ছন্দে ছন্দে আল কুরআন -১৫

লিখেছেন লিখেছেন ফাতিমা মারিয়াম ২৬ মে, ২০১৩, ০১:৩৫:২৩ দুপুর

মূনাফিকের কার্যকলাপ

***********************

.

মানেনা যারা আল্লাহর বাণী কঠিন তাদের প্রাণ,

সতর্ক করা বা না করা তাদের জন্য সমান।

তাদের হৃদয়ে, তাদের কানে দিয়েছেন প্রভু মোহর,

আবরণ আজ পড়ে গিয়েছে তাদের চোখের ওপর।

.

কঠিন আযাব অপেক্ষা করছে শুধুই তাদের তরে,

( প্রভুর আদেশ অমান্য করে উপহাস যারা করে )।

বলে তারা,'মোরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও আখিরাতে'

মূমীন নয় এরা! ধোঁকাবাজী করে মূমীন ও প্রভুর সাথে।

.

আসলে এরা নিজেদের সাথেই করছে প্রতারণা,

সচেতন নয় কভু তারা একথা সবারই জানা।

তাদের হৃদয়ে মূনাফিকী নামক রয়েছে কঠিন রোগ,

বিনীময়ে তারা পরকালে করবে কঠিন শাস্তি ভোগ।

.

যখনই তাদের বলা হয় সৃষ্টি করোনা ফ্যাসাদ,

বলে তারা,'মোরা সংশোধনকারী।' (এরা হবে বরবাদ )।

সাবধান হও মূমীনসকল! এরাই ফ্যাসাদকারী,

সচেতন নয় এই ব্যাপারে ( এরাই অহংকারী )।

.

যখনই তাদের বলা হয়,'তোমরা এবার ঈমান আনো'

বলে তারা, 'মোরা নির্বোধ নই, সেই কথা কি জানো?'

নির্বোধ এরা; জানে সকলেই; শুধু তারাই জানেনা,

( আল্লাহর পথ সরল-সঠিক; এরা তা মানেনা )।

.

মূমীনদের কাছে এসে বলে তারা,'ঈমান এনেছি মোরা'

শয়তানদের কাছে গিয়ে বলে, 'ধোঁকা খেয়েছে ওরা।

আছি মোরা তোমাদেরই দলে তামাশা ওদের সাথে'

আল্লাহ বলেন,'এদের রশি রয়েছে আমার হাতে।'

.

ঢিলা করেছি রশি ওদের ওরা তা বুঝেনা,

অন্ধের মত হাতড়িয়ে মরে পথ খুঁজে পায়না।

গোমরাহী কিনে নিয়েছে ওরা হিদায়াহ্‌র বিনীময়ে,

সঠিক পথ নয়তো এটা, সওদা যাবে ক্ষয়ে।

.

মূমীনব্যক্তি আলোকিত করে যখন চারিপাশ তার,

মূনাফিক তখন দৃষ্টি হারায় চারিদিক ঘন আঁধার।

ফিরে আসবেনা কখনোই তারা সহজ-সরল পথে,

বোবা, কালা ও অন্ধ হয়ে পড়ে আছে নিজ মতে।

.

আকাশ থেকে পড়ে যখন ঝরঝর বারিধারা,

বিজলীর আলো, বাজের শব্দে ভয় পেয়ে যায় তারা।

প্রাণভয়ে কানে হাত দিয়ে রাখে শুনতে চায়না কিছু,

আল্লাহ এসব অমান্যকারীর শীর করেছেন নীচু।

.

বিজলী দেখে ভয় পেয়ে ভাবে অন্ধ হলো বুঝি,

সামান্য আলোয় কিছুদুর যায় পথ পায়না খুঁজি।

আল্লাহ চাইলে শ্রবণ ও দৃষ্টি নিতে পারেন কেড়ে,

নিশ্চয়ই তিনি শক্তিশালী সব কিছুর ওপরে।



[আল বাকারাহ; আয়াত নং; ৬-২০]




আয়াত সমূহের অর্থঃ


৬.) যেসব লোক (একথাগুলো মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে, তাদের জন্য সমান – তোমরা তাদের সতর্ক করো বা না করো, তারা মেনে নেবে না।

৭.) আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

৮.) কিছু লোক এমনও আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর ওপর ও আখেরাতের দিনের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়।

৯.) তারা আল্লাহর সাথে ও যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে ধোঁকাবাজি করছে। কিন্তু আসলে তারা নিজেদেরকেই প্রতারণা করছে, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়।

১০.) তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ‌ সে রোগ আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

১১.) যখনই তাদের বলা হয়েছে, যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা একথাই বলেছে, আমরা তো সংশোধনকারী।

১২.) সাবধান! এরাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী, তবে তারা এ ব্যাপারে সচেতন নয়।

১৩.) আর যখন তাদের বলা হয়েছে, অন্য লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো তখন তারা এ জবাবই দিয়েছে- আমরা কি ঈমান আনবো নির্বোধদের মতো? সাবধান! আসলে এরাই নির্বোধ, কিন্তু এরা জানে না।

১৪.) যখন এরা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয়, বলেঃ “আমরা ঈমান এনেছি”, আবার যখন নিরিবিলিতে নিজেদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো আসলে তোমাদের সাথেই আছি আর ওদের সাথে তো নিছক তামাশা করছি।”

১৫.) আল্লাহ এদের সাথে তামাশা করছেন, এদের রশি দীর্ঘায়িত বা ঢিল দিয়ে যাচ্ছেন এবং এরা নিজেদের আল্লাহদ্রোহিতার মধ্যে অন্ধের মতো পথ হাতড়ে মরছে।

১৬.) এরাই হিদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী কিনে নিয়েছে, কিন্তু এ সওদাটি তাদের জন্য লাভজনক নয় এবং এরা মোটেই সঠিক পথে অবস্থান করছে না।

১৭.) এদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালালো এবং যখনই সেই আগুন চারপাশ আলোকিত করলো তখন আল্লাহ‌ তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের ছেড়ে দিলেন এমন অবস্থায় যখন অন্ধকারের মধ্যে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।

১৮.) তারা কালা, বোবা, অন্ধ। তারা আর ফিরে আসবে না।

১৯.) অথবা এদের দৃষ্টান্ত এমন যে, আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। তার সাথে আছে অন্ধকার মেঘমালা, বজ্রের গর্জন ও বিদ্যুৎ চমক। বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে নিজেদের প্রাণের ভয়ে এরা কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। আল্লাহ‌ এ সত্য অস্বীকারকারীদেরকে সবদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছেন।

২০.) বিদ্যুৎ চমকে তাদের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যেন বিদ্যুৎ শীগ্‌গির তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেবে। যখন সামান্য একটু আলো তারা অনুভব করে তখন তার মধ্যে তারা কিছুদূর চলে এবং যখন তাদের ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায় তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ চাইলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি একেবারেই কেড়ে নিতে পারতেন। নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।


[আল বাকারাহ; আয়াত নং; ৬-২০]

সবরের পুরস্কার এখানে

বিষয়: বিবিধ

২৮৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File