মুত্তাফাকুন আলাইহি-৩

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২৪ জুলাই, ২০১৩, ০৪:০৯:০১ বিকাল

প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কাজ, কথা ও নিয়তে বিশুদ্ধতা ও একনিষ্ঠতা জরুরী-৩



৯) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরামকে বলতে শুনেছি,

“তোমাদের পুর্ব কালের তিনজন লোক কোথাও যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। কিন্তু তারা গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা পরস্পর বলতে লাগলো, “তোমরা একমাত্র তোমাদের খাঁটি আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করলে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবে।”

তাদের একজন বললো, “হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা ছিলেন অত্যন্ত বৃদ্ধ। আমি আমার পরিবার,সন্তান ও অধীনস্তদের আগেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমায় জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে যেতে হলো। আমি যখন রাতে বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দুধ নিয়ে যথারীতি তাদের কাছে গিয়ে দেখি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি পছন্দ করলামনা। আবার তাদের খাওয়ার পূর্বেই পরিবারের লোকদের দুধ পান করানোও পছন্দ করলাম না।

আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে রাতভর পিতা-মাতার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা আমি সঙ্গত মনে করলাম না। এদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের কাছে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিল। এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেল এবং তারা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আমি তাদরেকে দুধ পান করালাম।

হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে এই পাথরের জন্য আমরা যে বিপদে পড়েছি তা দূর করে দাও।” এতে পাথর কিছুটা দূরে সরে গেল কিন্তু গুহা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারল না।

অপর ব্যক্তি বলল,”হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল । আমি তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।” অন্য বর্ণনায় আছে, “পুরুষ নারীকে যতটা ভালবাসতে পারে, আমি তাকে ততটাই ভালবাসতাম। আমি তার সঙ্গে কামনা চরিতার্থ করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলাম। কিন্তু সে এতে রাজী হলো না। অবশেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে আমার নিকট এলো। আমি তাকে আমার সাথে নির্জনে মিলনের শর্তে একশো বিশটি স্বর্ণমুদ্রা (দিনার) দিলাম। আমার প্রস্তাবে সে রাজী হলো। “

অন্য বর্ণনা মতে, আমি যখন তার নিকটবর্তী হলাম, তখন সে বলল,‘আল্লাহ্কে ভয় কর এবং অবৈধভাবে আমার কৌমার্য নষ্ট করো না।”

“আমি তখনই তাকে ছেড়ে চলে গেলাম। অথচ মানুষের মধ্যে সে ছিল আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি তাকে যে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করো।” এর ফলে পাথর আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এতেও তারা বের হতে পারল না।

তৃতীয় ব্যক্তি বলল, “হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিককে কাজে লাগিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে যথারীতি পারিশ্রমিক দিলাম। কিন্তু একজন শ্রমিক তার পারিশ্রমিক রেখে চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিককে ব্যবসায়ে নিয়োগ করলাম। এতে তার ধন-দৌলত অনেক বেড়ে গেল।”

কিছুদিন পরে লোকটি ফিরে এলো। এসে আমায় বলল, “হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পারিশ্রমিকটা দিয়ে দাও।”

আমি বললাম, ” এই উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও চাকর যা দেখছো, সবই তোমার ।”

সে বলল, “হে আল্লাহ্‌র বান্দা! তুমি আমার সাথে উপহাস করো না।”

আমি তাকে বললাম, “আমি তোমাকে মোটেই উপহাস করছি না।"

এরপর সে সব মালামাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করে থাকি, তবে আমাদের থেকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দাও।”

এরপর গুহার মুখ থেকে ঐ পাথর সম্পূ্র্ণ সরে গেল এবং তারা সকলেই হেঁটে বের হয়ে চলে গেল। “

[বুখারী ও মুসলিম]

.

.

[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং-১২ ]

.

.

মুত্তাফাকুন আলাইহি-২

.

.

এ বিষয় সংক্রান্ত আরো হাদিস পড়তে চাইলে দেখুন

আলোকের ঝর্ণাধারা

বিষয়: বিবিধ

২০৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File