পুলিশের গুলিতে আহত এক শিশুর বোবাকান্না
লিখেছেন লিখেছেন বর্ণক শাহরিয়ার ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৫০:২০ রাত
আজ হৃদয়টা বিক্ষুব্ধ,ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে মনের সব মানবতা। নির্বাক হয়ে তার জন্য দোয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। যতই ভাবছি ছেলেটির কথা ততই যালিম হাছিনার জন্য অভিশাপ ছাড়া আর চাওয়া আসছেনা মনের ভেতর থেকে।
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারী যালিমশাহির মসনদ থেকে কোরআনের বুলবুলি হযরত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবকে অন্যায় ও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসির রায় দিলে সারাদেশের মত চট্টগ্রামের বাঁশখালির মানুষও প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
বাঁ
শখালির বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে ছিল কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণ। যারা কোরআনকে ভালবেসেই মাওলানা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে।
সেইদিনের সেই আন্দোলনে অন্যান্য কোরআন প্রেমিক জনতার কাতারে ছিল অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ আব্দুল করীম। রাজনীতির ‘র’ বলতেও বুঝেনা এই শিশু ছেলেটি। কিন্তু সেই ছেলেটিও বিক্ষুব্ধ মানুষের কাতারে দাঁড়িয়েছে অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য।
আব্দুল করীম একজন কোরআন প্রেমিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছে, এইটা শেখ হাছিনার জন্য অসৌয্য। তাই তার মনের হিংসা জ্বলে ওঠল, লেলিয়ে দিলেন তিনি তার রক্ত পিপাসুদের।
বাঁশখালির প্রতিবাদি মানুষের ওপর সেইদিন শেখহাছিনার মদদপুষ্ট পুলিশ-বিজিবির সম্মিলিত বাহিনী যে হারে গুলি চালিয়েছে, তা ৭১-এর পাকহানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে। রক্ত তৃষ্ণায় পাগল বিজিবির একটি গুলি লেগেছিল আব্দুল করীমের শরীরে। গুলিটি তার পেছনে মেরুদণ্ডের স্পোইনাল কর্ড ছিড়ে বুক দিয়ে বের হয়ে যায়।
না, আব্দুল করীম সেইদিন মারা যায়নি। তাঁকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তার এই বেঁচে থাকার প্রতিটি ক্ষণ তার কাছে হয়ত একএকটি যন্ত্রণাময় ক্ষণ (আল্লাহ ভাল জানেন। তবে তার চোখ-মুখ দেখে তেমনটি মনে হয়নি।)
আব্দুল করীম বেঁচে থাকলেও আজ দেড় বছর যাবত সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তার কোমড় থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ এখন পর্যন্ত অসাড় হয়ে আছে। কোমড় চওড়ায় এক ইঞ্চির বেশি হবে না। স্পাইনাল কর্ডটি ছিড়ে যাওয়ায় এগুলো ভাল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। শুধু তাই নয়, তার অপারেশনের যায়গাটিতে এখন ঘা ধরেছে। যার কারনে তাকে আরো অনেক সময় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। এর মধ্যে দুইমাস থেকে এসেছে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতা, কিন্তু তারা তাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। তাই এখন এখানকার হসপাতালেই পড়ে আছে অসহায় ভাবে।
আব্দুল করীমের মমতাময়ী মা বেঁচে নেই। তার বাবা বয়োবৃদ্ধ, তাই হাসপাতালে আসতে পারেননা। ভাইয়েদের অবস্থাও ভালনা। দিনে এনে দিনে খেতে হয়। তাই তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তা থাকে নিজেদের সংসারে ঘানি নিয়েই। আব্দুল করীমের জন্য এক আল্লাহ ছাড়া কেউই নেই ভাবার।
সংগঠনের ভাইয়েরা তার চিকিৎসা চালায়। হাছিনার রক্ত চক্ষু এড়িয়ে ভাইদের স্বাভাবিক চলাচল করাও কষ্টকর। তারপরও তারা সাদ্ধ্যমতে করীমের খবরাখবর নেয়ার চেষ্টা করে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে এসে তাকে দেখে গেছে।
গতকাল তাকে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় গোছল করিয়ে দিয়েছে। নিজে শুতে পারলেও কারো সহযোগীতা ছাড়া সে উঠে বসতে পারেনা। কিন্তু কে সহযোগীতা করবে? কেউতো তার পাশে নেই! নার্স, ওয়ার্ডবয় অথবা পাশের সিটের কোন রোগীর আত্মীয় স্বজন সহযোগীতা করলেই তবে সে ওঠে বসতে পারে।
আব্দুল করীমকে দেখার পর আমার ভেতরকার স্বাভাবিতকতা যেন হারিয়ে গেছে। চোখের সামনে কেবলেই ভেসে উঠছে নির্দোশ এই ছেলেটির চেহারা। যে বয়সে তার দস্যুপনা করার কথা ছিল, সে সময়ে সে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রনাকর সময় পার করছে। তার কষ্টগুলো শেয়ার করারও কেউ নেই তার পাশে। হে আল্লাহ, আর কত পরীক্ষা নেবে তুমি আমাদের? এসব মাসুম ছেলেদের চোখের পানি কি তোমার আরশ পর্যন্ত পৌঁছায়নি? আব্দুল করীমকে তুমি তোমার অলৌকিকতা দিয়ে সুস্থ করে দাও.... আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১১২৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ভাই এই মর্মস্পর্ষি ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন