জামায়াত মুক্ত? নাকি ইসলাম মুক্ত?

লিখেছেন লিখেছেন বর্ণক শাহরিয়ার ০৭ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩৫:৪৯ রাত

গত তিন/চার দিন ধরে ফেসবুকে একটি ভিডিও ও একটি ছবি নিয়ে শাহবাগী ধর্মদ্রোহীরা বেশ উলে্লাসিত। মাহমুদুল হাসান নামক এক কানাডা প্রবাসি'র অক্লান্ত (!) পরিশ্রমের ফসল বাংলাদেশের এক অখ্যাত গ্রাম আজ ‍‌"(জামাত) জামায়াত মুক্ত গ্রাম" হিসেবে স্বীকৃত পেয়েছে!! ফেসবুকে এমন পোস্ট দেখে বিষয়টির বিস্তারিত জানতে গিয়ে কোন রকমের অবাক হলাম না। বরং এটাই স্বাভাবিক।

সেদিন আমার এক আ'লীগীয় ভগ্নিপতি জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে হায়হুতাশ করতে করতে মুখোর লালা ঝড়য়ি একাকার করে ফেললেন। ঠিক অসময়ে এইচবিও চ্যানেলে একটি মুভি দেখছিলামআমরা, যেখানে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। আমার ধর্মপ্রাণ ভগ্নিপতি ইহুদী-নাসারাদের গালাগাল দিচ্ছিল, আর বলছিল সব শয়তানের জাত, মুসলমানদের দেখলেই সন্ত্রাসের তকমা দিয়ে বসে। শয়তানগুলো ঠিকই জানে, ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। কিন্তু পৃথিবীতে যদি ইসলাম টিকে যায়, তাহলে ওদের অস্ত্রের ব্যাবসা, নারী ব্যাবসাসহ দুনিয়ার সব শয়তানি বন্ধ হয়ে যাবে, তাই তারা মুসলমানদের সন্ত্রাসী সাজিয়ে মানুষদের ধোকা দিতে চায়। তার কথা শুনে আমি হাসছি দেখে অবাক হয়ে হাসির হেতু জিজ্ঞেস করলে আমি বল্লাম ওদের আর দোষ কি বলুন? ওরা ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে ভয় পায় যে কারনে, ঠিক সেই কারনে আমাদের দেশের এক শ্রেনীর মানুষও ভয় পায় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অপক্ষমতা, শয়তানি, রাহাজানি, দুর্নীতি ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাবে বলে। তাইতো তারাও ইসলামের বিরোধীতা করে। আর দেশের ইসলামের সবচেয়ে যোগ্য অনুসারী হল জামায়াতে ইসলামী। তাই জামায়াতকে তারা পশ্চিমাদের মত সন্ত্রাসীর তকমা লাগিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে। কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না। কথাশুনো বেচারা মুখটা দেখার মতই লাগছিল।

ঘটনাটি বললাম এই কারনে যে, মাহমুদুল হাসান নামক ঐ লোকের ভিডিও ও বইটির কথা জানার পর সেগুলো আমি ডাউনলোড করে দেখেছি এবং পড়েছি। তার বইটি দেখলে ধর্মজ্ঞানী যে কোন ব্যাক্তির শরীর ঘৃণায় রীরী করে উঠবে। তার বইটির পরতে পরতে শির্কের ছড়াছরি। এ বিষয়ে ইসরাত জাহান ফেসবুকে খুব তথ্যবহুল এবং যুক্তি ভিক্তিক অনেক সুন্দর একটি লেখা লিখেছেন। মাহমুদুল হাসানের বই এবং ভিডিউটি দেখে আমার যেমন চিন্তা জাগ্রত হয়েছে, ইসরাত আপুর চিন্তাটিকে দেখলাম একই রকমের। শুধু আমাদের দু’জনের নয়, বরং এটি যারা দেখবেন তাদের সবারই মনে জাগ্রত হবে, হাসান মাহমুদ মূলত জামায়াত মুক্ত গ্রাম অথবা জামায়াতের বিরোধী করতে গিয়ে সরাসরি ইসলামের বিরেধীতাই করেছেন।

১০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রটিতে দেখা যায়, কোন একটি গ্রামের ক্যামেরায় ধারণ করা দুইটি ছবি (দেখুন ১ ও ২ নম্বর ছবি) এবং সেই সাথে বাধ্যযন্ত্র সহকারে একটি বাউলগীতি।



ছবি নং- ১



ছবি নং- ২



ছবি নং- ৩

সম্পূর্ণ ভিডিও চিত্রে দেখা ২০-২৫ জন নারীকে দেখা গেলেও সেখানে মাত্র মাত্র ৫ জন পুরুষের চেহারা দেখা গেছে। এর মাঝে একজন বাউল অন্য ১জন কোন এনজিও'র প্রতিনিধি হবেন। বাকি ৩ জনের একজন উপস্থাপক। আর দুইজনের একজনের নাম আব্দুল আজীজ চাকলাদার বাবু অন্য জনের নাম অবসর প্রাপ্ত ইংরেজি প্রভাষক এফ এম জামষেদ আলী। মজার ব্যাপার হল, ভিডিও'র প্রথম দিকে বাবু গ্রামটিকে জামায়াত মুক্ত করার সফলতা(!) বর্ণনা করলেও শেষে দেখা যায় নিজেই উপস্থাপক সেজে জামশেদকে জিজ্ঞেস করছে এর কার্যক্রমের বিষয়ে।

জামশেদ



বাবু

আমরা জানি, বাগেরহাট এবং এর আশপাশের জেলাগুলো তুলনামূলক ভাবে দরিদ্রপবন। অতীতেও আমাদের দৃষ্টি গোছর হয়েছে, এসব জেলাগুলোর অনেক দরিদ্র মানুষ খ্রীষ্টান পরিচালিত এনজিও'র টাকায় নিজের ধর্ম ইসলাম ও হিন্দুকে বাদ দিয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে।

সেই রকমের একটি জেলা বাগেরহাটের অখ্যাত এই গ্রামে (ভিডিও'র তথ্যানুযায়ী, গ্রামঃ ভট্ট বালিয়াঘাটা, পোস্টঃ চুলকাঠি বাজার, উপজেলা সদর, জেলা বাগেরহাট) কানাডার কোন এক প্রবাসী হাসান মাহমুদ তার অমূল্য এই কাজ সম্পন্ন করতে গেলেন? স্বভাবতই এমন প্রশ্নের উদয় হবে মনে।

বাগেরহাটের মোট জনসমষ্টির ৫০.৭ ভাগ শিক্ষিত হলেও এর ৪৯.৩ ভাগ জনগণ অশিক্ষিত। তারমধ্যে ঐ গ্রামে ৭৫ ভাগ মুসলিম এবং ২৫ ভাগ জনগোষ্টি হিন্দু ধর্মাবলম্বি। কিছুদিন আগের এক গবেষণায় দেখা যায়, আমাদের দেশে যে সমস্ত ফতোয়া ( ফতোয়া শব্দটি আরবি, এর অর্থ হচ্ছে মতামত। তবে এখানে ধর্মীয় বিচারকে বোঝানো হয়েছে) দেয়া হয় তার প্রায় নব্বই ভাগই দেয় গ্রামের মাতবর, সালিশদার, মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা, যাদের ধর্মিয় জ্ঞান নাই বললেই চলে। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের মাধ্যমে তারা ফতোয়া দিয়ে থাকে।

গ্রামের মানুষ সহজ, সরল ও দরিদ্র। কাদা মাটির ন্যায় তাদেরকে যেভাবে বুঝ দেয়া হয় তারা সেভাবেই বুঝ নেয়। হাসান মাহমুদ শরীয়া কি বলে আমরা কি বলি নামক একটি বই প্রচার করে নাকি সেই গ্রামের মানুষ জনকে বুঝিয়ে গ্রামটিকে থেকে জামায়াত মুক্ত করেছেন। কথা হল, যে খানকার জনগণ প্রায় ৫০ ভাগই অশিক্ষিত, সেখানকার জনগণকে কিভাবে বই পড়িয়ে সচেতন করলেন?

তিনি ২টি প্রামাণ্য চিত্র "নারী এবং হিল্লা" দেখিয়ে নারীদের সচেতন করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তার ক্যামেরার সামনে যে সব নারী এসেছে, তাদের অধিকাংশই হয় দরিদ্র, না হয় এনজিও এর সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের দেখলেই বোঝা যায়, এখানে টাকা একটি বড় ফ্যাক্টর এবং যারা এসেছে তাদেরকে মুখস্ত বুলি আওড়ানো হচ্ছে। এক মহিলা মুখস্ত কথাগুলো বলতে পারছিল না, তাই তাকে পাশ থেকে শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেটা ভিডিওটির সাউন্ডে শোনা যাচ্ছে।



ছবি নং- ৬

ছবি নং- ৭



ছবি নং- ৮

যারা ভিডিওটি দেখেছেন, তারা লক্ষ্য করেছেন, ভিডিও এর শুরুতে ১ ও ২ নং ছবি দুইটি দেখা যাচ্ছে। এইবার ৩ নং ছবিটি দেখুন। এটি ১ নং ছবিটির অবিজিনাল ছবি। যেটিকে এডিট করে হাসান মাহমুদ সেই গ্রামটিকে জামায়াত মুক্ত গ্রাম বলে মানুষজনকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন।

এইবার আসি ৭ নম্বর ছবিটির ব্যাপারে। কোন একটি গাছে জামাত (জামায়াত) মুক্তগ্রাম লেখা একটি নেমাপ্লেট। এ কাজটি কোন কঠিন কাজ নয়। যেমন ধরুন ৮ নং ছবির মত। যারা গ্রামে থাকেন, তারা তাদের বাড়ির পাশে কিংবা সুবিধা জনক স্থানে সুযোগ করে যখন তখন একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে ছবি কিংবা ভিডিও তোলার কাজ সম্পন্ন করে নিতে বাধা তেমন একটা পাবেন বলে মনে হয় না।

তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই, এই গ্রামটি জামায়াত মুক্ত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, কেন একটি অজয়পাড়া গ্রামে গিয়ে অশিক্ষিত মানুষদের সচেতন করতে হয়েছে তাদের? অথচ জামায়াত-শিবিরের অগ্রসরতা এবং বুদ্ধিভিত্তিক উর্বরতা শহরের শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষেরা। তাহলে কেন শহরের শিক্ষিত ও আধুনিক মানুষদের সচেতন (!) করার সাহস তারা পাচ্ছে না?

মূল কথা হল, ইহুদী-খ্রীষ্টানরা ইসলামকে তাদের ধর্মের প্রধানতম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। তাই তারা পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামকে বিদূঢ়িত করতে চায়। তাই তারা নামে, বেনামে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তিদের দিয়ে ইসলামকে কলূূষিত করতে চায়। হাসান মাহমুদ নামক লোকেরা তাদেরই মধ্যে গণ্য। এরা সরাসরি ইসলামের বিরোধীতা করে না, বরং ইসলামের লেবাস ধারন করেই ইসলামের ক্ষতি সাধন করে থাকে। ঠিক যেমনটি করেছিল ১১শতাব্দির দিকে সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর জমানায়। ইহুদী-খ্রীষ্টানরা নিজেরা পীর, ফকীর কিংবা ইসলামের বিশেষজ্ঞ সেজে সাধারণ মুসলমানদের বিপদগামী করতো। বর্তমান সময়ের হাসান মাহমুদরা যেন আরেকটি ক্রসেডের জন্ম দিতে চাচ্ছে। এ জন্য তারা ভালভাবেই জানে, ইসলামকে পৃথিবীর বৃক থেকে মুছে দিতে হলে সবার আগে বিশ্বের ইসলামীক দলগুলোকেই ধ্বংস করে দিতে হবে। তাই তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, জামায়াত-শিবির তথা ইসলামীক দলগুলোকে মৌলবাদি, সন্ত্রাসী, জজ্ঞি ইত্যাদি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষদের বিভ্রান্ত করে থাকে। কিন্তু তারা সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ

হাসান মাহমুদ এর লেখা বইয়ের ৯১ ও ৯২ পৃষ্ঠা পড়লেই সবার জানা হয়ে যাবে এরা কি চায়? তারা আসলেই ইসলাম ধর্মকে বাদ দিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ তৈরী করতে চায়। এ জন্য সে তার বইতে আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের উদাহরণ টেনে বুঝাতে চেয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই ধর্মহীনতা নয়। মজার বেপার হল, তার উদাহরণের কোন একটি দেশও ধর্মনীরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। এভাবে মানুষজনকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এরা আর কত বিপদগামী করবে?

বিষয়: বিবিধ

২৭৮১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188538
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩৪
ফেরারী মন লিখেছেন : ইসলামকে কেউ বাদ দিতে চাইলেই যেমন সেটা সম্ভব নয় আবার তেমনি ইসলামকে নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে চাইলেও সেটা সম্ভব নয়। কারণ ইসলাম ও কুরআনকে আল্লাহ নিজে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং সংরক্ষণ করবেন।
188556
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৩
188558
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
188575
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:০৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : এই রকম কয়েকশত গ্রাম দেখাতে পারবো লীগ মুক্ত, ফটোশপের মাধ্যমে।
188583
০৭ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১৪
চেয়ারম্যান লিখেছেন : ওরা যা করেছে। বাস্তবে এটা জামায়াত বিরোধী তো নয়ই। মূলত ইসলাম বিরোধী। আমাদের সবাইকে এই সব শয়তানদের বিরুদ্বে আপনার মত কলম ধরতে হবে
188754
০৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৪০
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
189339
০৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
পলাশ৭৫ লিখেছেন : মাইনাস
278350
২৬ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৫:১৬
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অনেক ধন্যবা। ভালো লাগলো আপনার লজিক গুলো ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File