ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সোহেল মাহমুদ ..............অসাধারণ একটি লেখা....।

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:০১:১৬ রাত

ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি

সোহেল মাহমুদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের কট্টরপন্থী ও মহাজোটের বাম শরিকদের আবদারকে পাত্তা না দিয়ে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ও রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ বহাল রেখেছেন। জানা যায়, সংবিধান সংশোধনের বিলটি মন্ত্রিপরিষদে আলোচনাকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার বিরোধিতা করলে প্রধানমন্ত্রী তাকে বেশ কড়া ভাষায় জবাব দেন (পত্রিকার রিপোর্ট)। উল্লেখ্য, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের একজন শীর্ষ নেতা। এই ফোরামের নেতারা কিছু দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন, সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হলে তা নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তারা এ জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দিয়েছিলেন। আবার বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতাদের মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অবশ্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর এসব নেতাকে আর মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে না। মহাজোটের বাম শরিকরা হম্বিতম্বি করে লোক দেখানো একটা বিক্ষোভ মিছিল করলেও সংসদে ভোটাভুটির আগে ঠিকই সংবিধান সংশোধনীর পক্ষে কয়েক মিনিটের মাথায় সমঝোতায় পৌঁছেন এবং সংশোধনীর পক্ষে ভোট দেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ের বাইরে তাদের আকাঙ্ক্ষার কোনো মূল্য নেই এবং এসব জনবিচ্ছিন্ন বামদের জন্য বিকল্প কোনো পথও খোলা নেই। নীতি ও আদর্শের প্রতি যদি তাদের সত্যিই পূর্ণ কমিটমেন্ট ও সৎ সাহস থাকত, তাহলে তাদের কেউ না কেউ মহাজোটের পার্লামেন্টারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংবিধান সংশোধনীর বিপক্ষে ভোট দিত এবং পরিণতিতে পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারাতে হতো। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। সুতরাং বামদের মতাদর্শগত মনোবল যে দুর্বল তা সহজেই আঁচ করা গেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু দিন আগে এক সভায় বলেছিলেন, ‘পরিস্খিতির কারণে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখতে হচ্ছে।’ সংসদীয় কমিটি সংবিধান সংশোধনী বিলের ওপর রিপোর্ট পেশকালে উল্লেখ করে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষত বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়ে তাদের ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হয়েছে। এখন কারো এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাবে একমাত্র শেখ হাসিনার ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। শেখ হাসিনার কথায় মনে হচ্ছে, তিনি এ মুহূর্তে কৌশলগত কারণে হয়তো মহাজোট সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন না এবং জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করতে চান না। তবে তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে শক্ত অবস্খান নিয়েছেন এবং এ জন্য সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্খা’ তুলে দিয়ে তার স্খলে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তিনি এ কাজটি না করলেও পারতেন। কারণ বিগত ২৫ বছরে বিষয়টি নিয়ে দেশে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও জাতির কাছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিবর্তনের কোনো অঙ্গীকার করেনি। তার মানে দেশবাসীর কাছ থেকে কোনো ম্যান্ডেট না নিয়েই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্খা’ বাতিল করা কি কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী নয়? এটা কি নির্বাচনী ওই অঙ্গীকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? বস্তুতপক্ষে যেখানে আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস বাদ দেয়া হয়েছে, সেখানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা বা না রাখায় বিশেষ কিছু আসে-যায় না। ঈমানদার লোকদের পক্ষে এ বিষয়টি বুঝতে পারা কোনো কঠিন কাজ নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরস্পর সাংঘর্ষিক বিধান সংবিধানে সংযোজন করে সবাইকে খুশি করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। এমনকি কমিটির মুখপাত্র বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও হয়তো ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শমতো সুপারিশ সংবলিত রিপোর্টটি জমা দিয়েছেন। মহাজোটের বামপন্থী অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও সাম্যবাদী দল যে খুশি নয় তা তারা বলেও দিয়েছিল। তথাকথিত সুশীলসমাজের বাছাই করা বুদ্ধিজীবী, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতারা সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তারা বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ও রাষ্ট্রধর্ম পরস্পরবিরোধী। আবার জাতীয়তাবাদী বলয়ের কেউই যে সুরঞ্জিত বাবুদের সুপারিশ ও সংবিধানের চূড়ান্ত সংশোধনীতে বিক্ষুব্ধ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের ইসলামি মূল্যবোধ ও আদর্শে বিশ্বাসী কোনো দল বা আলেম সমাজের তো এটা মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি আওয়ামী ওলামা লীগও আল্লাহর উপর অবিচল বিশ্বাস ও আস্খা তুলে দিয়ে তার স্খলে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনের সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানিয়েছে।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে গঠিত সংসদীয় কমিটি সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করার আগে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করে। অবশ্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে আহ্বান জানানো সত্ত্বেও তারা আলোচনায় অংশ নেয়নি। আরেকটি বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে আলোচনায় আদৌ ডাকা হয়নি। সুতরাং এটা স্পষ্ট, দেশের অর্ধেক নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী দু’টি দলের মতামত ছাড়াই সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপর দিকে জনগণের প্রতিনিধি নয়, এমন সংগঠনের সাথেও কমিটি ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করেছেন। এদের মধ্যে আছে সংবাদপত্রের সম্পাদক, তথাকথিত সুশীলসমাজের বাছাই করা বুদ্ধিজীবী, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ইত্যাদি। কমিটি দেশের ইসলামি মূল্যবোধ ও আদর্শে বিশ্বাসী কোনো দল বা আলেম সমাজের কারো সাথে কোনো আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি বলেই দেখা যাচ্ছে। সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করার আগে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকেই জনমত যাচাইয়ের প্রয়োজন ছিল। এমনকি গণভোটেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সরকার বেশ তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, তার দল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তারা আবার সুযোগ পেলে ১৯৭২ সালের সংবিধানে হুবহু প্রতিস্খাপন করবে। এবারের মতো আর কম্প্রোমাইজ করা হবে না। আশরাফ সাহেব দলের আসল লক্ষ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তার কথায় এটা পরিষ্কার, জনগণের ভয়ে তারা বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখেছেন, সামনে আর তারা কসুর করবেন না।

ধর্ম নিয়ে এরূপ ধোঁয়াশে নীতি আওয়ামী লীগের নতুন নয়। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ধর্ম ও দর্শন নিয়ে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে দিক পরিবর্তন করেছে এবং জনগণকেও অস্পষ্টতায় রেখেছে। একবার ইতিহাসের পাতায় নজর দেয়া যাক।

(১) ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সম্মেলনে প্রথম মহাসচিব সামসুল হক ‘মূল দাবি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা পাঠ করেন। এতে বলা হয় : ‘পাকিস্তান খেলাফত অথবা ইউনিয়ন অব পাকিস্তান রিপাবলিকস বৃটিশ কমনওয়েলথের বাইরে একটি সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্র হবে। ...রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর প্রতিভূ হিসেবে জনগণের উপর ন্যস্ত থাকবে। গঠনতন্ত্র হবে নীতিতে ইসলামী, গণতান্ত্রিক ও আকারে রিপাবলিকান।’ (দ্রষ্টব্য : বদরুদ্দীন উমর, ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, পৃষ্ঠা-২৪১)। দলটির ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের ১ নম্বর ধারায় দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন শক্তিশালী করতে হবে। ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়,১

(২) ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফন্সন্টের ২১ দফা কর্মসূচির অন্যতম দফা ছিল : ‘কোরআন-সুন্নাহর মৌলিক নীতির খেলাফ কোন আইন প্রণয়ন করা হইবে না এবং ইসলামী সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবনধারণের ব্যবস্খা করা হইবে।’ (দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৭০)।

(৩) ১৯৫৫ সালে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নাম পরিবর্তন করে ‘আওয়ামী লীগ’ করা হয়। ওই বছর মে মাসে প্রচারিত এক সাংগঠনিক প্রচারপত্রে দাবি করা হয় ‘মুসলমানগণ যাহাতে নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত ইত্যাদি শরিয়তসম্মত কাজে অবহেলা না করেন এবং সকল শ্রেণীর নাগরিকগণের চরিত্র গঠনের জন্য প্রচার (তাবলিগ) বিভাগ খুলিতে হইবে। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও অনুরূপ ব্যবস্খা করিতে হইবে।

(৪) ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করা হয় এবং তার কোনো দফায় সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো কথা বলা হয়নি।

(৫) ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের পেশকৃত ঐতিহাসিক ১১ দফার কোথাও সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো কথা বলা হয়নি।

(৬) ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করে, ‘কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাস করা হবে না।’ নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করা হয় তাতে উল্লেখ ছিল, ‘পাকিস্তানের মুসলমানদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে গড়ে তোলা হবে।’ ওই খসড়া সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছিল (১) কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না, (২) মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি নৈতিকতা উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

(৭) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণে সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো কথা বলা হয়নি।

