মুত্তাফাকুন আলাইহি-৯
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৫ আগস্ট, ২০১৩, ০২:৩৫:৩৭ দুপুর
সততা/সত্যনিষ্ঠা
.
৩০) হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে আকরাম ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, সততা পুণ্য ও কল্যাণের পথ দেখায়। আর পুণ্য ও কল্যাণ (মানুষকে) জান্নাতের দিকে চালিত করে। মানুষ সত্যের অনুসরণ করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট সিদ্দিক (পরম সত্যবাদী) নামে পরিচিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা অশ্লীলতার দিকে চালিত করে আর অশ্লীলতা মানুষকে জাহান্নামের (আগুনের) দিকে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যার অনুশীলন করতে করতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট চরম মিথ্যাবাদী নামে পরিচিত হয়।
৩১) আবু সুফিয়ান সাখ্র ইবনে হার্ব রাদিয়াল্লাহু আনহু এক দীর্ঘ হাদীসে হিরাকলের কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হিরাকল জিজ্ঞেস করল যে,’রাসূলে আকরাম ﷺ তোমাদের কী কী কাজের আদেশ করেন?’
আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি (রাসূলে আকরাম ﷺ ) বলেন; ‘তোমরা একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করো এবং তার সাথে কোন ব্যাপারে কাউকে শরীক করো না। তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে গেছেন তা পরিহার করো। আর তিনি আমাদেরকে নামায, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আদেশ করেন।
৩২) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, কোন একজন নবী (ইউশা ইবনে নূন) জিহাদ করতে গিয়ে তাঁর জাতিকে বললেন, যে ব্যক্তি অচিরেই বিয়ে করে তার স্ত্রীর সাথে মিলন করতে চায়, যে ব্যক্তি ঘর তৈরি করেছে কিন্তু এখনো ছাদ তৈরি করেনি, এবং যে ব্যক্তি গর্ভবতী ছাগল বা উটনী খরিদ করে তার বাচ্চার জন্য অপেক্ষমান, তারা যেন আমার সাথে জিহাদে গমন না করে।
অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং যে জায়গায় যুদ্ধ করার কথা ছিল, সেখানে আসরের নামাযের কাছাকাছি সময় উপনীত হলেন। তখন তিনি সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ তুমিও আল্লাহর নির্দেশের অধীন আর আমিও তাঁর নির্দেশের অধীন। হে আল্লাহ! তুমি সূর্যকে আটকে রাখো।’
অতঃপর জিহাদে জয়লাভ করা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখা হলো। তিনি গনীমতের মাল একত্র করে রাখলে আগুন সেগুলোকে জ্বালিয়ে ভস্ম করার জন্য এগিয়ে এল; কিন্তু (শেষ পর্যন্ত) আগুন তা জ্বালালো না। তখন তিনি বললেন,’নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কেউ গনীমতের মাল খিয়ানত (আত্নসাৎ) করেছে। অতএব, তোমাদের প্রত্যেক গোত্রের একজনকে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে।’
কিন্তু বাইয়াত করতে গিয়ে এক ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি (লোকটিকে) বললেন,‘তোমাদের মধ্যেই খিয়ানতকারী রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের সব লোককে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে।’
এভাবে বাইয়াত করতে গিয়ে দুই তিন জনের হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, ‘তোমাদের দ্বারাই এ খিয়ানতের কাজটি হয়েছে।’
তারা তখন একটি গরুর মাথার সমান সোনার মাথা নিয়ে এল। তারপর সেটাকে তিনি মালের ভেতর রেখে দিলেন; কিন্তু আগুন এসে তা সবই খেয়ে ফেলল। উল্লেখ্য যে, আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়নি। আল্লাহ আমাদের দুর্বলতার দিক বিবেচনা করে আমাদের জন্য এটা হালাল করে দিয়েছেন।
৩৩) হযরত আবু খালিদ ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরামﷺ বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেনাবেচা বাতিল করে দেয়ার অধিকার রাখে। তারা যদি উভয়ে সত্য পথে থাকে, তাহলে তাদের কেনাবেচা বরকতপূর্ণ হয়। আর যদি তারা মিথ্যা (বা অসাধু) পথে থাকে, তাহলে তা লেনদেনের বরকত নষ্ট করে দেয়।’
[ বুখারী ও মুসলিম ]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ৫৪,৫৬,৫৮ ও ৫৯]
মুত্তাফাকুন আলাইহি-৮
বিষয়: বিবিধ
২২৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন