......... শেষ বিদায় বেলায় ......

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৩৭:৫৮ রাত

............... হঠাৎ চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে,হাত-পা শীতল হয়ে আসছে,হৃদপিন্ডের কম্পন থেমে যাচ্ছে,শরীরের তন্ত্রীগুলো অবশ হয়ে শক্তি হারিয়ে ফেলছে,অনুভব শক্তি হারিয়ে মীয়মান হয়ে যাচ্ছে।চারিদিকে কেমন জানি সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।ঐ যে মৃত্যু দূত বিছনার শিহরে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়ে গেছে।বিছানার চারিপাশে আপন জন প্রায় সবাই আছে কিন্তু তারা এই যম দূতের আগমনী বার্তাকে বুঝতে পারছে না কিন্তু আমি ঠিকই তাকে দেখছি.........

.................. হায় কত ব্যথা বেদনার সাগরে ভাসিয়ে মৃত্যু দূত তার কাজ শেষ করে ফিরে যাচ্ছে আর শুধু পড়ে আছে আমার নশ্বর দেহ।মৃত্যুর সাথে সাথে কান্নার রোল পড়েছে আর শুরু হয়ে গেছে আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে ওপারে পাঠানো আয়োজন।মা-বাবা অনেক আগেই মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে ওপারে চলে গেছেন তাই তো তাদের আদরের সন্তানের মৃত্যুতে আর তাদের বুক ফাটা আহাজারি শুনতে হচ্ছে না।ঐ তো আমার প্রিয়তম সহধর্মিনীর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে শেষ বারের মত আমাকে আঁকড়ে ধরে তার আহাজারি।৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন মায়ার বাঁধন একটু বেশী।খুব মনে পড়ছে কত আনন্দ,বেদনা,ভালবাসা দিয়ে গড়া ছিল আমাদের সংসারট।ছেলে মেয়েরা সবাই বাইরে, কেউ লেখাপড়া,কেউ চাকুরি থেকে আসবে শেষবারের মত তাদের প্রিয় বাবার মুখটা দেখতে।আমারও খুব ইচ্ছা করছে আমার খোকা আর খুকির প্রিয় মুখগুলো দেখতে।মৃত্যু পর তোমরা যেমন আমার লাশ দেখছো তেমনি আমি ও তোমাদের দেখতে পারছি কিন্তু কিছু বলার বা আবেদনের সুযোগ আমার আর নাই সেতো হারিয়ে গেছে মরণকে আলিঙ্গন করার সাথে সাথেই.........

..................... কিন্তু সবাই কেন এত তাড়াতাড়ি করছে?কেউ বলছে এত দেরি কর না আবার কেউ বলছে আসুক না সন্তানেরা।হায় বিধি, নিয়ম নাকি যত তাড়াতাড়ি লাশ দাফন করা যায় ততই লাশের জন্য ভাল।জীবনের এই শেষ বেলায়ও আমরা নিয়মের বেড়াজালেই বন্দি।ঐ যে দূর থেকে আমার প্রিয় আপার কান্নার তীব্র ধ্বনি ভেসে আসছে।আহা কত ভালবাসতি তোর এই ছোট ভাইকে।আপা তোর মনে আছে আমি যে তোর কোলে পিঠে চড়েই মানুষ হয়েছি,কত দিন তোর কাছে ঘুম পাড়ানীর গান শুনতে ঘুমিয়েছি।তোর যেদিন বিয়ে হয়েছিল তখন আব্বা আর তোর বরের উপর খুব রাগ হয়েছিল আমি খুব কেঁদেছিলাম।আজ এই শেষ বিদায় ক্ষণে তোর কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না রে আপা বুকটার মধ্যে কেন জানি ফেটে যাচ্ছে।

............... সারা বাড়িময় মানুষে ভরা কিন্তু কেন জানি কেউ আমার পাশে একটু বসছে না।মুখ ঢেকে রেখেছে আর একজনের পর একজন এসে দেখে যাচ্ছে।তোমরা আমার মুখ ঢেকে রেখেছো কেন মৃত মানুষ দেখতে বুঝি কষ্ট হয়।হায় ঐ অন্ধকার জগতে যাওয়ার আগেই তোমরা আমার মুখ ঢেকে অন্ধকার জগতের সাধ পাইয়া দিচ্ছো।সবাই নানা আয়োজনে ব্যস্ত,এ আয়োজন আমার ঐ জগতে যাওয়ার।আমাকে গোসল করানোর জন্য কেউ গরম পানি,কেউ নিমের পাতা আর কেউ গোসলের জায়গা তৈরিতে ব্যস্ত।শেষ গোসল বলেই হইতো এতো আয়োজন।বাঁশ কাটার শব্দ কানে ভেসে আসছে ঐদিকে কবর খুঁড়াও প্রায় শেষের পথে।কবর খুঁড়া হয়েছে কম বা বেশি না ঠিক সাড়ে তিন হাত করে।হায় কত জমি,সম্পদ আর আজ আমার এই বিদায় বেলায় মাত্র সাড়ে তিন হাত।অথচ এই মৃত মানুষটি যখন তোমাদের মাঝে ছিল তার কত না স্বপ্ন ছিল, ছিল ধন সম্পদ,ছিল স্ত্রী সন্তান গাড়ি বাড়িসহ নানা উপায় উপকরণ।আর আজ সবই পেছনে ফেলে মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরেই হবে তার আবাস স্থল......

............... কে এমন মায়াভরা কণ্ঠে বাবা বলে ডাকছে?ওই তো আমার প্রিয় খুকি আসছে।মাগো এমন ভাবে কেদ না তোমার কান্না যে আমার সহ্য হচ্ছে না।সেই তোমার জন্ম থেকে আজ অবধি তোমার মান অভিমান হাসি দিয়েই যে আমার শূন্য জীবনটা পূর্ন ছিল।তোমার সামান্য মন খারাপই যে তোমার এই বাবার মনকে বিষাদে ভরিয়ে দিতো।খুব ইচ্ছা করছে তোমাকে একটু খুকি বলে ডাকি।কিন্তু কি করবো মা আমি যে তোমাকে ডাকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছি,মৃতরা যে ডাকতে পারে না আর ডাকলেও যে তুমি শুনতে পারবে না.........

............ ঐ যে ছেলেরা আসছে।বাবাকে নিয়ে তাদের কত স্বপ্ন,কত আশা,কত শখই না ছিল তাদের আগামীর দিনগুলো নিয়ে।কিন্তু সব আশাকে পেছনে ফেলে আজ চোখের জলে বিদায় জানাতে হচ্ছে তাদের এই প্রিয় বাবাকে।সব স্বপ্নই আজ পরপারের ঐ ডাকের কাছে নিরব হয়ে গুমরে কেঁদে ফিরে যাচ্ছে......

............ গরম পানি আর নিম পাতা দিয়ে ওরা কত যত্ন করে আমার এই শেষ গোসল দিচ্ছে কিন্তু এত তাড়াহুড়া করছো কেন?সারা জীবন রঙ্গীন রঙে রাঙ্গানো এ জীবনের জন্য নানা রঙ্গের কাপড় এনেছো কিন্তু আজ কেন ওরা আমার জন্য সাদা কাপড় এনেছে?এর নাম নাকি কাফনের কাপড় আর এটা নাকি মৃতদের কাপড়, এদের নাকি অন্য কাপড় পরা মানা।আতর গোলাপ দিয়ে সাজিয়ে আহা কত যত্নে করে খাটিয়ার তুলিয়া আমার ছেলেরা তাদের পিতার লাশ কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে আর দোয়া পড়ছে।চারিদিকে অনেক মানুষ।জানাযার নামাজ শুরু হয়েছে।কিন্তু আজ এ নামাজ এতো সংক্ষিপ্ত কেন,কেন তোমরা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছো?

............ সবাই আমাকে ধরে ঐ খুঁড়ে রাখা সাড়ে তিন হাত কবরে নামাচ্ছে আমার ছেলেরা কিন্তু আমার প্রিয় খুকিটা কই, আমার প্রিয়তমা স্ত্রী তাকে তো দেখছি না।তবে কি তারা কেউ আমার সাথে যাবে না,কেউ না। ওরা আমাকে কবরে রেখে কেন উঠে যাচ্ছে?উঠে গেল কিন্তু আবার কেন কবরের উপর বাঁশের চাটায় দিচ্ছে?আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে আসছে চারিদিক কিন্তু এখনো তো দিনের আলো নিভে যাইনি।আমি কবরে মধ্যে থেকেই কবরের উপরে মাটি ফেলার শব্দ পাচ্ছি তাহলে কি তোমরা আমাকে একা রেখে যাচ্ছো? ক্রমেই ওদের পায়ের আওয়াজও কমে আসছে।তবে কি তোমাদের সাথে সকল হিসাব শেষ? আমি চোখে আর কিছু দেখতে পারছি না চারধারে খালি নিকষ কালো অন্ধকার।এখন খুব মনে পড়ছে প্রিয় সহধর্মনীর কথা,মনে পড়ছে আমার খুকির চাঁদ মুখটি কিন্তু কেউ আমার পাশে নাই।এই জীবিত মানুষ সহ্য হলেও তাদের মৃত মানুষকে নয়।হায়রে দুনিয়া।শুধু একাকীত্বের বাঁধনে তোমরা আমায় বেঁধে রেখে গেলে।ইয়া আল্লাহ কি এক কঠিন পরীক্ষা............

বি.দ্রঃ কাল্পনিক কিন্তু আজ অথবা কাল এর মত বাস্তবতা আর নাই...... সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাই না এ মন তবু চলে যেতে হয়......

বিষয়: বিবিধ

১৭০০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

365290
১১ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০২:৩৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
১২ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:০০
303140
বিবেকবান লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ
365367
১১ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:০৮
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : Good Luckআসসালামু আলাইকুম

এমন লিখা লিখার কি দরকার, যা পড়লে কাদতে হয়?? Crying

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের সহিত মৃত্যু বরন করার তৌফিক দিন,
আমিন
১২ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:০১
303141
বিবেকবান লিখেছেন : আমীন
365518
১২ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আপনার নামের সাথে লেখাটির যথার্থতা রয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File