জুতাচোর এবং নামাজ চোর

লিখেছেন লিখেছেন বর্ণক শাহরিয়ার ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩৫:০২ দুপুর



বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মাদ্রাসা বায়তুশ শরফ যখন পড়তাম, তখন আমাদের জমদূত ছিলেন ফরহাত হুজুর এবং কামাল স্যার। গল্পে আছে, শয়তানের কাছে তার সেই শিষ্যই সর্বাধিক প্রিয়, যে একজন আলেমকে তার জ্ঞানার্জনের পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

মাদ্রাসায় পড়াকালিন শয়তানের এমন তৎপরতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। ক্লাশের সেরা ছাত্র, হাফেজ, ভদ্র ছাত্র সব ক্যাটাগরির ছাত্রই মাঝে মাঝে দিকভ্রান্ত হওয়া ছিল স্বাভাবিক বিষয়। তবে আল্লাহর হাজার শোকর, অল্প সময়ের ব্যাবধানে সবাই আবার সরল পথের পথিক হয়ে যেত।

লেইজার পিরিয়ডে আমাদের ফরহাত হুজুর মাদ্রাসার অন্যাণ্য ছোট গেইটগুলোতে তালা দিয়ে প্রধান ফটকের সামনে বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন, যেন কোন ছাত্র যোহরের নামাজ না পড়ে কমপ্লেক্সে ডুকে খাওয়ার টেবিলে বসতে না পারে। একবার বায়তুশ শরফের পীর সাহেব সারা বাংলার আলেমদের গর্ব উপমহাদেশের ৩জন বাহারুল উলুমের (জ্ঞানের সাগর) একজন শাহসূফি আলহাজ্জ্ব #কুতুব উদ্দিন (রহ.) মসজিদে আমাদের ওয়াজ করেন, ‘‘বাবারা যোহরের আযান দেয়ার পর আশপাশের মহল্লা থেকে মুসল্লিরা তোমাদের এই মসজিদে আসেন নামাজ আদায় করতে। অথহ তোমরা তখন নামাজ না পড়ে যাও খাওয়ার খেতে, এটাকি উচিত? তোমরা আর এমনটি করনা। ফারাহাত তুমি আর বেত নিয়ে দাঁড়িয়েও না....।’’

সেদিন থেকে আমাদের ফরহাত হুজুর আর দাঁড়াতেন না। আমরা ছাত্ররারাও অভিবাবকের কথামত নামাজ পড়তাম। কিন্তু সমস্যা হল, হঠাৎ করে আমাদের অনেকের জুতা চুরি হওয়া শুরু হয়ে গেল! একদিন, দুই দিন, তিনদিন..... অনেকেই জুতা পরে মাদ্রাসায় আসলেও, বাসায় ফেরত যেত খালি পায়ে।

একদিন শেষ রাকাতে সালাম ফেরানোর আগে শোড়গোল শুনতে ফেলাম। সালাম ফেরানো শেষ হতেই দেখি, ছেলেপেলেরা হুরহুর করে মসজিদ থেকে বের হয়ে এক লোককে বেধরক পেটাচ্ছে। কয়েক হাজার ছাত্রের গণপিটানি থেকে ঐ লোককে বাঁচাতে হিমশীম খাচ্ছিলেন, আমাদের জমদূত ফরহাত হুজুর, কামাল স্যার, জামাল স্যারেরা। শেষতক সম্ভত হয়, পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। জানা গেল, এই লোক ছাত্রদের জুতা চুরি করতে আসলে একছাত্র দেখে ফেললে অন্যদের সহযোগীতা এই চোরকে তারা হাতেনাতে ধরে ফেলে।

সবচেয়ে বড় যে কথা, সেটাহল; যে এই জুতা চোরকে ধরেছিল সে আর কেউ নয়, আমাদেরই এক ক্লাশমেইট। আমরাতো তার কৃতিত্বে অনেক গর্বিত। কারন তার নামডাক পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে রটে গেল। আমরাদের খোশনামে বন্ধুমোদের ফুলেফেপে আকাশে ভাসছিল। ৫ম পিরিয়ডের শিক্ষক ছিলেন, বাংতুশ শরফের ডাকসাইটের সেই কামাল স্যার। স্যার আসলেন, চোর ধরার কলা কৌশল শুনছেন আর বন্ধুর তারিপ করছেন।

হঠাৎ করে, কামাল স্যার তাকে প্রশ্ন করলো, এই তুই চোর কিভাবে ধরলি? চোর যখন জুতা চুরি করছিল, তখনতো নামাজের একেবারেই শেষ পর্যায়ে ছিল। তাহলে তুই কি নামাজ পড়িশনি? আকাশে ভাষা বন্ধুটি যেন হঠাৎ করেই মাটিতে আছড়ে পড়ল। সে কাচুমাচু শুরু করল। আর আমদেরতো আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। শেষে সে স্বিকার করতে বাধ্য হল, সে নামাজ পড়েনি। ব্যাস আর যায় কোথায়? সে জুতা চোর ধরে মেরেছে, আর স্যার নামাজ চোর ধরে ইচ্ছেমত মারলেন।

কথায় আছে, রতনে রতন চেনে আর চোরে চোর ধরে। আমাদের বন্ধটি নামাজ না পড়ে পোস্ট অফিসের সিঁড়িতে লুকিয়ে খেয়াল রাখছিল, কখন নামাজ শেষ হবে। তার এই খেয়াল রাখতে গিয়ে জুতচোর ধরা পড়েছে। (অবশ্য তার এই কৃতিত্বের কারনে বায়তুশ শরফ মাদরাসায় আর কখনো জুতা চুরি হয়নি)

এত বছর পর গতকালকে আ’লীগ নেতা এটিএম শামসুজ্জামানের কথাটি দেখে নামাজ চোর বন্ধুর জুতা চোর ধরার গল্পটি মনে পরে গেল। এটিএম শামসুজ্জামানকে ছোটকাল থেকেই একজন খল অভিনেতা হিসেবে জানি। বৃদ্ধবয়সে তার মুখে দাড়ি রাখলেও চেহারা দেখে যে একজন খারাপ জগতের বাসিন্দা তা স্পষ্ট। এই লোক তার নিজের ছেলের হাতে চড়-থাপ্পর খেয়ে খেয়ে দিনাতিপাত করেছে। শেষে সেই ছেলেই তার সামনে অপর ছেলেকে হত্যা করেছে। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। এটিএম শামসুজ্জামানকে যদি সূরা ফাতেহা পাঠ করতে বলা হয়, তবে আমার বিশ্বাস ৭ আয়াতের মধ্যে সবকটি আয়াতই ভুল পাঠ করবে, সেই লোক যদি বাংলাদেশের মুসলমানদের শুধু নয়, গোটা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারি দল জামায়াতে ইসলামীকে জুতা চোর বলে তাহলে আর কি-ইবা করার আছে?

শাসুজ্জামান সেক্যুলারিস্ট। তাই, তার কাছে মসজিদের চাইতেও মন্দির প্যোগোডাই ভাল জায়গা। কারন ওসব জায়গায় নাকি জুতা চুরি হয় না। তবে মুসলমানদের মসজিদের মত ওগুলো কি সর্বশ্রেণীর লোকদের জন্য অবাধ বিচরনের সুযোগ রয়েছে কিনা? সেটা এইট্টা বলেনি। তবে এই কথা বলতে দ্বিধা নেই, সেদিন আমাদের মাদ্রাসায় যে জুতাচোরটি ধৃত হয়েছিল, সে কিন্তু এটিএম শামসুজ্জামানের খল চরিত্রগুলোর মতই একটি এটি আজকের সূর্যোদয়ের তমই খাঁটি।

এখানে একটা কথা না বললেই নয়, ২০০৪ সালে আমি যখন শিবিরের সাথী হওয়ার জন্য আবেদন পত্র পূরণ করছিলাম, তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নাটক, সিনেমা দেখি কিনা? যেহেতু এসব দেখা মানে ছাত্রশিবিরের একজন অযৌগ্য কর্মীর বৈশিষ্ট, সেহেতু অনেক আগেই এসব পরিত্যাগ করেছিলাম। আজ বুঝতে পারছি, এসব নাটক, সিনেমায় যারা অভিনয় করে তারা সমাজের নষ্ট কীট। দেহ বিকিকিনিই তাদের মূলব্যবসা। যদিও কিছু মানুষ তাদের ষ্টার বা মডেল বলে, সেটা তাদের মূর্খতা

বিষয়: বিবিধ

১৮৬২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

162760
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৪১
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : এই ওনি নাকি কাউকে কাউকে জোতা চোর হিসেবে সাব্যস্থ করে!


162763
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীর চেহারায় তার অপরাধের ছাপ থাকে। কেমন যেন কাছুমাছু পুলিশ পুলিশ ভাব। আমি বাংলা সিনেমার খলনায়ক এটিএম শামসুচ্ছামান এর কথা বলছি। সিনেমায় এ লোকটিকে কেউ কি ভাল চরিত্রে কখনো অভিনয় করতে দেখেছেন কিংবা করলেও সেটিতে কি সে ফিট ছিল? একমাত্র খলনায়ক চরিত্রেই সে সফলতা পেয়েছে, তার চেহারা ও মুখভঙ্গি সব একজন সাক্ষাত ক্রিমিনাল এর মত। সিনেমার মত ব্যক্তিজীবনেও সে ভয়ংকর নোংরা ও ক্রিমিনাল চরিত্রের। অক্ষরজ্ঞান বর্জিত এ ব্যক্তিটির রাজনীতিতেও ক্রিমিনাল দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা। সে দাপটে পুরনো ঢাকায় এক হিন্দু বাড়ি জোর করে দখল করে সেটাতে বসবাস করছে এক যুগেরও বেশি সময়। ছেলেগুলোও বাপের মত মদ্যপ ও ক্রিমিনাল। বড় ছেলে নিয়মিত তাকে মারধোর করতো, চর থাপ্পড় মারতো। গতবছর বাপকে মারতে গেলে ছোট ছেলে অস্ত্র নিয়ে হামলে পড়ে বড় ছেলের উপর । ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু। ছোট ছেলে এখন জেলে। উল্টোপাল্টা ডায়লগ এর জন্য এ ক্রিমিনাল এটিএম শামসুচ্ছামান এরও গণধোলাই খাওয়ার সময় হয়েছে।
162789
১৫ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:০৮
রোকন লিখেছেন : Allah Rabbul Alamin ei soythaner pujari bura bodmashder hedayeth korun, Ameen

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File