মুত্তাফাকুন আলাইহি-১০
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ১২:০৪:০১ দুপুর
মুরাকাবা/আত্মসমালোচনা/আত্মপর্যবেক্ষণ
**********************************************
৩৪) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা (বান্দার ব্যাপারে) আত্নসম্মান বোধ করেন। তাই মানুষের জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ (হারাম) করেছেন, সে যখন তাতে লিপ্ত হয়, তখনই আল্লাহর আত্নসম্মান বোধ অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠে।
৩৫) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলে আকরাম ﷺ কে বলতে শুনেছেন, “বনী ইসরাইলের মধ্যে তিনটি লোক ছিল। একজন কুষ্ঠ রোগী, দ্বিতীয় জন টেকো এবং তৃতীয় জন অন্ধ। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা করলেন এবং এ লক্ষ্যে একজন ফেরেশতাকে তাদের কাছে পাঠালেন। তিনি কুষ্ঠ রোগীটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার সবচেয় প্রিয় জিনিস কোনটি?’
সে বলল, ‘সুন্দর রঙ, সুন্দর ত্বক এবং সেই রোগ থেকে মুক্তি, যার দরুণ লোকেরা আমায় ঘৃণা করে।’
ফেরেশতা তার শরীরটা মুছে দিলেন। এতে তার রোগটা সেরে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দান করা হলো। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন্ সম্পদ তোমার কাছে সবচাইতে প্রিয়?’
সে বলল, ‘উট কিংবা গরু।’ (এটা বর্ণনাকারী সন্দেহ)।
তখন লোকটিকে দশ মাসের গর্ভবতী একটি উট দেয়া হলো। ফেরেশতা বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দিন।’
এরপর তিনি টেকো লোকটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার সবচেয় প্রিয় জিনিস কোনটি?’
সে বলল, ‘সুন্দর চুল এবং এই টাক থেকে মুক্তি, যার দরুণ লোকেরা আমায় ঘৃণা করে।’
ফেরেশতা তার মাথাটা মুছে দিলেন। এতে তার টাক সেরে গেল এবং তার মাথায় সুন্দর চুল গজালো। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন্ সম্পদ তোমার কাছে অধিকতর প্রিয়?’
সে বলল, ‘উট কিংবা গরু।’(এটা বর্ণনাকারী সন্দেহ)।
তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দান করুন।’
এরপর তিনি অন্ধ লোকটির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?’
সে বলল, ‘আমার চোখ। আল্লাহ আমার চোখ ফিরিয়ে দিন, যাতে আমি মানুষকে দেখতে পারি।’
ফেরেশতা তার চোখ স্পর্শ করলেন। এতে তার অন্ধত্ব ঘুচে গেল, আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন্ সম্পদ তোমার কাছে অধিকতর প্রিয়?’
লোকটি বলল, ‘ছাগল’।
তখন তাকে এমন একটি ছাগী দেওয়া হলো, যা বেশি বাচ্চা দান করে। এরপর উট, গাভী ও ছাগলের বাচ্চা জন্মালো। এতে উট দ্বারা একটি মাঠ, গরু দ্বারা আরেকটি মাঠ এবং ছাগল দ্বারা অন্য একটি মাঠ একেবারে পূর্ণ হয়ে গেল।
এরপর তিনি কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে তার প্রথম আকৃতি ধারণ করে বললেন,
‘দেখ, আমি একজন মিসকিন। সফরে আমার সবকিছু ফুরিয়ে গিয়েছে। এখন আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারি। যে আল্লাহ তোমায় সুন্দর রং এবং সুন্দর ত্বক ও প্রচুর ধন-মাল দিয়েছে তার নামে আমি তোমার কাছে একটা উট সাহায্য চাইছি, যাতে করে আমি গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারি।’
সে বলল, ‘(আমার ওপর তো) অনেকের হক রয়েছে’।
তিনি বললেন, ‘আমি সম্ভবত তোমাকে চিনি। তুমি না কুষ্ঠ রোগী ছিলে? তোমাকে না লোকেরা ঘৃনা করত? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? এখন আল্লাহ তোমায় সম্পদ দিয়েছেন।’
সে বলল, ‘আমি তো এ সম্পদ পূর্বপুরুষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’
তিনি বললেন,’ তুমি যদি মিথ্যাচারী হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহ যেন তোমায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেন।’
এরপর তিনি টেকো লোকটির কাছে এসে তার পূর্বের আকৃতি ধারণ করে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন, যা প্রথম লোকটিকে বলেছিলেন। টেকো লোকটিও সেই উত্তরই দিল, যা পূর্বোক্ত লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন, ‘তুমি যদি মিথ্যাচারী হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহ যেন তোমায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন।’
এরপর তিনি অন্ধ লোকটির কাছে তার পূর্বের আকৃতি ধারণ করে এসে বললেন, ‘আমি একজন নিঃস্ব (মিসকিন) ও পথিক। আমার সবকিছু সফরে ফুরিয়ে গেছে। এখন গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্য আমার আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। তাই সে আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল সাহায্য চাইছি, যিনি তোমার চোখকে নিরাময় করে দিয়েছেন।’
লোকটি বলল, ‘আমি বাস্তবিকই অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ দিয়েছেন; সুতরাং তুমি তোমার ইচ্ছামতো মাল নিয়ে যাও এবং যা ইচ্ছা রেখে যাও। আল্লাহর কসম! আজ তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে যা কিছু নেবে, তাতে আমি কোন বাধা দেব না।’
ফেরেশতা বললেন, ‘তোমার মাল তোমার কাছেই থাকুক। তোমাদের শুধু পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার অন্য দু’জন সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন।’
[বুখারী ও মুসলিম]
.
.
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং- ৬৪ ও ৬৫ ]
.
.
মুত্তাফাকুন আলাইহি-৯
বিষয়: বিবিধ
৩২০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন