........তনুরা কেন ধর্ষিত এবং মানিকরা কেন ধর্ষক.........
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৩৩:০৩ রাত
............... দুটি শিশুরই জন্ম হয়েছিল আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে।বাবা-মায়ের নয়নের মনি,আদরের ধন।তারপর ইতিহাসের পরিক্রমায় একজন কেন ধর্ষিত এবং আরেক জন কেন ধর্ষক?কার পাপে তাদের এই দ্বিমূখী ভূমিকা?কে বা কারা তাকে ধর্ষিত বানালো এবং কেই বা তাকে ধর্ষক বানালো?কে নিবে এই দায় ভার?এ দায় কি পোশাকের,এ দায় কি পরিবারের নাকি এ দায় সমাজ বা রাষ্ট্রে ব্যবস্থার?
............... আমাদের সমাজে যখনই কোন সমস্যার উদ্ভব ঘটে তখনই খুব সাদা মাঠা ভাবে আলোচনা চলে।যেমন যখন একজন নারী নির্যাতনের শিকার হয় তখন প্রশ্ন তোলা হয় তার পোশাক সর্ম্পকে,তার জাত-পাত সর্ম্পকে,তার রাজনৈতিক পরিচয় সর্ম্পকে।এগুলো এক একটি কারণ কিন্তু কখনোই প্রধান কারন নয়।কিন্তু কেন জানি আমরা পুরা সিস্টেম নিয়ে কোন কথা বলি না।কেন কথা হয় না কর্তা ব্যক্তিদের নিয়ে? এ সব দেখে মনে হয় আমরা গাছের গোড়া কেটে মাথায় পানি ঢালছি।আর এর ফলেই সমস্যা সমাধান তো হয়ই না বরং প্রতিনিয়তই বেড়েই চলেছে তাও আবার জ্যামিতিক হারে...... এখন দেখা যাক কোন বিষয়গুলো সমাজের মধ্যে এই ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনাগুলোর জন্ম দিচ্ছে.........
..................... মূল্যবোধের সংকটঃ আজ আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থার দিকে তাকালে বোঝা যায় এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি,স্বজনপ্রীতি,গুম,খুন,রাহাজানি,নারী নির্যাতন নামক বিষ বাষ্প।আর এগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা ক্ষেত্রের বিদ্যমান বৈষম্য নামক বিষাক্ত সর্পের কামড় দ্বারা।যারা এগুলো করছে এবং যারা এর শিকার হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই তো এ মাটিরই সন্তান। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?কারণ এ দেশের প্রচলিত রাজনীতিতে নীতি নেই আছে পেট নীতি,এদেশের অর্থনীতিতে সমাজের ভাবনা নেই আছে সমাজের সর্বনাশ করার আয়োজন,এদেশের সংস্কৃতিতে দেশীয় আভিজাত্য নেই আছে বিদেশী রীতিনীতির আগ্রাসন,এদেশের ধর্মনীতিতে ফরজ বিষয়ের খবর নেই নফল নিয়ে মাতামাতি।আমাদের পরিবার আজ ভাঙ্গনের সুর বাজছে,সমাজে বিভক্তির রেখা,রাষ্ট্রে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা।ফলে যে দর্শনের প্রয়োজন তার চাষ হচ্ছে না বরং আগাছার নিত্য পরিচর্যা চলছে।
..................... সাংস্কৃতিক আগ্রাসনঃ আজ আমাদের এই দেশে গ্রাম থেকে শহরে আকাশ সংস্কৃতির যে প্রভাব বলয়ে আপতিত সেটা কল্পনাতীত।১১কোটি মানুষের হাতে মোবাইল,৫-৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে,কয়েক কোটি ফেসবুক একাউন্ট।উড কালচার(হলিউড,বলিউড) এর sex,action violence এর কারণে সমাজ বিপুল ভাবে প্রভাবিত।আজ শাহরুখ থেকে ব্যাডপিট,আনুশকা থেকে অ্যানজিলা জোলি,জিওগ্র্যাফি থেকে পর্ণগ্র্যাফি সবই চোখের সামনে।ফলে এই যে যৌনতাময় সংস্কৃতির আগ্রাসন আমাদের মধ্যে পুশুত্ব সৃষ্টি করছে।আর শপিং মল হতে বিজ্ঞাপন,সিনেমা হল থেকে পথের অলিতে গলিতে অশ্লীল পোস্টার।এগুলো দেখতে দেখতে আজ আমাদের চিন্তার জগতে যৌনতার যে প্রভাব তা অত্যন্ত তীব্রভাবে দেখা যাচ্ছে।ফলে পথে নারীরা আজ আর মানুষ না বরং sex এর সিম্বল হিসাবে দেখা হচ্ছে।এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো রাতে কম টাকায় কল করার ব্যবস্থা,মিডিয়ায় নারীদের যত্রতত্র ভাবে উপস্থাপন আমাদের প্রচলিত সমাজে কুঠারিঘাত করছে।এখন অবস্থা এমন যে আমাদের চুলের কাটিং কেমন হবে তাও ঠিক করে দিচ্ছে মিডিয়া অন্যান্য মাধ্যমগুলো।উগ্রতা,যৌনতা,অবৈধ সর্ম্পকের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীরা......
.................. বিচারহীনতার সংস্কৃতিঃআমাদের এ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিচার না হওয়াই এখন বিচার।হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে এর মধ্যে কয়েক হাজার বিচারের জন্য আসছে কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলোও কোন সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।ফলে ধর্ষকরা উৎসাহ পাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে মানিকের মত ধর্ষণে সেঞ্চুরি করা ধর্ষকের তাও আবার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে।কারণ এরা জানে এদের কোন শাস্তি হবে না।আগে বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদতো আর এখন প্রকাশ্যেই কাঁদছে তবে শোনার বা দেখার কেউ নাই...
............ বেকারত্ব ও তরুণ সমাজঃ সীমান্ত এলাকায় কয়েক হাজার ফেনসিডিলের কারখানা,হাজার হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট প্রতিদিনই ধরা পড়ছে,বস্তি এলাকায় মাদক দ্রব্যের ছড়াছড়ি এমন কি জন প্রতিনিধিরাও মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।ফলে একদিকে চাকুরি না পাওয়ার হতাশা অন্যদিকে ড্রাগের নেশায় জীবন যৌবন ধবংসে মুখোমুখি ফলে তারা জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কাজে।আমাদের দেশে প্রায় ৫ কোটি তরুণ- তরুণী কিন্তু আমাদের কি তাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোন কার্যকারি ব্যবস্থা আছে?উত্তর হবে আছে তবে অপ্রতুল......
..................... শিক্ষা ব্যবস্থার সংকটঃ আজ প্রশ্ন ফাঁস,ডাকসুর নির্বাচন না হওয়া,শিক্ষার মধ্যে দর্শনের ঘাটতিসহ নীতিহীনতা উৎকট ভাবে দেখা যাচ্ছে।শিক্ষার মধ্যে চাকুরি পাওয়া দুরাশা থাকলেও মানবিক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ।স্কুল-কলেজে নানামূখি প্রতিযোগিতা আর বিশ্ববিদ্যালয় হল চাকুরির বাজারে পণ্য তৈরির কারখানা হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।ফলে সমাজের সাথে সংগতি পূর্ণ নয় বরং রাজনৈতিক ফাইদা লুটার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে যার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না কোন দর্শন আর না মানবিকতার ছোঁয়া।ফলে শিক্ষাগুরু নামক পশুর লালসার শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা।সৃষ্টি হচ্ছে পরিমল,পান্না মাস্টারসহ উচ্চ শিক্ষিত জানোয়ার যারা সুযোগ পাইলেই নারীর উপরে হামলে পড়ে...... বিশ্বাসীদের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির কারিগর হচ্ছে নাস্তিক কি হাস্যকর????
............... একবিংশ শতকের পাদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের এই দেশ আজ নানা সংকটের আর্বতে ঘুরপাক খাচ্ছে।কি ব্যক্তি,কি পারিবারিক,কি সমাজ বা রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নীতির পরির্বতে নীতিহীনতার জোয়ারে সবকিছু যেন ভেসে যাচ্ছে। সংকটের মধ্যেই সমাধান নিহিত আছে।আমাদের প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের জাগরণ,প্রয়োজন দেশীয় প্রেক্ষাপটে নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ,প্রয়োজন স্বাধীন ভাবে ধর্মীয় রীতিনীতির বাস্তবায়ন,বিশ্বাসীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।তা না হলে ধবংসের এ মিছিল থামবে না বরং তনুরা ধর্ষিত হতেই থাকবে এবং মানিকদের মত ধর্ষকের জন্ম হতেই থাকবে.........
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন