মুত্তাফাকুন আলাইহি-৮
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৫০:০৪ দুপুর
ধৈর্যশীলতা-৩
২৪) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু তাল্হা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এক পুত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। আবু তালহা বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন। তখন ছেলেটার মৃত্যু ঘটল। আবু তালহা ফিরে এসে ছেলেটার অবস্থা জানতে চাইলেন। ছেলের মা উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আগের চাইতে সে ভাল’
এরপর তিনি আবু তালহাকে রাতের খাবার দিলেন। আবু তালহা খাবার খেলেন। তারপর স্ত্রীর সাথে মিলিত হলেন। মিলন শেষে উম্মে সুলাইম বললেন, ‘ছেলেটাকে দাফন করে দিন।’ (অর্থ্যাৎ সে মৃত্যুবরণ করেছে)।
আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু সকাল বেলা রাসূলে আকরাম ﷺ এর কাছে এসে এ খবর দিলেন। রাসূলে আকরাম ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আজ রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ?’
আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন ‘হ্যাঁ’।
রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘হে আল্লাহ! এদের দু’জনকে তুমি বরকত দান করো।’
এরপর উম্মে সুলাইমের একটি ছেলে জন্মগ্রহণ করল।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু (এ হাদীসের বর্ণনাকারী) বলেন, আবু তালহা এ শিশুটিকে রাসূলে আকরাম ﷺএর কাছে নিয়ে যেতে বলে এবং তার সাথে কিছু খেজুর পাঠিয়ে দিল। রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘তোমাদের সাথে কোনো খাবার জিনিস আছে কি?’
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, কিছু খেজুর আছে।’
রাসূলে আকরামﷺ সে খেজুর মুখে নিয়ে চিবোলেন। তারপর তা নিজের মুখ থেকে বের করে শিশুটির মুখে দিলেন এবং তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ।
২৫) হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি মল্লযুদ্ধে অন্যকে ধরাশায়ী করে, সে শক্তিমান নয়; বরং শক্তিমান হলো সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে সক্ষম।’
২৬) হযরত সুলাইমান ইবনে সুরাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম ﷺ র দরবারে বসা ছিলাম। এ সময় দুই ব্যক্তি পরস্পর বকাঝকা ও গালাগাল করছিল। তার মধ্যে একজনের চেহারা ক্রোধে লাল বর্ণ ধারণ করছিলে এবং তার ঘাড়ের শিরাগুলোও ফুলে উঠেছিল। তখন রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘ আমি এমন একটি কথা জানি, যা বললে তার এই দুরবস্থা দূর হয়ে যাবে। সে যদি ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়ত্বানির রাজীম’ বলে, তবে তার এই ক্রোধের আবেগ চলে যাবে।’
সাহাবীগণ তাঁকে বললেন,’ রাসূলে আকরামﷺ উপরিউক্ত কথাটি (অর্থ্যাৎ আউযুবিল্লাহ) বলে তোমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে বলেছেন।
২৭) হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম ﷺ বলেছেন, ‘ আমার পরে খুব শীঘ্রই কারো উপর কাউকে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং এমন সব কাজ সম্পন্ন হবে, যা তোমাদের পছন্দনীয় হবে না।’
সাহাবীগণ জানতে চাইলেন , ‘হে আল্লাহর রাসূল! এমতাবস্থায় আপনি আমদের কি আদেশ করেন?’
তিনি বললেন, ‘তোমাদের অন্যের ওপর যেসব হক রয়েছে, সেগুলো আদায় করো এবং তোমাদের পাওনা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো।’
২৮) হযরত আবু ইয়াহ্ইয়া উসাইদ ইবনে হুদাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুবর্ণনা করেন, একদা জনৈক আনসারী বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কর্মচারী নিযুক্ত করবেন না, যেমন অমুককে নিয়োগ করেছেন?’
রাসূলে আকরাম ﷺ বললেনঃ ‘তোমরা খুব শীঘ্রই আমার পরে (তোমাদের নিজেদের ওপর) অন্যের গুরুত্ব দেখতে পাবে। তখন আমার সাথে হাওযে কাউসারে সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করবে।’
২৯) হযরত আবু ইবরাহীম আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একদিন রাসূলে আকরামﷺ শত্রুদের সাথে যুদ্ধরত ছিলেন। যুদ্ধের মধ্যেই তিনি সূর্য হেলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমনই অবস্থায় তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে জনমণ্ডলী! তোমরা শত্রুদের সাথে সংঘর্ষের আগ্রহ পোষণ করো না; বরং আল্লাহর কাছে শান্তি চাও। তবে যখন তাদের সাথে সংঘর্ষ লেগেই যাবে, তখন সবর করবে, অর্থ্যাৎ অবিচল ও দৃঢ়চিত্ত থাকবে। জেনে রাখো, জান্নাতের অবস্থান তলোয়ারের ছায়াতলে।’
অতঃপর রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘হে কিতাব অবতরণকারী; মেঘ চালনাকারী ও শত্রু বাহিনীকে পরাজয় দানকারী আল্লাহ! ওদেরকে পরাভুত করো এবং আমাদেরকে ওদের ওপর বিজয় দান করো।’
[ বুখারী ও মুসলিম ]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৫১, ৫২ ও ৫৩ ]
মুত্তাফাকুন আলাইহি-৭
.
.
.
এ বিষয় সংক্রান্ত আরো হাদিস পড়তে চাইলে এখানে দেখুন
বিষয়: বিবিধ
২৪১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন