পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে ট্রাইবুনালের সাবেক বিচারপতি এ কে এম জহির!!
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৮:৩৬ দুপুর
১৯৭১ সালে সংঘঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ শে মার্চ মহাজোট সরকার পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপন করে। ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান করা হয় সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে। সদস্য করা হয় হাইকোর্টের অপর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির ও সাবেক জেলা জজ বিচারক এ কে এম জহির আহমেদকে।
যুক্তরাজ্যের “দ্যা ইকোনোমিস্ট” ও বাংলাদেশের “দৈনিক আমার দেশে”এ আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ স্কাইপি কথোপকপোন প্রকাশিত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। এর আগে গত ২৮ শে আগস্ট ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন ট্রাইবুনাল-১ এর অন্যতম সদস্য বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ। বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপি আলাপে বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। সে আলাপচারিতায় স্পষ্ট হয়েছে যে, এ কে এম জহির আহমেদ আইনমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এ কে এম জহির আহমেদ যাতে এই বিষয়ে মিডিয়ার সামনে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখায় সে জন্য তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে বলে স্কাইপি আলাপে মন্তব্য করেন বিচারপতি নাসিম।
১লা সেপ্টেম্বর স্কাইডি আলাপে (যা ১১ ডিসেম্বর ২০১২ “দৈনিক আমার দেশ”এ প্রকাশিত হয়েছে) বিচারপতি নাসিম, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে বলেছেন যে, তিনি বিচারক এ কে এম জহির আহমেদকে সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে তার পদত্যাগের আসল কারণটা তিনি কোথাও প্রকাশ না করেন। “আইনমন্ত্রীর চাপে পদত্যাগ করেছেন” এমন তথ্য প্রকাশ হলে জহিরের আইন কমিশনে চাকুরী হবে না বলেও স্কাইপি আলাপে আশঙ্কা করা হয়। এ কে এম জহির আহমেদ মেডিকেল ছুটি নিয়েছেন এমনটাই সবাই যেন জানে, তাকে এরূপ পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান বিচারপতি নাসিম। পতদ্যাগে বাধ্য হয়েছেন এমন কথা মিডিয়ায় এলে বিপদে পড়বেন জহির, এমন মন্তব্য করেছেন ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন। এর চেয়ে নিরব থেকে আইন কমিশনের অফার গ্রহণ করাই যৌক্তিক বলে স্কাইপি আলাপে বিচারপতি নাসিমকে জানান তিনি।
স্কাইপি কথোপকপোনে নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ হওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পদত্যাগী বিচারক এ কে এম জহির আহমেদ। উপর মহলের নির্দেশেই তিনি পদত্যাগ করেছেন- এমন তথ্য স্বীকার করে সাম্প্রতিক তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন। তবে আইন কমিশনের চাকুরীর লোভে নয়, উপরের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্যই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে প্রতিবেদককে জানান। বিশেষ করে সাঈদীর মামলায় পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্য স্বাক্ষ্য হিসেবে নেয়া হবে কিনা, এই বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে মতোবিরোধ সৃষ্টি হয় এ কে এম জহির আহমেদ। এ কে এম জহির আহমেদ এই বিষয়ে প্রসিকিউশনের আবেদন গ্রহণ করার পক্ষে ছিলেন না। ট্রাইবুনালে আসামীপক্ষের দেখানো টিভি রিপোর্ট থেকেও তিনি বুঝতে পেরেছেন, এটি পুলিশের মনগড়া। এই বিষয়ে অধিকতর শুনানির পক্ষে ছিলেন জহির। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয়েও দ্বিমত করেছিলেন তিনি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতি নাসিম। পরবর্তিতে বিষয়টি আইনমন্ত্রীকে জানান বিচারপতি নাসিম। এরপরই অনেকটা তড়িঘড়ি করে জহিরকে পদত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এ কে এম জহির আহমেদ পুলিশের কাছে দেয়া ১৬ জনের বক্তব্যকে স্বাক্ষ্য হিসেবে নেয়ার আদেশকে নজিরবিহীন হিসেবে উল্লেখ করেণ। সারা পৃথিবীতে এরকম কোথাও হয়নি বলে মন্তব্য করেন।
মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রেও বিচারপতি নাসিম, এটিএম ফজলে কবির ও তার কোন পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান এ কে এম জহির আহমেদ।
এ কে এম জহির আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, ট্রাইবুনালে বহাল থাকলে যত বাঁধাই আসুক, তিনি ন্যায্য বিচার করতেন। বিভক্ত রায় হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শুধুমাত্র হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছেন বিচারপতি এ কে এম জহির আহমেদ।
আইন কমিশনের চাকুরীর টোপ দেয়া হয়েছে বলে বিচারপতি নাসিম স্কাইপি আলাপে যে মন্তব্য করেছেন এই বিষয়ে জহির বলেন, এটা জঘন্য মিথ্যাচার। এতদিন নিজেকে বিতর্কমুক্ত রাখতে মিডিয়ার সামনে অনাগ্রহ ছিলো বিচারক এ কে এম জহির আহমেদের।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন