মুত্তাফাকুন আলাইহি-৬
লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ৩০ জুলাই, ২০১৩, ১১:১৫:৪১ সকাল
তাওবা-৩
১৩) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘যদি কোন মানুষের এক উপত্যাকা ভর্তি সোনা থাকে তবে সে তার জন্য আরো দুটি উপত্যাকা ভর্তি সোনার আকাঙ্খা করবে। তার মূখ মাটি ছাড়া আর কিছুতেই ভরবেনা । আর যে ব্যক্তি তাওবা করে আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করেন।’
১৪) আবু হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে করীম ﷺ বলেন , ‘আল্লাহ্ এমন দুইজন লোকের জন্য হাসবেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে এবং উভয়ই জান্নাতে যাবে। একজন আল্লাহ্র রাস্তায় লড়াই করে শহীদ হবে। তারপর আল্লাহ্ হত্যাকারীর তাওবা কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহন করে( জিহাদে ) শহীদ হয়ে যাবে।’
ধৈর্যশীলতা-১
১৫) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আনসারদের কতিপয় ব্যক্তি রাসূলে আকরাম ﷺ এর কাছে সাহায্য চাইল। তিনি তাদেরকে সাহায্য দিলেন। তারা আবার চাইল। তিনি আবারও দান করলেন। এমনকি, তাঁর নিকট যা কিছু ছিল, তা সবই শেষ হয়ে গেল।
এভাবে হাতের সবকিছু দান করার পর তিনি লোকদের বললেন, ‘আমার হাতে যে ধন-মাল আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে সঞ্চয় করে রাখি না। (জেনে রেখো) যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্রই রাখেন। যে ব্যক্তি কারো মুখাপেক্ষী হতে চায় না, আল্লাহ তাকে স্বাবলম্বী করে তোলেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য অবলম্বন করতে চায় আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীলতা দান করেন। ধৈর্যের চাইতে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন জিনিস কাউকে দেয়া হয়নি।’
১৬) রাসূলে আকরাম ﷺ আযাদকৃত গোলাম যায়েদ ইবনে হারেসার পুত্র উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একদা রাসূলে আকরাম ﷺ এর এক কন্যা তাঁর পুত্রের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে বলে সংবাদ দিয়ে রাসূলে আকরাম ﷺকে সেখানে আসতে অনুরোধ জানালেন। রাসূলে আকরাম ﷺসংবাদ বাহকের মাধ্যমে তাকে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন তা তাঁরই। আর যা কিছু দিয়েছেন তাও তাঁর। আল্লাহর কাছে প্রতিটি বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়-কাল রয়েছে। সুতরাং তোমার ধৈর্য অবলম্বন করে আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াবের পুরস্কারে আকাংখা পোষণ করা উচিত।’
কন্যা দ্বিতীয়বার তাঁকে কসম দিয়ে তাঁর কাছে আসতে বললেন। এ সময় রাসূলে আকরাম ﷺ সা’দ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু , মু’আয ইবনে জাবালরাদিয়াল্লাহু আনহু , উবাই ইবনে কা’বরাদিয়াল্লাহু আনহু , যায়েদ ইবনে সাবিতরাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আরো কতিপয় সাহাবীসহ উঠে গেলেন। এরপর শিশুটিকে রাসূলে আকরাম ﷺ এর কাছে ন্যস্ত করা হলো। তিনি তাকে নিজের কোলের ওপর বসালেন। এ সময় শিশুটির প্রাণ অস্থির হয়ে যেন বেরিয়ে আসছিল।
তখন রাসূলে আকরাম ﷺ এর দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে লাগল। সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, ‘একি হে আল্লাহর রাসূল’!
তিনি বললেন, ‘এটা আল্লাহর রহমত, যা তিনি স্বীয় বান্দাদের হৃদয়ে সঞ্চারিত করেছেন।’
অপর এক বর্ণনায় আছে; আল্লাহ তাঁর ইচ্ছামত বান্দাদের হৃদয়ে রহমত দান করেন।
১৭) হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা রাসূলে আকরাম ﷺ একজন মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহিলাটি একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি (মহিলাটিকে) বললেন, ‘(ওহে! তুমি) আল্লাহকে ভয় এবং ধৈর্য অবলম্বন (সবর) করো।’
মহিলাটি বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু না বলে নিজের কাজ করুন। কারণ আপনি তো আমার মতো কোনো মুসিবতে পড়েননি।’ আসলে মহিলাটি তাঁকে চিনতে পারেনি।
তখন তাকে বলা হলো, ইনি হচ্ছেন রাসূলে আকরাম ﷺ । মহিলাটি রাসূলে আকরাম ﷺ এর বাড়ির দরজায় এলো এবং সেখানে কোনো দারোয়ান দেখতে পেল না।
এরপর মহিলাটি রাসূলে আকরাম ﷺ কে সম্বোধন করে বললো, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’
রাসূলে আকরাম ﷺ বললেন, ‘ধৈর্যশীলতা (সবর) তো প্রথম আঘাতের সময়ই প্রকাশ পেয়ে থাকে।’
(বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, মহিলাটি তার এক শিশুপুত্রের জন্য কাঁদছিল।
[বুখারী ও মুসলিম]
[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ২৩ ,২৪, ২৬, ২৯ ও ৩১]
.
.
মুত্তাফাকুন আলাইহি-৫
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন