........ আমাদের গন্তব্য কোথায়.......
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৪৩:৫৪ রাত
......... একটি বিশেষ কাজে আজ এক শ্রদ্ধেয় স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম আমরা কয়েক জন।কাজ ও খাওয়া দাওয়া শেষে যখন রাস্তায় বের হলাম তখন মনে হল এ আমরা কোন সমাজে বাস করি।আমরা কি লজ্জার মাথা খেয়ে ফেলেছি নাকি আস্তে আস্তে আমরা মানুষ নামের পরিচয় ভুলে পশুতে রূপান্তরিত হচ্ছি।বাঙালি সংস্কৃতি ও বৈশাখ উপলক্ষ্যে জোড়ায় জোড়ায় ছেলে মেয়ে বিচ্ছি ভাবে কেউ উরুর উপর,আবার কেউ রানের উপর এছাড়াও কেউ কেউ এমন ভাবে বসে আছে সেটা লেখনীর মাধ্যমে বলাটাও লজ্জার.........
............ শুধু আজই নয় প্রায়ই নাকি রাতের অন্ধকারে এই মানুষ নামক যৌনপ্রানীরা আর কোন জায়গা না পেয়ে এই রাস্তায় বসে থাকে।স্যার আক্ষেপ করে বলছিলেন আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু যখন বাচ্চাগুলোকে নিয়ে বের হয় তখন বেশ খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যেতে হয়।আজও যখন স্যার আমাদের বিদায় জানাতে আসছিলেন তখন স্যারের সাথে ৮ বছরের ছেলেটাও ছিল।আর এই অপ সংস্কৃতির বিষবাষ্পের ছোবলে আমরা যেমন বিব্রত্ব অবস্থার মধ্যে পড়লাম সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না...... আমরা আমাদের বাচ্চাদের কি শিক্ষা দিচ্ছি...
............ হায়রে অভাগারা বাঙালি সংস্কৃতির নামে কি বিশ্রী ভাবে এই মানুষ নামক প্রাণীগুলো সেজেছে।আর সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে এই সকল ২০-২৭ বছরের যুবক যুবতীদের যে আচরণ সেটা বদ্ধ ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে গোপন সম্পর্ক থাকার কথা তাকেও হার মানিয়েছে(আমার বিশ্বাস কোন স্বামী-স্ত্রী এমন নিকৃষ্ট আচরণ অন্তত প্রকাশ্য দিবালোকে করবে না)।
এসব দেখে মনে হচ্ছে...............
1. আমরা এখন একটি যৌনতার নরক রাজ্যে বাস করছি যেখানে বৈধতার মাপকাঠি আর নেই বরং অবৈধ সম্পর্কের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার সবকিছু ভেসে যাচ্ছে আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সেই জোয়ারে হারিয়ে যাচ্ছে...
2. বিভিন্ন সংস্কৃতি ও বাঙালিপনার দোহায় দিয়ে যেভাবে প্রাশ্চত্যের সংস্কৃতির অনুকরণ ও অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ ভেসে যাচ্ছে সেটা কখনো হাজার বছরের যে বাঙালি সংস্কৃতির সংজ্ঞায়ন দেওয়া হয় তার সাথে মেলে না বা মেলানো যাবে না.........
3. গ্ল্যামারের সে ছোঁয়া সেটা আজ এই অবুঝ বা নাদান তরুণ সমাজের মাথায় পচন ধরিয়েছে ফলে গ্ল্যামারের সাগরে ভেসে এরা তাদের চক্ষু নয় বরং অন্ধ করে ফেলেছে তাদের অন্তরকে তাইতো বাচ্চাদের সামনে তো দূরে থাক বড়দের সমানেও এমন নিকৃষ্ট ভাবে দেহ প্রদর্শনী করতে পারে আবার এমন উৎকটভাবে যৌনতার প্রকাশ ঘটাতে পারে সেটা সুস্থ কোন মানুষের কল্পনায় আনা কঠিন......
4. এই তরুণ-তরুণী যারা রাস্তা ঘাটে পশুদের মত যৌনাচার করতে পারে ভাবতে অবাক লাগে এদের থেকে যে পরবর্তী প্রজন্ম আসবে তারা এই সমাজকে ঠিক কোথায় নিয়ে যাবে ভাবতেই ভয় লাগে......
5. বিবাহের মাধ্যমে যে সুনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠবে এরা তার ভিত্তিমুলে প্রতিনিয়তই আঘাত করে যাচ্ছে।ফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে অবৈধ সম্পর্কের ছড়াছড়ি,অবৈধ যৌনচার এবং এর মাধ্যমে অবৈধ সন্তানসহ সমাজের মাঝে তৈরি হচ্ছে অবৈধ মানুষ তৈরির কারখানা যার প্রভাব আমাদের এ সমাজে পড়া শুরু করেছে.........
6. এ সমাজের মধ্যে যে পচন ধরেছে সেগুলো পহেলা বৈশাখ,ভালবাসা দিবস,৩১ নাইট আসলে উৎকটভাবে এ ভদ্র সমাজের অলিতে গলিতে, চিপায় চাপায়,রাস্তা ঘাটে ফুটে উঠে।বলা যায় এটি এ সমাজের মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যায় দেখ তোমাদের সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে পচে গলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।ধন্যবাদ পহেলা বৈশাখকে.........
7. মা-বাবার কলিজার টুকরা,এদেশের আগামী দিনের ভবিষ্যত কান্ডারীরা জেনে বা না জেনে আজ বাঁধ ভাঙ্গা যৌনতার স্রোতে ভেসে হারিয়ে ফেলছে চরিত্র,হারিয়ে ফেলছে জীবনের মূল উদ্দশ্য,হারিয়ে ফেলছে নৈতিক শক্তি।আত্নার দূষণই যে বড় ক্ষতি তা বোঝার মত বোধও হারিয়ে ফেলছে দিনের পর দিন...
8. আগে নানা উপলক্ষ্যে তরুণ-তরুণীরা তাদের পোশাক ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করতো কিন্তু এখন এই এক বিংশ শতাদ্ধীতে চলছে দেহের প্রদর্শনী।হায়রে কি অপচয়,কি ধবংসাত্বক কার্যবলী।ধর্মীয় দিক না হয় বাদই দিলাম কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দিকের প্রতি তো সামান্য বোধ বিবেচনা থাকা উতিৎ............
কেন এমন হচ্ছে..................
• পরিবারগুলো আজ তাদের সন্তানের প্রতি যতটা না যত্নবান তার চেয়ে বেশী যত্নবান পার্থিব ও বস্তুবাদি বিষয়াদি নিয়ে ফলে মানব তৈরির কারখানা পরিবার থেকে আজ দানব তৈরি হচ্ছে যাদের মধ্যে ভাল মন্দের বাধ বিচার থাকছে না, থাকছে না যৌনতার সীমারেখা।পাশাপাশি প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তরুণদের ধবংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাবা-মা সে বিষয়ে হয়তো বা অবগত নয় অথবা অবগত হলেও সচেতনভাবে তার প্রতিকার করছে না......
• আজ আমাদের সমাজে যৌনতার এই স্রোতকে রুখার জন্য যে বিবাহের ব্যবস্থা আছে তাকেও নানা ভাবে কুলষিত করে ফেলা হয়েছে নানা শর্তের জালে। ফলে কঠিন হয়েছে বিয়ে আর সহজ হয়ে গেছে প্রম-ভালবাসার নামে ব্যভিচার...
• ..................... সাংস্কৃতিক আগ্রাসনঃ আজ আমাদের এই দেশে গ্রাম থেকে শহরে আকাশ সংস্কৃতির যে প্রভাব বলয়ে আপতিত সেটা কল্পনাতীত।১১কোটি মানুষের হাতে মোবাইল,৫-৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে,কয়েক কোটি ফেসবুক একাউন্ট।উড কালচার(হলিউড,বলিউড) এর sex,action violence এর কারণে সমাজ বিপুল ভাবে প্রভাবিত।আজ শাহরুখ থেকে ব্যাডপিট,আনুশকা থেকে অ্যানজিলা জোলি,জিওগ্র্যাফি থেকে পর্ণগ্র্যাফি সবই চোখের সামনে।ফলে এই যে যৌনতাময় সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের মধ্যে পুশুত্ব সৃষ্টি করছে।আর শপিং মল হতে বিজ্ঞাপন,সিনেমা হল থেকে পথের অলিতে গলিতে অশ্লীল পোস্টার।এগুলো দেখতে দেখতে আজ আমাদের চিন্তার জগতে যৌনতার যে প্রভাব তা অত্যন্ত তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে।ফলে পথে নারীরা আজ আর মানুষ না বরং sex এর সিম্বল হিসাবে দেখা হচ্ছে।এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো রাতে কম টাকায় কল করার ব্যবস্থা,মিডিয়ায় নারীদের যত্রতত্র ভাবে উপস্থাপন আমাদের প্রচলিত সমাজে কুঠারিঘাত করছে।এখন অবস্থা এমন যে আমাদের চুলের কাটিং কেমন হবে তাও ঠিক করে দিচ্ছে মিডিয়া অন্যান্য মাধ্যমগুলো।উগ্রতা,যৌনতা,অবৈধ সর্ম্পকের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীরা.....
