মুত্তাফাকুন আলাইহি-১

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ১৩ জুন, ২০১৩, ১০:১৩:৫৬ সকাল

প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কাজ, কথা ও নিয়তে বিশুদ্ধতা ও একনিষ্ঠতা জরুরী -১

১) আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, 'আমি রাসূলে আকরাম কে বলতে শুনেছি যে, "সকল কাজের প্রতিফল কেবল নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়্যাত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত দুনিয়া হাসিল করা কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হবে, তার হিজরত সে লক্ষ্যেই হয়েছে বলে পরিগনিত হবে।"

২) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম বলেছেন , "একটি সেনাদল কাবার উপর আক্রমণ চালাতে যাবে। তারা যখন সমতল ভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সামনের ও পিছনের সমস্ত লোকসহ ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে।"

হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিজ্ঞেস করলেন, "হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আগের ও পরের সমস্ত লোকসহ তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে? যখন তাদের মধ্যে অনেক শহরবাসী থাকবে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় ও সানন্দে তাদের মধ্যে শামিল হবে না?"

রাসূলে আকরাম বললেন, "আগের ও পরের সমস্ত লোককেই ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর লোকদের নিয়্যাত অনুসারে তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।"

[এখানে শব্দাবলী শুধু বুখারী থেকে উদ্বৃত করা হয়েছে।]

৩) উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম বলেছেন, "মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত করার অবকাশ নেই। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত রয়েছে। তোমাদেরকে যখন জিহাদের জন্য ডাক দেয়া হবে, তখন তোমরা অবশ্যই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। "

[ এ হাদীসের তাৎপর্য এই যে, এখন আর মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে হিজরত করার কোন প্রয়োজন নেই। এই কারণে যে, মক্কা এখন দারুল ইসলামে পরিণত হয়েছে।]

৪) হযরত আবু ইসহাক সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর একজন। তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জ্বের বছরে খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলে আকরাম আমাকে দেখতে আসলেন।

আমি বললাম," হে আল্লাহর রসূল! আমার রোগের তীব্রতা আপনি লক্ষ্য করছেন। আর আমি একজন ধনবান লোক।কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী শুধুমাত্র আমার মেয়েই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করে দিতে পারি?"

রাসূলে আকরামবলেন, ‘না’।

আমি আবার বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক (দান করে দেই)?"

তিনি বললেন,"না।"

আমি পুনরায় বললাম, "তাহলে এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দেই)?"

তিনি বললেন, ‘হাঁ’, এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পার’।

এটা অনেক বেশি অথবা বড়। তোমাদের উত্তরাধিকারীগণকে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় না রেখে তাদেরকে বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়াই উত্তম যেন তাদেরকে মানুষের সামনে হাত পাততে না হয়। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দিবে, তার সবকিছুরই সওয়াব (প্রতিদান) তোমাকে দেওয়া হবে।"

এরপর আমি (বর্ণনাকারী আবু ইসহাক) বললাম, "হে আল্লাহর রাসূল! আমার সঙ্গী সাথীগণের (মদীনায়) চলে যাবার পর আমি কি পিছনে (মক্কায়) থেকে যাবো?"

তিনি বললেন," পিছনে থেকে গিয়ে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করবে, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বেড়ে যাবে। খুব সম্ভব তুমি থেকে যাবে। তখন কিছু লোক তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অন্য কিছু লোক তোমার দ্বারা কষ্ট পাবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরত পূর্ণ করে দাও এবং তাদেরকে পিছনে ফিরিয়ে দিও না।"

তবে সাদ ইবনে খাওলাসত্যিই কৃপার পাত্র। মক্কায় তাঁর মৃত্যু ঘটলে রাসূলে আকরাম সমবেদনা প্রকাশ করেন।

.

[বুখারী ও মুসলিম]

.

[ রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত। হাদিস নং যথাক্রমে ১,২,৩ ও ৬ ]

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File