মুত্তাফাকুন আলাইহি-১১
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৫৭:৪৫ সকাল
তাকওয়া /আল্লাহ ভীতি
*************************
৩৬) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি কে?’
তিনি বললেন, ‘সবার চেয়ে যে বেশি আল্লাহ ভীরূ।’
সাহাবীগণ বললেন, ‘আমরা একথা জিজ্ঞেস করছি না।’
তিনি বললেন, ‘তাহলে আল্লাহর নবী ইউসুফ, যাঁর পিতা আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা আল্লাহর নবী এবং তাঁর পিতা ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ।’
সাহাবীগণ বললেন, ‘আমরা আপনাকে এ বিষয়েও জিজ্ঞেস করছি না’।
তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তাহলে তোমরা আরবের বিভিন্ন গোত্রের কথা জিজ্ঞেস করছো? (জেনে রেখ) জাহেলিয়াতের যুগে যারা ভালো ছিল, তারা ইসলামের যুগেও ভালো, যদি তারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানবান হয়ে থাকে।
[বুখারী ও মুসলিম]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং-৬৯]
.
.
তাওয়াক্কুল/আল্লাহর ওপর ভরসা
*************************************
৩৭) হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, ‘আমার নিকট (স্বপ্নে কিংবা মিরাজে) উম্মতদের অবস্থা তুলে ধরা হলো। আমি একজন নবীকে একটি ক্ষুদ্র দলসহ দেখলাম। আবার কয়েকজন নবীকে দু’একজন লোকসহ দেখলাম। অন্যদিকে একজন নবীকে দেখলাম সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ; অর্থ্যাৎ তাঁর সঙ্গে কেউ নেই।
সহসা আমাকে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী দেখানো হলো। আমি ভাবলাম, এরা আমার উম্মত। কিন্তু আমায় বলা হলো, ‘এরা মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর উম্মত। তবে আপনি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। আমি দেখলাম, সেখানে বিরাট একটি জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে। পুনরায় আমাকে আকাশের অন্য একদিকে তাকাতে বলা হলো। আমি দেখলাম সেখানেও একটি বিরাট জনগোষ্ঠী অপেক্ষা করছে। তারপর আমায় বলা হলো,‘এরা আপনার উম্মত। এদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে ও বিনা শাস্তিতে বেহেশতে যাবে।’
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,’ এরপর রাসূলে আকরামﷺ সেখান থেকে উঠে তাঁর হুজরা শরীফে প্রবেশ করলেন। এ সময় নবী করীমﷺএর শিক্ষা অনুযায়ী যেসব লোক বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে যাবে, সাহাবীগণ তাদের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিলেন। কেউ বললেন, এরা বোধহয় সেইসব লোক যারা রাসূলে আকরামﷺএর সাহচর্য পেয়েছেন। আবার কেউ বললেন, এরা বোধহয় সেই সব ভাগ্যবান লোক, যারা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করেছেন; কেননা তারা আল্লাহর সাথে শরীক করার মতো মহাগুরুতর অপরাধ করেননি। এভাবে সাহাবীগণ নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন।
এমনি সময় রাসূলে আকরাম ﷺ হুজরা থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,’ তোমরা কোন্ বিষয়ে কথাবার্তা বলছো?’
তখন সাহাবীগণ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। এতে রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘এরা হলো সেইসব লোক, যারা নিজেরা তাবিজ-তুমারের কোনো কাজ করে না এবং অন্যের দ্বারাও করায় না। এছাড়া তারা কোন কিছুকে শুভাশুভ লক্ষণ হিসেবেও বিশ্বাস করে না, বরং তারা তাদের একমাত্র প্রভু আল্লাহর ওপরই নির্ভর করে— ভরসা রাখে।’
একথা শুনে উক্কাশা ইবনে মিহসান রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন। ‘আপনি আল্লাহর কাছে একটু দোয়া করুন, যেন তিনি আমায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।’
তিনি বললেন, ‘তুমি তো তাদেরই মধ্যকার একজন।’
এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যাতে আমাকেও তিনি তাদের মধ্যে গণ্য করেন।’
রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন,’এ ব্যাপারে ‘উক্কাশা তোমার আগে বলে এগিয়ে গেছে।’
৩৮) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺবলতেন,’হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য ইসলাম গ্রহণ করছি (অর্থ্যাৎ তোমাতে আত্নসমর্পণ করেছি), তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমারই ওপর নির্ভর করেছি, তোমারই দিকে ধাবমান রয়েছি এবং তোমারই নিকট মীমাংসাপ্রার্থী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার ইয্যতের কাছে আশ্রয় চাই, যাতে তুমি আমায় পথভ্রষ্ট না করে দাও। তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই। তুমি চিরঞ্জীব-মৃত্যুহীন। কিন্তু জিন ও মানুষ সবাই মৃত্যুবরণ করবে।’
হাদীসের মূল শব্দাবলী ইমাম মুসলিমের। ইমাম বুখারী একে সংক্ষেপ করেছেন।
৩৯) হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলে আকরামﷺ এর সাথে নাজদ অঞ্চলের কোন এক স্থানে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। রাসূলে আকরাম ﷺ যখন ফিরে এলেন, তখন তিনিও (অর্থ্যাৎ জাবিরও) তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করলেন। দুপুরে তাঁরা সবাই এমন এক স্থানে এসে উপস্থিত হলেন, যেখানে অনেক কাঁটা ওয়ালা গাছ-গাছালি ছিল।
রাসূলে আকরাম ﷺ সেখানে অবতরণ করলেন এবং অন্যান্য লোকেরা গাছের ছায়ার সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। রাসূলে আকরাম ﷺ একটি বাবলা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং স্বীয় তলোয়ারখানি গাছের ছায়ায় ঝুলিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ রাসূলে আকরাম ﷺ আমাদের ডাকতে লাগলেন।
তখন তাঁর কাছে একজন গ্রাম্য লোককে দেখলাম। তিনি বললেন, ‘এই লোকটি আমার ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ওপর তলোয়ার উঁচু করেছিল। হঠাৎ আমি জেগে উঠে দেখি, তার হাতে নাঙ্গা তলোয়ার।’
সে আমায় তিনবার প্রশ্ন করল, ‘এখন কে তোমায় আমার হাত থেকে বাঁচাবে।?’
আমি তিনবারই বললাম, ‘আল্লাহ’।
রাসূলে আকরাম ﷺ লোকটিকে কোন সাজা দিলেন না; বরং বসে পড়লেন।
৪০) হযরত বারাআ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেন,’ হে অমুক! তুমি যখন নিজের বিছানায় ঘুমাতে যাও, তখন বল্ ‘হে আল্লাহ! আমি আমার সত্তাকে তোমার নিকট সমর্পণ করছি, আমি আমার মুখমণ্ডলকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার তাবৎ বিষয় তোমার নিকট সোপর্দ করেছি এবং আমার পিঠখানা তোমার দিকে ঠেকিয়ে দিয়েছি। আর এসব কিছুই করেছি তোমার শাস্তির ভয়ে এবং পুরস্কারের লোভে। তুমি ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই, তুমি ছাড়া বাঁচারও কোন উপায় নেই। আমি তোমার নাযিলকৃত কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার প্রেরিত নবীর প্রতিও ঈমান এনেছি।’
রাসূলে আকরাম ﷺ বলেন,‘(এ দো’আ পাঠের পর) তুমি যদি ঐ রাতেই ইন্তেকাল কর, তাহলে ইসলামের ওপরই তোমার মৃত্যু ঘটবে আর যদি সকালে বেঁচে থাকো, তাহলে বিপুল কল্যাণ লাভ করবে।’
হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের অপর এক রেওয়ায়েত মতে বারাআ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেন,’ তুমি যখন রাতে ঘুমাতে যাও, তখন নামাযের অযুর মতোই অযু করো, তারপর ডান কাতে শুয়ে এই দো’আটি পড়ো। এ কথা বলে তিনি উপরোক্ত দো’আটি পড়েন।
অতঃপর তিনি বলেন, ‘এই দোয়াটি একেবারে শেষ দিকে পড়বে।’
৪১) হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম ﷺ এর সাথে সওর পর্বত গুহায় থাকাকালে মুশরিকদের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। ওরা তখন আমাদের মাথার ওপরের দিকে ছিল। (এটা হিজরতে সময়কার ঘটনা) আমি তখন বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এখন যদি ওদের কেউ ওদের পায়ের নীচ দিকে তাকায়, তবে তো আমাদের দেখে ফেলবে!’
রাসূলে আকরাম ﷺ বলেন,‘হে আবু বকর! এমন দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যাদের সঙ্গী তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লাহ?’
[ বুখারী ও মুসলিম ]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে-৭৪, ৭৫, ৭৮, ৮০ ও ৮১ ।]
.
মুত্তাফাকুন আলাইহি-১০
বিষয়: বিবিধ
২০৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন