জয়া আহসানের ন্যাক্কারজনক অভিনয়কে অবলম্বন করে লেখা কিভাবে আমরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বলয়ে হারিয়ে যাচ্ছি.
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৪৩:০৮ সকাল
................ ষাট ও সত্তর দশকের সময় হতে ৯০ এর দশক পর্যন্ত বাংলা সিনেমার একটি পরিশীলিত রুপ ছিল এবং সমাজের চিত্র ফুটে উঠতো।শাবানা,ববিতা,রোজিনা,সুচরিতা তাদের অভিনয় দেখলে sex এর symbol মনে হত না বরং তারা ছিল গ্রাম বাংলার চিরায়ত নারীদের প্রতিচ্ছবি। আমাদের সংস্কৃতির নানারুপ যেমন মানব-মানবী মধ্যে বিদ্যমান চাওয়া পাওয়া,গ্রাম্য নারীর জীবন চিত্র,ভাল লাগা, ভালবাসার নানা রুপ ফুটে উঠতো তাদের শৈল্পিক অভিনয়ের যাদুমন্ত্রে।ভাত দে,রাঙ্গা ভাবী,বেদের মেয়ে জোসনা,বাবা কেন চাকর ইত্যাদি সিনেমার মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি,বৈষম্য ও অবিচার উঠে আসতো যা মানুষের বিবেককে নাড়া দিতো। কিন্তু ৯০ এর পর আমাদের দেশের সিনেমায় অভিনয়ের নামে যে ধরনের ভাড়ামি হচ্ছে তাঁতে বোঝা যায় জাতির মগজে পচন ধরেছে,স্থবিরতা বিরাজ করছে সৃজনশীল কর্মে।
............... বর্তমানে সিনেমা মানেই sex, violence and action।হালের রুহি, মাহি,ফারিয়া ,জয়া আহসান শিল্প গুনে নয় sex এর symbol হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্টিত করতে মরিয়া।টালিউড বা বলিউড বছরের পর বছর চেষ্টা করে mind setting industry (সাংস্কৃতিক সামাজ্যবাদ) গড়তে পারিনি সেই কাজ আজ এই খ্যাতি পাগল নায়িকারা ফালতু কিছু সিনেমার(আশিকী,অগ্নি) মাধ্যমে খুব সহজে সমাধান করে দিচ্ছে।এরা এখন দেশের ঠাকুর ফেলে বিদেশী কুকুরের পেছনে ছুটছে।
............ জন মেকুলের সেই অমোঘ বাণী আমারা এমন এক প্রজাতির মানুষ চাই যারা রক্তে মাংসে ভারতীয় কিন্তু মানসিকতায় বৃটিশ।একই ভাবে এ সকল গিনিপিগদের মন মগজে খ্যাতির মোহ এমন ভাবে চেপে বসেছে যে এরা এখন রক্তে মাংসে বাংলাদেশী হলেও মানসিকভাবে টালিউড বা বলিউড মার্কা। ফলে ক্রমে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রবেশ ঘটছে এবং আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
............ সংস্কৃতির মধ্যেই অন্তর্নিহিত থাকে কর্তৃত্ব বা আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ শক্তি।কিন্তু বিশ্বায়নের নামে খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে পশ্চিমী ঝোড়ো হাওয়া এবং টালিউড বা বলিউডের খোলামেলা সংস্কৃতি তাও আবার এদেশীয় নায়িকাদের হাত ধরে।আমাদের অবস্থা এখন জগাখিচুরি মার্কা আমারা Neither Eastern nor Western।
............ সিনেমাকে বলা হয় সমাজের প্রতিচ্ছবি কিন্তু বর্তমান সিনেমার নামে যা চলছে তাকে কোন ভাবে সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন নয় বরং mind setting industry (সাংস্কৃতিক সামাজ্যবাদ) বলা যায়।তরুণ সমাজ ভেসে যাচ্ছে এ নিম্নমানের সিনেমা দ্বারা যার প্রমাণ পাওয়া যায় পত্রিকার পাতা খুললে।সস্তা মোহ আজ পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে গ্রাস করছে।ভাল সিনেমা যে কিছু হচ্ছে না টা নয় কিন্তু ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই সমাজের সাথে সম্পর্কহীন ও শেকড় ছাড়া।
............ রাজনৈতিক ভাবে পরাধীন হলে সে জাতি সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করতে পারবে আশা করা যায়। কিন্তু সাংস্কৃতিক ভাবে যদি কোন জাতির মগজ পরাধীনতার স্বীকার হয় তাহলে তার মুক্তি লাভের আশা করা আর মরুভূমিতে পানি পাওয়ার আশায় থাকার মতই বাতুলতা বই আর কিছু না।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"নাটক-সিনেমা মানেই নিষিদ্ধ জগত"-
এমন ধারণা ও প্রচারের মাধ্যমে আমরা ঐ জগতে ভালো কিছু করার সম্ভাবনাও ভেবে দেখতে রাজী হইনি, কিন্তু ঐসব "নিষিদ্ধ" বস্তু থেকে মজা লুটতেও কার্পণ্য করিনি!
ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে!!
এখন হা-হুতাশ করা-ই সার!!
সংস্কৃতির ময়দান শূণ্য থাকেনা, ভালো কিছু না থাকলে মন্দটা থাকবেই!!
ভালো দিয়ে মন্দকে প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্যতার সাথে চেষ্টা করা ছাড়া এসব মিঠে-তেতো কথায় কাজ হবেনা!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন