বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ষণ গুম খুনের ঘটনা ভয়াবহ : মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে যৌথ কার্যক্রম চালুর দাবি

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকবান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৪৮:১৪ সকাল

দক্ষিণ এশিয়ায় নির্যাতন ও দায়মুক্তি’ শীর্ষক এক আলোচনায় গতকাল মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কর্মীরা বলেছেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নাগরিক গুম, খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদানে রাষ্ট্র, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি কখনও বিচার বিভাগও অনেকটা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নির্যাতন ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে নির্যাতন ও দায়মুক্তি বিরোধী দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্কের (শান্তি) মাধ্যমে যৌথ কার্যক্রম চালুর দাবি জানান বক্তারা।

গতকাল মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর উদ্যোগে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নির্যাতন ও দায়মুক্তি’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী আলোচনা সভার প্রথম দিনে দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কর্মীরা এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা এ আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তাদের নিজ নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি ও সরকারের কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। অধিকার-এর সভাপতি ড. সি আর আবরারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন অধিকার-এর উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, সেক্রেটারি ড. আদিলুর রহমান খান, ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’র (মাসুম) সেক্রেটারি কিরিতি রায়, নেপালের ‘ইনসেক’-এর মানবাধিকার কর্মী সুবোধ রাজ পেকুরেল, পাকিস্তানের ‘উইমেন ইন স্ট্রাগল ফর ইমপাওয়ারমেন্ট’র (ওয়াইজ) নির্বাহী পরিচালক বুশরা খালেক, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কর্মী নূর খান লিটন, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ। আজ দ্বিতীয় দিনে যৌথ কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে এ আলোচনা সভা শেষ হবে।

ড. সি আর আবরার তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি, নির্যাতন ও খুন-গুমের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের দেশে গুম, হত্যা, থানা হেফাজতে মৃত্যু, ক্রসফায়ার, নারী নির্যাতনসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং কিছু ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে ভিকটিমের মামলা নিতে থানা পুলিশ গড়িমসি করে এবং নির্যাতনের প্রকৃত ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে এলেও ভিকটিমের ডাক্তারি প্রতিবেদনে অন্য চিত্র উঠে আসে। এসব ক্ষেত্রে চিকিত্সকরাও তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

ফরহাদ মজহার নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘নির্যাতন ও দায়মুক্তি বিরোধী দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্ক’ (শান্তি) বর্তমানে নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা অধিকার কর্মীরাও উদ্বিগ্ন। থানা হেফাজতে নির্যাতনসহ বিভিন্ন নির্যাতন ও গুম-খুন প্রতিরোধে সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশা করি, দক্ষিণ এশিয়ার এ মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

কিরিতি রায় তার বক্তৃতায় ভারতের ১১টি রাজ্যে বর্তমানে সেনা শাসন চলছে উল্লেখ করে পুরো ভারতের খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারতে বর্তমানে তিন হাজারেরও বেশি মানবাধিকার সংগঠন থাকলেও তারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া অভিযোগের খুব সামান্যই গ্রহণ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতিতদের মধ্যে শতকরা ৬৪ ভাগই মুসলমান।

নূর হক লিটন সরকারকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, সরকার কি শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে চলতে পারছে? আসলে সরকারের নির্ভরশীলতার জায়গা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনকে দাঁতহীন বাঘের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, এ কমিশনে দলীয় মনোনয়নের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশ পরিচালনায় নয়, দলের ভূমিকাকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এসময় তিনি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ‘নির্যাতন ও দায়মুক্তি বিরোধী দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্ক’র মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব যত বাড়ছে ততই সহিংসতা ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশে বিরোধী আন্দোলন দমাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পিপার স্প্রে ব্যবহারের সমালোচনা করে বলেন, অনেক দেশে এটি নিষিদ্ধ থাকলেও আমাদের দেশে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা দেশে বর্তমানে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধী আন্দোলন দমাতে সরকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আটকের পর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে গেলে সেখানেও নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী বুশরা খালেক, নেপালের সুবোধ রাজ পেকুরেল নিজ নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে নির্যাতন ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধে দক্ষিণ এশীয় যৌথ কার্যক্রম চালুর দাবি জানান। আজ দ্বিতীয় ও শেষ দিনের আলোচনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যৌথ কার্যক্রম চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১১৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File