• .................. শিক্ষা ব্যবস্থার সংকটঃ আজ প্রশ্ন ফাঁস,ডাকসুর নির্বাচন না হওয়া,শিক্ষার মধ্যে দর্শনের ঘাটতিসহ নীতিহীনতা উৎকট ভাবে দেখা যাচ্ছে।শিক্ষার মধ্যে চাকুরি পাওয়া দুরাশা থাকলেও মানবিক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ।স্কুল-কলেজে নানামূখি প্রতিযোগিতা আর বিশ্ববিদ্যালয় হল চাকুরির বাজারে পণ্য তৈরির কারখানা হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।ফলে সমাজের সাথে সংগতি পূর্ণ নয় বরং রাজনৈতিক ফাইদা লুটার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে যার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না কোন দর্শন আর না মানবিকতার ছোঁয়া।নৈতিকতাহীন শিক্ষা,নৈতিকতাহীন মানব আর এর ফল হচ্ছে যৌনতার সেবা দাস ও দাসী যার প্রভাব পড়ছে এই সমাজের চোরাগলিতে
.................. বিদ্যুতের অপচয়,গ্যাসের অপচয়,সরকারি নানা অপচয়ের ভিড়ে সবচেয়ে বড় অপচয় হচ্ছে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নৈতিকতার অপচয় যাদের উপরই এই বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করে আছে।জানি সমাজের মাত্র ১০ বা ১৫% এই সকল অবাঞ্চিত কাজের সাথে আবেগের কারণে অথবা নানা নীতিহীনতার জন্য যুক্ত হয়ে গেছে।এর বাইরে এখনো বিশাল সংখ্যক তরুণ-তরুণীরা তাদের নৈতিক মান ধরে রাখার নিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে কিন্তু আস্তে আস্তে বাইরের পরিবেশ বড্ড বেশী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে............
............... একবিংশ শতকের পাদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের এই দেশ আজ নানা সংকটের আর্বতে ঘুরপাক খাচ্ছে।কি ব্যক্তি,কি পারিবারিক,কি সমাজ বা রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নীতির পরির্বতে নীতিহীনতার জোয়ারে সবকিছু যেন ভেসে যাচ্ছে। সংকটের মধ্যেই সমাধান নিহিত আছে।আমাদের প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের জাগরণ,প্রয়োজন দেশীয় প্রেক্ষাপটে নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ,প্রয়োজন স্বাধীন ভাবে ধর্মীয় রীতিনীতির বাস্তবায়ন,বিশ্বাসীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তা না হলে ধবংসের এ মিছিল থামবে না বরং চলছে থাকবে এবং ক্রমে অন্যরাও আকান্ত্র হবে এই মরণ ব্যাধিতে.........
বিষয়: বিবিধ
১৭০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
''ধর্মীয় দিক না হয় বাদই দিলাম কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দিকের প্রতি তো সামান্য বোধ বিবেচনা থাকা উতিৎ............''
আল্লাহর বান্দাহ যখন আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে দ্বিধাদ্বন্ধে ভোগে, মরতে ভয় পায়, দুনিয়াবী জুলুম নির্যাতনের ভয় পায় - আল্লাহ তখন অমন বান্দাহর উপর বনী ইসরাইলের ন্যায় অভিশাপ ই নিশ্চিত করে।
আমরা সবাই আজ ধর্মীয় দিক বাদ দিয়ে দিয়েছি, ভুলে বসে আছি কিংবা ধর্মকে প্রাইভেট বানিয়ে ফেলেছি। সবাই পরিবার ও সমাজ ও তথাকথিত রাষ্ট্র ও তার এবং নিজের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত আছি বলেই অমনটা আপনার চোখের সামনে ফুটে উঠেছে।
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
ধন্যবাদ.।.।
মন্তব্য করতে লগইন করুন