মুত্তাফাকুন আলাইহি-৭

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ০১ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৩৫:১৯ সকাল

ধৈর্যশীলতা-২

১৮) হযরত ‘আতা ইবনে আবু রাবাহর বর্ণনা, আমাকে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘আমি কি তোমায় একজন বেহেশ্‌তী মহিলা দেখাব না?’

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’

তিনি (ইশারা করে) বললেন, ‘এই কালো মহিলাটি’।

সে রাসূলে আকরাম এর নিকট এসে বলছে, ‘আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়েছি এবং এর ফলে আমার শরীর আবৃত রাখা যাচ্ছে না। অনুগ্রহ পূর্বক আপনি আমার জন্য একটু দু'য়া করুন।’

তিনি বললেন,’তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো; তার ফলে তুমি বেহেশত লাভ করবে। আর যদি চাও তো তোমার নিরাময়ের জন্য আমি দু'য়া করতে পারি।’

সে বলল, ‘ আমি ধৈর্য ধারণ করব। তবে আমার দেহ যাতে অনাবৃত হয়ে না যায়, সেজন্যে আল্লাহর নিকট দু'য়া করুন।’

অতঃপর তিনি তার জন্য দু'য়া করলেন।

১৯) হযরত আবদুল্লাহ বিন্ মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেন রাসূলে আকরাম কে দেখছি। তিনি নবীগনের ভেতর থেকে জনৈক নবীর অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে, তাঁর জাতির লোকেরা তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল আর তিনি স্বীয় মুখমণ্ডল থেকে রক্ত মুছে ফেলতে ফেলতে বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার জাতিকে মাফ করে দাও; কারণ এরা (কি করছে) জানে না।’

২০) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম বলেন, ‘মুসলিম বান্দার যে কোন রোগ-ব্যাধি, দৈহিক ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও অস্থিরতা হোক না কেন, এমনকি দেহে কাঁটা বিঁধলেও সে কারণে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’

২১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, একদা আমি রাসূলে আকরাম এর নিকট গেলাম। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছিলেন।

আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো প্রচণ্ড জ্বরে কাঁপছেন।’

তিনি বললেন,’ হ্যাঁ, তোমাদের মত দু’জনের সমান জ্বরে কাঁপছি।’

আমি বললাম,’ এটা কি এজন্যে যে, এতে আপনার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে?’

তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক তাই। মুসলিম বান্দাহ্‌ কাঁটা কিংবা অন্য কোনো বস্তু দ্বারা কষ্ট পেলে আল্লাহ অবশ্যই সে কারণে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তার ছোট ছোট গুনাহগুলো গাছের শুকনো পাতার মতো ঝরে পড়ে যায়।’

২২) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম বলেছেন, ‘ তোমাদের কেউ কোনো বিপদে বা কষ্টে নিপতিত হলে সে যেন মৃত্যুর আকাংখা ব্যক্ত না করে। কেউ যদি কিছু ব্যক্ত করতেই চায়, তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! তুমি আমায় যতক্ষণ জীবিত রাখো, যতক্ষণ জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর। আর যখন মৃত্যুবরণ করা আমার জন্য কল্যাণকর, তখন আমায় মৃত্যু দান করো।’

২৩) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদরাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুনাইনের যুদ্ধে রাসূলে আকরাম কিছু লোককে গনীমতের মালের অংশ বেশি দিয়েছিলেন। (নও-মুসলিমদের মন আকুষ্ট করার জন্যই এটা করা হয়েছিল।) তিনি আকরা ইবনে হাবেস এবং ‘উয়ায়না ইবনে হিসনকে এক শত করে উট দান করেছিলেন। এ ছাড়া আরবের উচ্চ বংশীয় লোকদেরকে মর্যাদা অনুসারে বেশি বেশি করে দিয়েছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি অভিযোগ করল, ‘আল্লাহর কসম! এ বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহ্‌র সন্তোষের নিয়ত করা হয়নি।’

আমি বললাম,’আল্লাহর কসম! এ খবর রাসূলে আকরাম এর কাছে অবশ্যই পৌঁছাব।’

কাজেই আমি তাঁর কাছে এসে উপরিউক্ত ব্যক্তির অভিযোগ জানালাম। এতে তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল লাল বর্ণ ধারণ করল। তিনি (ক্ষোভের সাথে) বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই যখন ন্যায়বিচার করে না, তখন আর কে ন্যায়বিচার করবে?’

এরপর বললেন, ‘আল্লাহ মূসা আলাইহিস সালাম এর প্রতি দয়া প্রদর্শন করুন। তাকে তো এর চাইতেও বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছে। তিনি ধৈর্য (সবর) অবলম্বন করেছেন।’ আমি (তাঁর অবস্থা দেখে) মনে মনে বললাম, এরপর আমি তাঁর কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ তুলবো না।'

.

[ বুখারী ও মুসলিম ]

.

[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০ ও ৪২ ]

.

.

মুত্তাফাকুন আলাইহি-৬

বিষয়: বিবিধ

২৩৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File