হারিয়ে যাওয়ার মিছিল...... ঢাবি
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০১:০৯:৫৬ রাত
........... আলো ঝলমলে কোন এক দিনে অথবা রাতের কোন এক প্রহরে প্রদীপটির এই ধরাধামে আগমন।জন্মের আর্তচিৎকারে হয়তো দিনের আলোক ছটাকে আর বেশী বাড়িয়ে দিয়েছিল অথবা রাতের নিরবতাকে ভেঙ্গে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়েছিল সবাইকে।তার প্রথম করা কান্নায় হাসি খুশি ও নতুন স্বপ্নে উদ্ভাসিত হয়েছিল গোটা পরিবারটি।এরপর শুরু হল প্রদীপটির যত্ন এবং পরিচর্চা।আশা একদিন প্রদীপটি জ্বলে উঠবে এবং তার আলোকে আলোকিত হবে এ ভুবন,যার আলোক রেখাই ঘুচে যাবে সকল অমানিশার অন্ধকার।জন্মের পর থেকেই জ্বলে উঠার প্রত্যয়ে প্রদীপটির পথ চলা শুরু।হাজারও কষ্ট আর দুঃখকে সহ্য করে যে জনম দুঃখী মা তাকে জন্ম দিল তার মনের সকল ব্যথা মিলিয়ে গেল প্রদীপটির মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে।বাবা স্বপ্নের সারথীর কানে ফুঁকে দিলেন স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আনন্দের আতিশায্যে বাবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রুর ধারা।এরপর দিন যায় রাত যায় প্রদীপটি বড় হতে থাকে।দুরন্তপনা ও দুষ্টামিতে তার যেন গায়ের মাঝে এক অলিখিত শ্রেষ্ঠত্ব।আজ এর বাগানের ফল পেড়ে খাওয়া কাল ওর গাছের রস চুরি করে খাওয়া যেন তার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ালো।তবে নজরুলের মত প্রদীপটিও ছিল লেখাপড়ায় দূরন্ত।তার মেধা,মনন অন্যের মনে সমীহ জাগাতো তাইতো শিক্ষকসহ সকলেই তার এই বাঁদরামিকে ক্ষমার চোখে দেখতো।এই ভাবেই কেটে যাচ্ছিল প্রদীপটি জীবন......
............... স্কুল,মাধ্যমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে ছেলেটি ভর্তি হয় কলেজে।তার শৈশবের দুরুন্তপনা এখন রূপ নিয়েছে মানুষ হওয়ার দৃড় প্রত্যয়ে।লেখাপড়া এবং বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার যাত্রা যেন তার অপ্রতিরদ্ধ্র।দিন যায় মাস যায় প্রদীপটি আস্তে আস্তে কলেজ জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়।আহা কত যে রমণীর বাঁকা চাহনি তাকে ঘিরে থাকে এবং কি যেন বলতে চাই কিন্তু এ মোহ যে বড় কঠিন তাকে তো পেছনে ফিরে তাকালে হবে না সামনে এগিয়ে যেতে হবে।প্রদীপটি স্বপ্ন দেখতে থাকে উচ্চশিক্ষার।শত বাধা ও কষ্ট সহ্য করে প্রদীপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে যাত্রা শুরু হয়।শুরু হয় এক নতুন যুদ্ধ,এ যুদ্ধ যেন নেপোলিয়ান এবং আলেকজান্ডারের চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং।কারণ অসি চালানোর চেয়ে মসি চালানো যে আরো কঠিন,ধবংসের চেয়ে যে সৃষ্টিশীল কাজের পথ আরো বেশী দুর্গম।কিন্তু এ প্রদীপটির জন্ম যে থেমে থাকার জন্য নয় বরং তারুণ্য ভরা তার দু’চোখ আগামীর স্বপ্ন ও দেশ গড়ার মানসে স্বপ্নালু।দুঃখী মায়েদের এ দেশ বড্ড বেশী যাতনার শিকার,শিকার বঞ্চনার ও না পাওয়ার বেদনায়।নিজস্ব পরিসরে শুরু হয় প্রদীপটির বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আগামী বিনির্মানের স্বপ্নে বিভোর থাকার।শত সমস্যা পরও প্রদীপটির কাছে স্বপ্নের তীর্থ স্থান ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার।
..................... ক্রমেই দিন ঘনিয়ে আসছে আর প্রদীপটির স্বপ্নগুলো ডানা মেলতে শুরু করছে।অবশেষে হাজারও মেধাবী ছাত্রের মাঝ থেকে প্রদীপটি তার স্থান করে নেয়।শুরু হয় নতুন পথের যাত্রা।শত সহস্র বাধা ও সমস্যার জঞ্জালকে পায়ে ঠেলে প্রদীপটি স্বপ্ন দেখতে থাকে আগামীর নতুন সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের।সে স্বপ্ন এ সোনার দেশকে সোনায় ভরিয়ে তোলার,সে স্বপ্ন হল সকল বঞ্চনার নিরাময়র,সে স্বপ্ন হল স্বাধীনতার আরাধ্য সূর্যটাকে দুখিনী দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার,সে স্বপ্ন ছিল দেশকে বিশ্ব মাঝে তুলে ধরার।প্রদীপটি বেছে নেয় মার্কেটিং বিষয়টিকে,যাত্রা শুরু হয় নতুন স্বপ্নের।মায়ের আকুতি ভরা চোখ,বাবার অনুপ্রেরণামূলক বাণী এবং বোনের দুষ্টমী ভরা কথায় প্রদীপটিকে পথ দেখায় জীবনের চোরাগলিতে।
............... টিএসসি থেকে শুরু করে শ্যাডো,ডাকসু থেকে শুরু করে বাঁধন নানা কার্যক্রমে ছিল প্রদীপটির সবর পদচারণা।ক্যাম্পাসের সাথে যেন মিলেমিশে একাকার হয় প্রদীপটি সকল হাসি-কান্না,চাওয়া-পাওয়া ও কল্পনার রঙ্গীন জগতটি।ক্লাস,প্ররীক্ষা এবং স্যার-ম্যাডামদের দেওয়া নানা কাজ যেন প্রদীপটিকে ব্যস্ততার মাঝে ডুবিয়ে রাখে।তারপরও সময় পেলেই আড্ডা দেওয়া এবং মাঝে মাঝে আড়চোখে রমণীকুলের দিকে চোখাচুখি চলতে থাকে।স্বপ্ন বড় হয় পথ চলাও থেমে থাকে না নতুন ভোরের স্বপ্নে বিভোর প্রদীপটি যেন জ্বলে উঠার প্রত্যয়ে নিয়ে তীব্র ভাবে সামনে ধাবমান।কিন্তু হঠাৎ কালবৈশাখীর দমকা হাওয়ায় প্রদীপটি আলোক হারা হয়ে পড়ে।ঘাতকদের নিরব ঝাপটায় প্রদীপের আলোক রশ্মি যেন মীয়মান হয়ে যায়.........
............... হারিয়ে যায় প্রদীপটির স্বপ্ন।তারপর শুধুই হাহাকার...... মা তার কলিজার প্রদীপটিকে হারিয়ে পাগলপারা যেন রবি হারা শশী,বাবার উদ্বিগ্ন চোখে আজ আর অশ্রু নেই আছে শুধু বেদনার ছাপ,ছোট বোনটি আর তার দুষ্টমী ভরা কণ্ঠে স্বপ্নের কথাগুলো আর বলে না বরং বোবা হরিণীর মত হয়ে গেছে।রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে চাঁদের আলো যেমন কোন পথ হারা পথিককে পথ দেখায় তেমনি ভাবে প্রদীপটি ঘিরে বেঁচে ছিল পরিবারটি কিন্তু হঠাৎ ঝাপটা হাওয়ায় যেন নিভে গেল পরিবারটির স্বপ্ন,নিভে গেল একটি স্বপ্নবাজ প্রদীপ জ্বলে উঠার প্রত্যয়,নিভে গেল গাঁয়ের দুরন্ত ও অদম্য মেধাবী একটি স্বপ্নালু প্রদীপ্ত জীবন।
........................ কাঁদলো বন্ধুরা,কাঁদলো শিক্ষক,কাঁদলো জনম দুঃখী মা,কাঁদলো বাবা,কাঁদলো বোন শুধু কাঁদলো না জাতির বিবেক।কারণ সে তো অনেক আগেই নানা দুঃখ বেদনায় পাথর হয়ে গেছে।রক্তের দাগ,চোখের জলের ছাপ তার হৃদয়কে আর নাড়া দেয় না।বরং এক অজানা অচেনা কারণে বোবার মত স্থবির হয়ে গেছেআ।কিন্তু আর কতদিন জাতির বিবেক চুপ করে থাকবে,আর কত প্রদীপ জ্বলে উঠার আশায় থেকে নিভে যাবে,আর কত মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন অকালে ঝরে যাবে।প্রশ্ন আছে উত্তর নেই.........
............ হয়তো এভাবে চলতে থাকবে আবার কোন প্রদীপ জ্বলার প্রত্যয়ে নিয়ে এমনি করে নিভে যাবে।এরপর প্রতিবাদ হবে,আন্দোলন হবে ভাংচুর হবে কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার মিছিল থেমে থামবে না।এটা কি নিয়তি নাকি হারিয়ে যাওয়ার রীতি।প্রশ্ন আছে কিন্তু জবাব নাই........
বিষয়: বিবিধ
১২৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন