মানবতার গন্তব্য কোথায়।হারিয়ে যাওয়া নাকি আবার ফিরে আসা............

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৩২:৪০ রাত

…………………. মানব জীবন চলে কোন না কোন দর্শন বা আর্দশকে ভিত্তি করে।যেমন আমাদের এ সমাজে কেউ বিশ্বাস করে আস্তিকতায় আবার কেউ নাস্তিকতায়(সংখ্যাই অবশ্য কম),আবার কেউ পুঁজিবাদে নয়তো বা সমাজবাদে,অন্যদিকে কেউ বা মৌলবাদি আবার কেউ বা যৌনবাদি আর এ দু গ্রুপের মধ্যে আছে বেশ কিছু সংখ্যক মৌনবাদি।তবে কথা কিন্তু একটাই কোন দর্শন ছাড়া জীবন বিশেষ করে মানব জীবন চলতে পারে না।তবে বিপদের কারণ হয় তখনই যখন দর্শন দ্বারা নয় বরং জীবনের ক্ষুদ্র চাহিদা দ্বারা জীবন পরিচালিত হয়।বর্তমান তরুণ সমাজের সাথে কথা বললে হতাশ হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে বৈকি।তাদের চিন্তার জগতে শুধুই আমি,তুমি,আমিত্ব,ক্যারিয়ার,গঠন মোটা অংকের বেতন ইত্যাদির মধ্যে জীবনের সফলতার সংজ্ঞা নিবদ্ধ করে রাখার প্রতিযোগিতা।

.................. ভারতের প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী তাঁর “দি ইন্টিমেট এনিমি” নামের রচনায় প্রশ্ন তুলেছেন সত্যিই কি আমাদের এই মহাদেশের দেশগুলো স্বাধীন যারা সবে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে।নন্দীর জবাব না।তাঁর মতে শারীরিক উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার চেয়ে মনোজগতের মুক্তি অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।আজও এদেশগুলো থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরও ঔপনিবেশিক শক্তির আদর্শ,ভাবজগৎ,সংস্কৃতি পরিত্যক্ত সমাজের উপর আধিপত্য বজায় রেখেছে।তাইতো মাগার বৃটিশ পাকিরা চলে গেলেও তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষা,সংস্কৃতি,রাজনৈতিক ব্যবস্থা বহাল তবিয়াতে আছে কারণ কে না চাই জনগণের মাথার উপর কাঁঠাল ভেঙ্গে খেতে।নব্য বৃটিশ আজও আছে মননে,চেতনায়,ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপত্রে............

.................. এখন আর কেউ সমাজের নাড়ির সাথে সম্পৃক্ত পেশাগুলোর নিজেদের জীবনকে জড়াতে চাই না।যেমন শিক্ষা বা সামাজিক সংগঠনসহ দেশের সাধারণ মানুষের সাথে সম্পৃত্ত পেশাগুলো।সবাই চাই বড় কোন ব্যাংক বা বড় কোন কোম্পানিতে যুক্ত হয়ে নিজের ভাগ্য রচনা করতে।পুঁজিবাদের যে মূল থিম সেটা ধীরে ধীরে আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে।

.............................. একটি সময় ডারউইনের survival of the fittest এর বাণী প্রচার করে বৃটিশসহ ইউরোপের দেশগুলো পাইকারী দরে আফ্রিকা এবং এশিয়াসহ ল্যাটিন আমেরিকার কালো মানুষগুলোকে হত্যা,বন্দি ও ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতা কলে পৃষ্ঠ করেছিল।হারুন ইয়াহিয়ার লেখায় ডারউইন বাদের অভিশপ্তরুপ সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।আজও আমাদের চারপাশে সেই একই স্লোগান শোনা যাচ্ছে।হায়রে ইতিহাস ভোলা জাতি।আমরা নাকি এখন জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ।আর এ কথাও প্রচলিত যে যুদ্ধ আর প্রেমে নাকি কোন বৈধতার বা অবৈধতার বিষয় নেই।ফলে নিজের ভাগ্য রচনা করতে গিয়ে আজ অন্যর বারটা বেজে যাচ্ছে আর অন্যের বারটা বাঁজাতে গিয়ে আমরা দেশটার বারটা বাজিয়ে দিচ্ছি।

..................... বর্তমানে আমাদের স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি স্লোগান বেজে চলেছে আর তা হল মানুষ নাকি অন্যান্য পণ্যের মত একটি পণ্য।সুতারাং কিভাবে মার্কেটে নিজেদেরকে বিক্রি করা যায় সেই সবক এখন আমাদের শিক্ষালয়ে দেওয়া হচ্ছে।আহা কি অপূর্ব নিষ্ঠুর ধারণা।অবশেষে সৃষ্টির সেরা জীবও পণ্যের বাতায়ন থেকে পলায়ন করে রক্ষা পেল না।আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে জেনে বা না জেনে আমাদের শিক্ষালয়ে আমাদের এই মানব জীবনকে বাজারে বিক্রির নানা কোলা-কৌশল শেখানো হচ্ছে।এসব দেখে মনে হয় শিক্ষালয় এখন আর শিক্ষার জন্য নয় বরং বানিজ্যের জন্য।যার ফলে এসকল বানিজ্যিক কেন্দ্র থেকে মানবিক নয় বানিজ্যিক জীবের উদ্ভব ঘটছে আর সেটা লাগামহীন ভাবেই.........

............... আজকের এই গ্ল্যামারময় জগতে সবাই আমরা জেনে বা না জেনে বুঝে বা না বুঝে তাঁর পেছনে ছুটছি।মগজের গ্ল্যামার নয় বরং ছুটে চলছি পোশাকের,চেহারার,পকেটের,চাকুরির,স্বামীর,স্ত্রীর আর বাড়ির গ্ল্যালামারের পেছনে।এসব দেখে মনে হয় সেই গানটিঃ

“এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নয়

মানুষ নামের মানুষ আছে

দুনিয়া বোঝাই

এই মানুষের ভিড়ে আমার সেই মানুষ নাই।”

বিষয়: বিবিধ

২৩২৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360672
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৩৩
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনার বাস্তবসন্মত লিখাটা খুব ভাল লাগলো, ধন্যবাদ আপনাকে
০৪ মার্চ ২০১৬ রাত ১০:১৯
299417
বিবেকবান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File