মুত্তাফাকুন আলাইহি-৪

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২৬ জুলাই, ২০১৩, ০১:২৩:০৬ দুপুর

তাওবা-১

১০) রাসূলে আকরাম এর খাদেম হযরত আবু হামযা আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার উট গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার সে তা ফিরে পায়।’

(বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন, যার খাবার ও পানীয় সামগ্রী নিয়ে সওয়ারী উটটি হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হতাশ হয়ে লোকটি একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল।

এরূপ অবস্থায় হঠাৎ সে উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেল। সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল,’ হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দাহ! আর আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই এ ধরনের ভুল করে বসলো।’

.

.

১১) হযরত আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম বলেছেন,

“তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধানে বের হলো। তাকে একজন সংসারত্যাগী খ্রীস্টান দরবেশের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। সে ঐ দরবেশের কাছে গিয়ে বলল,”আমি নিরানব্বইজন লোককে হত্যা করেছি। এখন আমার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?”

দরবেশ বললেন, ‘নেই’।

তখন লোকটি দরবেশকেও হত্যা করে একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। এরপর আবার সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম আলেমের সন্ধান জানতে চাইলে তাকে একজন আলেমের সন্ধান জানিয়ে দেয়া হলো। লোকটি তার কাছে গিয়ে বলল যে সে একশো লোককে খুন করেছে। এখন তার জন্য তাওবার কোন সুযোগ আছে কি?

আলেম বললেন,”হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। আর তাওবার অন্তরায় কে হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর এবং তোমার নিজ দেশে কখনও ফিরে যেওনা। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা।”

লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে চলতে লাগলো। অর্ধেক পথ চলার পর তার মৃত্যুর সময় এসে পড়লো। এবার তাকে নিয়ে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন,” এ লোকটি তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।”

কিন্তু আযাবের ফেরেশতারা বলতে লাগলেন,” লোকটি তো কখনো কোন ভালো কাজ করেনি।”

এমন সময় একজন ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের সামনে উপস্থিত হলো। তখন সবাই তাকে সালিশ হিসেবে মেনে নিল। সালিশরূপী ফেরেশতা বললেন,” তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে নাও। যে দিকটি যার কাছাকাছি হবে, সে দিকটি তারই বলে গণ্য হবে।”

সুতরাং জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে আসছিলো, তাকে সে দিকটির কাছাকাছি পাওয়া গেল। এর ভিত্তিতে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ নিলেন।

(বুখারী ও মুসলিম)

[ সহীহ বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, ওই লোকটি সৎ লোকদের বসতির দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়েছিল। এই কারণে তাকে ওই লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা’য়ালা একদিকের বসতিকে দুরে সরে যেতে এবং অপরদিকের বসতিকে কাছাকাছি হতে বলে উভয়ের মধ্যবর্তী জমি মাপতে ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন।

ফলে তাকে সৎ লোকদের জমির দিকে আধ হাতপরিমান বেশি অগ্রবর্তী দেখতে পেল এবং তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, লোকটি নিজের বুকের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে অসৎ লোকদের জমি থেকে দূরে সরে গেল। ]

.

[বুখারী ও মুসলিম]

.

.

[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ১৫ ও ২০]



মুত্তাফাকুন আলাইহি-৩

বিষয়: বিবিধ

১৫১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File