(৮) ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো কথা বলা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল : “বাংলাদেশের জনগণ (১৯৭০-এর নির্বাচনে) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যেই ম্যান্ডেট প্রদান করিয়াছে সেই ম্যান্ডেট অনুযায়ী আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আমাদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করিয়া পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার ঘোষণা প্রদান করিতেছি।” (দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, ১৯৮২, তৃতীয় খণ্ড : স্বাধীনতা ঘোষণার লক্ষ্য)।

(৯) ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন জনগণের উদ্দেশে যে বেতার ভাষণ দেন তাতে বলেন : ‘বাংলাদেশের নিরন্ন দু:খী মানুষের জন্য রচিত হোক এক নতুন পৃথিবী যেখানে মানুষ মানুষকে শোষণ করবে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক ক্ষুধা, রোগ, বেকারত্ব আর অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে মুক্তি। গড়ে উঠুক নতুন গণশক্তিকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্খা, গণমানুষের কল্যাণে সাম্য আর সুবিচারের ভিত্তিপ্রস্তরে লেখা হোক জয় বাংলা, জয় স্বাধীন বাংলাদেশ।’ (দ্র: ঐ, পৃ: ৮)।

(১০) ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রবাসী সরকার কর্তৃক জনগণের উদ্দেশে জারিকৃত প্রথম নির্দেশাবলিতে বলা হয় :

“বাঙ্গালীর অপরাধ তারা অবিচারের অবসান চেয়েছে, বাঙ্গালীর অপরাধ তারা তাদের মা-বাপ, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততিদের জন্য অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসার দাবি জানিয়েছে, বাঙ্গালীর অপরাধ তারা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশমত সম্মানের সাথে শান্তিতে সুখে বাস করতে চেয়েছে। বাঙ্গালীর অপরাধ তারা মহান স্রষ্টার নির্দেশমত অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে এক সুন্দর ও সুখী সমাজ গড়ে তুলবার সংকল্প ঘোষণা করেছে। ...আমাদের সহায় পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য। মনে রাখবেন আপনার এ সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, সত্যের সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার দুশমন বাঙ্গালী নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা কাউকে হত্যা করতে, বাড়িঘর লুট করতে, আগুন জ্বালিয়ে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। মসজিদে-মিনারে আজান প্রদানকারী মুয়াজ্জেন, মসজিদগৃহে নামাজরত মুসল্লী, দরগাহ-মাজারে আশ্রয়প্রার্থী হানাদারদের গুলী থেকে বাঁচেনি। ...এ সংগ্রাম আমাদের বাঁচার সংগ্রাম। সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ন্যায়ের সংগ্রামে অটল থাকুন। স্মরণ করুন : আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘অতীতের চাইতে ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই সুখকর।’ বিশ্বাস রাখুন : আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী।” (দ্র: ঐ, পৃ: ১৯-২২)। উল্লেখ্য, এই নির্দেশাবলির শুরুতে লেখা ছিল : আল্লাহু আকবর। শেষ হয়েছে আল কুরআনের দু’টি আয়াত দিয়ে।

(১১) ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে চিঠি দেয়া হয় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। (দ্র: ঐ, পৃ: ৭৬৯)। ওই চিঠিতে স্বাধীনতা ঘোষণা, সরকার গঠন ইত্যাদির কথা উল্লেখ থাকলেও কোনো রাষ্ট্রীয় মূলনীতির কথা ছিল না। ভারত এতে কোনো সাড়া দেয়নি। ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর আবার চিঠি দেয়া হয়। ভারত দ্বিতীয় চিঠিরও জবাব দেয়নি। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় মূলনীতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ভারত সরকারকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়। এতে বলা হয় : “You have shown unflinching support to the principles of democracy, secularism, socialism and a non-aligned foreign policy. …We should like to reiterate here that what we have already proclaimed as the basic principles of our state policy, i.e. democracy, socialism, secularism and the establishment of an egalitarian society. ...Against this background of this community of ideals and principles we are unable to understand why the Government of India have not yet responded to our plea for recognition”. (দ্র: ঐ, পৃ: ৮৯২)

উল্লেখিত ঐতিহাসিক তথ্যগুলো থেকে প্রতীয়মান হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি স্বীকৃতি আদায় এবং ভারতকে খুশি করতে তাজউদ্দিন আহমেদের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে। এতে জনগণের কোনো মতামত ছিল না। আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে এ বিষয়ে কোনো ম্যান্ডেট পায়নি। এমনকি ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন করার পরও গণভোটের আয়োজন করা হয়নি।

১১আওয়ামী লীগ কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু কোনো মৌলিক বিষয়ে তারা জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়। দলের নেতারা মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও নির্বাচনের সময় তারা ঠিকই জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে অপব্যবহার করে। ১৯৪৯ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি দলটি ধর্ম নিয়ে জনগণের সাথে কৌশলী রাজনীতিই করে যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় এলে শেখ হাসিনার মাথায় পট্টি, হাতে তসবিহ, জায়নামাজে বসা ছবি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়? ১৯৯২ সালে শেখ হাসিনা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, ‘ইসলামের সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও সাম্যের বাণী সামনে রেখেই বঙ্গবন্ধু শোষণহীন সমাজ কায়েমের পদক্ষেপ নেন।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ এপ্রিল ১৯৯২)। বঙ্গবন্ধু যদি ইসলামের সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও সাম্যের বাণী সামনে রেখেই শোষণহীন সমাজ কায়েমের স্বপ্ন দেখে থাকেন বা পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার তো আর দরকার থাকে না? সমাজতন্ত্রেরই বা প্রয়োজন কী? ইসলামি দলগুলোর সাথে তো তাহলে আর আওয়ামী লীগের দূরত্ব থাকারও কথা নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান আচরণ বলে ভিন্ন কথা। তাহলে এসবই কি লোক দেখানো?

শেখ হাসিনা এখন বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বিষয়টি একটু খতিয়ে দেখা যাক। সেকুলারিজমের সর্বসম্মত কোনো সংজ্ঞা না থাকলেও রাজনীতি বিজ্ঞানের ভাষায়, যে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে অনুসরণ করে পরিচালিত হয় না, সে রাষ্ট্রকেই সেকুলার রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা হয়। পাশ্চাত্য সেকুলারদের মতে, রাষ্ট্র, শিক্ষাব্যবস্খা, নৈতিকতা ইত্যাদিকে ধর্মের আওতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যারা এ মতের বিরোধী তারা সেকুলারদের মতে পশ্চাৎপদ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অনগ্রসর চিন্তার অধিকারী।

পাশ্চাত্যে চার্চের সাথে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ থেকে সেকুলারিজম একটি আন্দোলন হিসেবে জেগে ওঠে। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল চার্চের কর্তৃত্ব থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা। খ্রিষ্টধর্মে মানুষের সামাজিক বা রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের বিধিবিধান নেই। রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য খ্রিষ্টীয় চার্চ মধ্যযুগে মনগড়াভাবে নানা বিধিনিষেধ জারি করে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এবং সাধারণ মানুষের ওপর নানা রকম জুলুম-নির্যাতন চালায়। এ প্রেক্ষাপটেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ায় রাষ্ট্র ও চার্চ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

সেকুলারিজম শব্দটি পরবর্তীকালে ফন্সয়েড, মার্কস, নিটসে প্রমুখ দার্শনিকের চিন্তাধারার প্রভাবে ধর্মবিরোধী রূপ ধারণ করে। ফ্রান্সের লেইসিজমকে ইংরেজি সেকুলারিজমের সমার্থক মনে করা হলেও তা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দার্শনিক হলিওকের বন্ধু চার্লস ব্র্যাডলাফ সেকুলারিজমকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, এর বাস্তব রূপ হচ্ছে ফ্রান্সের লেইসিজম। এ মতবাদের সমর্থকদের মতে, ধর্মবিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে পদানত না করতে পারলে কোনো সমাজের পক্ষে বৈষয়িক উন্নতি অর্জন অসম্ভব ব্যাপার। এ জন্যই ফ্রান্সের সেকুলার শক্তিকে ধর্মের বিরুদ্ধে উগ্র ও আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়। অপর দিকে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয়ভাবে সেকুলার হলেও মার্কিন ডলারে ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’ কথাটি লেখা রয়েছে। ব্রিটেনের রাজাকে অ্যাংলিকান চার্চের অনুসারী হতে হয় এবং খ্রিষ্টান বিশপদের জন্য হাউজ অব লর্ডসে ২০টি আসন সংরক্ষিত আছে। তাই থিওরি হিসেবে সেকুলারিজমকে সংজ্ঞায়িত করতে হলে ব্রিটেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের প্র্যাকটিসকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

ঔপনিবেশিক শাসনামলে সেকুলার শিক্ষাব্যবস্খার কারণে মুসলিম বিশ্বে সেকুলার চিন্তার প্রসার ঘটেছে। সমসাময়িক মুসলিম শাসকেরা আধুনিক যুগে রাষ্ট্রকে বৈষয়িক উন্নতির পথে এগিয়ে নেয়ার একটি আবশ্যিক মাধ্যম মনে করেই সেকুলার নীতি অনুসরণ করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা উগ্র সেকুলারিজমে পরিণত হয়েছে। অনেক মুসলিম রাষ্ট্র জনসমর্থন ও পাশ্চাত্য চিন্তার সাথে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করেছে। সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক দল, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্খা, শিক্ষাব্যবস্খা ইত্যাদির ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের সেকুলার রাষ্ট্রের আদর্শ তারা অনুসরণ করছে। অবশ্য ধর্মকে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে না আনলেও তারা রাজনৈতিক কারণে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করেনি।

খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে ঐতিহাসিক পরম্পরার অভাব, মানবিক সমস্যা সমাধানে অক্ষমতা এবং গতিশীলতা না থাকায় পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান সমাজে সেকুলারিজম প্রসার লাভ করেছে। দার্শনিক বিচারে মুসলিম বিশ্বে চিন্তার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যা ছিল না। খ্রিষ্টান ধর্ম শুধু নয়, ব্যাপক ও বাস্তব অর্থে ইসলাম ছাড়া কোনো ধর্মেই সামগ্রিক জীবন পরিচালনার বিধান নেই। সেকুলারিজমকে ইহলৌকিকতা এবং সব ধর্মের সমান অধিকার প্রদানের মতবাদ হিসেবে বিবেচনা করলে ইসলাম সে অধিকার নিশ্চিত করেছে। অনেকে বলেন, যুক্তিবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা বা মতামত পোষণ ও প্রকাশের স্বাধীনতা, বিজ্ঞানমনস্ক ইত্যাদি সেকুলার চিন্তার ফসল। পাশ্চাত্যের জন্য এ কথা প্রযোজ্য হলেও মুসলিম বিশ্বের ব্যাপারে তা মোটেই প্রযোজ্য নয়। বিজ্ঞানমনস্ক, সব ধর্মের সমান অধিকার, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বে ইসলাম যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তা অনন্য।

সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, সেকুলার শিক্ষার বৈশিষ্ট্য এই যে, ‘সে শিক্ষা ধর্মের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কথা না বললেও শিক্ষার্থীদের মন-মগজকে এমনভাবে তৈরি করে যে তারা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলামকে বৈষয়িক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করে।’

মুজতবা আলীর মন্তব্যটির বাস্তব রূপায়ণ হয়েছিল ১৯৭২ সালে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা চালুর পরে। দেখা গেল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম থেকে আল কুরআনের আয়াত বা ‘মুসলিম’ শব্দ মুছে ফেলা হলো। এমনকি কবি নজরুল ইসলাম কলেজের নাম পাল্টিয়ে ‘কবি নজরুল কলেজ’ করা হলো। ইসলামি দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। দেশব্যাপী ইসলাম প্রচারের সাথে সংশিষ্ট ওয়াজ-মাহফিল, তাফসির মাহফিল ইত্যাদি বন্ধ হয়ে গেল। মাদরাসাগুলো অবহেলায় পতিত হলো। শিক্ষা-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের অনুকরণ শুরু হলো।

আলেম সমাজ সম্মান হারালেন। তারা দেশ ও সমাজের নেতৃস্খানীয় পর্যায় থেকে ছিটকে পড়লেন। সেকুলারদের দাপটে মুসলিম পরিচয়ে গর্ব বোধ করার হিম্মত অনেকেই হারিয়ে ফেলেছিলেন। পত্রপত্রিকায় বা সভা-সমিতিতে ইসলামের কথা বলার সাহসী লোক অনেকটা হারিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’ শেখ হাসিনার এরূপ দাবি, আর বাস্তবে যে অভিজ্ঞতা এ দেশবাসীর রয়েছে তাতে অনেক ফারাক।

সরকার যদিও বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখেছে, কিন্তু তার বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই। কারণ তা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি আল্লাহর উপর অবিচল আস্খা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে তার স্খলে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করা হয়েছে। শুধু জনগণকে প্রবোধ বা ধোঁকা দেয়ার জন্য এরূপ করা হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিগত আড়াই বছরে সংবিধান সংশোধন না হলেও ধর্মনিরপেক্ষতার দাপট বহু আগেই আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু করা হয়েছে। ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর জুলুম-নির্যাতনের চরম বহি:প্রকাশ ঘটে চলেছে মহাসমারোহে। দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। দেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতার দাপটে ভিন্ন মতের লোকেরা ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। সংবিধান সংশোধন হওয়ার পর জাতির ভাগ্যাকাশে সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File