ্বংস ও ফিতনা ফ্যাসাদ ছড়াবে। হে আল্লাহ বান্দাগণ! অটল ও স্থির হয়ে থেক।'

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে কত সময় দুনিয়াতে বর্তমান থাকবে?'

তিনি বলেন, 'চল্লিশ দিন। এর একদিন হবে, এক বছরের সমান, একদিন হবে এক মাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট দিনসমূহ তোমাদের এ দিনের কি মতই দীর্ঘ হবে।'

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে সেদিন কি একদিনের সালাতই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে?'

তিনি বললেন, 'না; বরং অনুমান করে সালাতের সময় ঠিক করে নিতে হবে।'

আমরা জিজ্ঞেস করলাম, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! দুনিয়াতে দাজ্জাল কত দ্রুত গতি সম্পন্ন হবে?'

তিনি বলেন, 'বায়ুতাড়িত মেঘের মত দ্রুত গতি সম্পন্ন হবে। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে নিজের দিকে আহবান জানাবে। তারা তার প্রতি ঈমান স্থাপন করবে এবং তার হুকুমের অনুসরণ করবে। সে আকাশকে নির্দেশ দেবে। আকাশ তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে যমীনকে আদেশ দেবে এবং যমীন উদ্ভিদ উৎপাদন করবে। তাদের গৃহপালিত জন্তুরা সন্ধ্যায় ঘরে ফিরবে। এগুলোর কুঁজ সু্উচ্চ, দুধের বাঁটগুলো লম্বা এবং স্ফীত হবে। এরপর সে আর এক সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করবে এবং তাদরকে নিজের দিকে আহ্বান জানাবে। তারা তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের কাছ হতে চলে যাবে। তারা অতি দ্রুত অজন্মা ও দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হবে। তাদের হাতে ধন-সম্পদ কিছুই অবিশষ্ট থাকবে না। দাজ্জাল এ বিধ্বস্ত অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলবে, তোমার গচ্ছিত সম্পদরাজি বের করে দাও। সাথে সাথে সে অঞ্চলের ধন- সম্পদ মধু মক্ষিকার মতো তার অনুসরণ করবে।

এরপর সে পূর্ণ বয়স্কা এক যুবককে আহ্বান জানাবে। (কিন্তু সে তাকে অস্বীকার করবে।) দাজ্জাল তাকে তরবারী দিয়ে দু’টুকরা করে ফেলবে। এরপর টুকরা দু’টিকে আলাদাভাবে একটি তীরের পাল্লা পরিমাণ দূরত্বে থাকবে। এরপর সে ডাকবে এবং টুকরো দু’টি চলে আসবে। তার চেহারা তখন প্রফুল্ল ও হাস্যময় হবে। ইত্যবসরে আল্লাহ তায়ালা মাসীহ ইবনে মরিয়াম আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করলেন। তিনি দামেস্কের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের উপরে হালকা জাফরানী (হলুদ) রং এর কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতারা কাঁধে ভর দিয়ে নেমে আসবেন। যখন তিনি মাথা অবনত করবেন তখন মনে হবে যেন তার মাথায় মুক্তার মত পানির বিন্দু টপকাচ্ছে। যখন তিনি মাথা উঠাবেন তখনো তাঁর মাথা হতে মতির দানার মতো ঝরছে বলে মনে হবে। যে কাফেরের গায়ে তাঁর নিঃশ্বাস লাগবে তার বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। (সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে) ।

তাঁর দৃষ্টি যতদূরে যাবে তাঁর নিঃশ্বাসও ততদূর পৌঁছবে। তিনি দাজ্জালকে পিছু ধাওয়া করবেন এবং লুদ নামক স্থানে তাকে হত্যা করবেন। এরপর ঈসা আলাইহিস সালাম ঐসব ব্যক্তিদের কাছে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ দাজ্জালের ফিতনা হতে নিরাপদে রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারা হতে মলিনতা দূর করে দেবেন এবং বেহেশতে তাদের যে মর্যাদা হবে তা বর্ণনা করবেন। ইত্যবসরে মহান আল্লাহ হযরত ইসা আলাইহিস সালাম এর কাছে এ মর্মে হুকুম করবেন, আমি এমন একদল বান্দাকে পাঠিয়েছি যাদের বিপক্ষে অস্ত্রধারণ করার শক্তি কারো হবে না। তুমি আমার এসব বান্দাকে নিয়ে তূর পাহাড়ে চলে যাও। এরপর মহান আল্লাহ ইয়াজুজ মাজূজের সম্প্রদায়কে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি হতে দ্রুত বেগে বেরিয়ে আসবেন। তাদের অগ্রবর্তী দলসমূহ তাবারিয়া হ্রদের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা এ হ্রদের সব পানি পান করে ফেলবে। তাদের পরবর্তী দলও এ অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করবে। তারা বলবে এখানে কোন এক সময়ে পনি ছিল।

আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এমন সময় তাদের কাছে গরুর একটি মাথা এত মূল্যবান মনে হবে যেমন বর্তমানে তোমরা একশ’ দীনারকে মূল্যবান মনে কর। তখন আল্লাহর নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ফরিয়াদ করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের (ইয়াজুজ-মাজুজ) প্রত্যেকের ঘাড়ে এক ধরনের কীট সৃষ্টি করে দেবেন। ফলে তারা সবাই এক সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এরপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় থেকে জনপদে নেমে আসবেন। কিন্তু তাঁরা পৃথিবীতে এক ইঞ্চি জায়গাও ইয়াজুজ মাজূজের লাশ ও এর দুর্গন্ধ ব্যতীত ফাকা পাবেন না।

এরপর আল্লাহর নবী ইযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাহাবা আল্লাহর কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তায়ালা বুখতী উটের কুজ সদৃশ পাখি প্রেরণ করবেন। এসব পাখি লাশসমূহকে উঠিয়ে আল্লাহ যেখানে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেবেন সেখানে ফেলে দেবে। এরপর মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ এমন বৃষ্টি প্রেরণ করবেন যা প্রতিটি স্থান, তা মৃত্তিকাই হোক অথবা বালি ধুয়ে আয়নায় মত পরিস্কার করে দেবেন। এরপর ভূমিকে বলা হবে, তোমরা ফল উৎপাদন কর এবং কল্যাণ ফিরিয়ে নাও (এত বরকত, কল্যাণ ও প্রাচুর্য দেখা দিবে) একটি ডালিম খেয়ে পূর্ণ একটি দল পরিতৃপ্ত হবে এবং ডালিমের খোসাটি এত বড় হবে যে তার ছায়ার তারা আশ্রয় নিতে পারবে। গবাদি পশুতেও এত প্রাচুর্য দেয়া হবে যে একটি দুধের উটের দুধ হবে একটি বড় দলের জন্য যথেষ্ট। একটি দুধের গাভীর দুধ একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি দুধের বকরী পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। এ সময় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র বায়ু প্রবাহিত করবেন। এ বায়ু তাদের বগলের নিচ পর্যন্ত লাগবে। ফলে সকল মু’মিন ও মুসলমানের রূহ কবজ হয়ে যাবে। শুধু মন্দ ব্যক্তিরাই বেঁচে থাকবে। তারা পশুর মত প্রকাশ্যে সহবাস করবে। তাদের বর্তমানেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে।'

(মুসলিম)

.

.

[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং - ১৮১০]

বিষয়: বিবিধ

৩৪৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File