এই মূহুর্তে আমাদের কোন অনুভুতি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, শহীদ হওয়া নাকি গাজী হওয়া?
লিখেছেন লিখেছেন বর্ণক শাহরিয়ার ২১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:২৬:৩৩ রাত
গত ৩০ই জুন আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ৩ জুলাই সেনাবাহিনীর অস্ত্রের মুখে ক্ষমাতা থেকে বিতারিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন ইসলামী মুভমেন্ট ইখওয়ানুল মুসলিমীন বা ব্রাদারহুড। তবে ক্ষমতা হারালেও পুরো বিশ্বকে তাক অবাক করে দিয়ে টানা ৪৮ দিন যাবত পৃথিবীর অন্যতম নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে রাজধানী কায়রোর দুটি গুরুত্ত্বপূর্ণ চত্ত্বরে আন্দোলন করে দলটি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই আন্দোলন কোন ফলতো বয়ে আনেইনি, বরং তিন সহস্রাধিক জনশক্তি হারিয়ে আপাতত মুখ থুবরে পরেছে লাখো মুসলমানের হৃদয়ের সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড। দলটির তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দলটির প্রধান ড. আহমদ ও প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিসহ ব্রাদারহুডের প্রায় সব শীর্ষ নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির বেশিরভাগ নেতাই হয়তো শহীদ হয়েছেন না হয় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্রদারহুডের মূখপাত্র গিয়াদ আল হাদ্দাদ জানান, “গ্রেপ্তার এড়াতে প্রতিদিনই তারা অবস্থান পরিবর্তন করেন, বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন না, প্রকাশ্যে বের হন না এবং নজরদারির ভয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।”
হাদ্দাদ বলেন, ‘সেনা অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে ব্রাদারহুড টানা ৪৮ দিন ধরে বিক্ষোভ করেছে। এখন মিশরীয় জনগণের পালা। ব্রাদারহুডের এই পিছু হটা সাময়িকভাবে হলেও জেনারেল সিসির জন্য বিজয়। মনে হচ্ছে, তার বর্বর বাহিনী এখন রাজধানীর রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
ব্রাদারহুডের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন এই সংগঠনটির কাঠামো সম্পর্কে প্রশ্ন করার মানে হলো একজন মুমূর্ষু লোককে প্রশ্ন করা যে আপনার ক্যারিয়ার কেমন যাচ্ছে?’
বাস্তবেও তাই। গত ১৪ই আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ব্রাদারহুডের অন্তত ৩০০০ জন শহীদ হয়ে গেছেন। নিহতদের মধ্যে ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরাও রয়েছেন। বাদিইর এক ছেলেও শুক্রবার নিহত হয়েছেন।
ব্রাদারহুড নেতাকর্মীরা বলছেন, দলটির তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সাময়িক দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, ব্রাদারহুডের বলা চলে মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে।
মিশর থেকে যদি বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টি দেই, এখানেও দেখবো দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অবস্থাও খুবই নাজুক। দলটির কেন্দ্র থেকে ইউনিট পর্যন্ত সবাই হয় জেলে আছেন, না হয় আত্মগোপনে আছেন। শীর্ষ পর্যয়ের সবাই জেলে। সীদ্ধান্ত দেয়ার মত এমন কেউই বাহিরে নেই। এর মধ্যে একবার গণহত্যাও হয়েছে তাদের ওপর। এছাড়াও দেশের কোথাও না কোথাও একজন, দুইজন করে নিহত অথবা আহত হচ্ছেন। ডজন খানেক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ধারাণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের ওপর আরা একটি ভয়াবহতম গণহত্যা চালাতে পারে সেক্যুলাররা। এছাড়াও ২/৩ জন কেন্দ্রীয় জননেতার মাথার ওপর ফাঁসীর দড়ি নাড়াছাড়া করছে বাম-রাম ঘেষা সেক্যুলার সরকার।
এককথায় মুসলিমবিশ্বকে প্রতিনিধিত্বকারি এই দুইটি সংগঠণকে বাংলাদেশ ও মিশরে নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই দুইটি সংগঠনের বয়স ইতোমধ্যে ষাট্ট ও আশি বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। বয়স অনেক হয়ে গেলেও বলার মত সফলতা তাদের অর্জিত হয়নি। এক্ষেত্রে ব্রাদ্ররহুডের তুলনায় জামায়াতে ইসলামী এক দাপ পিছিয়েই রয়েছে। তবে বিরোধীতার ক্ষেত্রে দুই দলেরই সমান ও কমন শত্রু পরিলক্ষিত হয়। শত্রুদের ওপর তারা কোনক্রমেই বিজয়ী হতে পারছে না।
মিশর বলেন আর বাংলাদেশ বলেন, কোথাও ইখওয়ান অথবা জামায়াত সফল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্ণমূল্যয়ন না করবে।
মুসলমানদের রক্তের দাম এ দুনিয়ায় না থাকলেও মহান আল্লাহর দরবারে এর দাম সীমাহীন
إنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল (ধন-সম্পদ) জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন, তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং তারা মারে ও নিজেরা মরে -সূরা তওবা ১১১
মহান আল্লাহর বাণী থেকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিয়মান হয়, সংগ্রাম করার শর্তই হল মারবে এবং মরবে।
কিন্তু আমরা দেখছি, বর্তমান ইসলামী আন্দোলন করতে যারা আসেন, তাদের সহজ সরল বাক্য শহীদ হতে এসেছি। এসেছেন ভাল কথা, কিন্তু আপনাদের লক্ষ্যতো সেটি নয়। আপনাদের লক্ষ্য অবশ্যই হতে হবে, আপনাদের গাজী তথা বিজয়ী হতে হবে। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব সব সময় এই দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ, তোমার পথে লড়াই করতে করতে যখন বিজয়ের সুবাতাস পাব তখন তুমি আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিও”। খেয়াল করুন, তার উদ্দেশ্য শহীদ হওয়া হলেও তার মূল টার্গেট বিজয়ী হওয়া।
وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না ৷ এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত ৷ কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না ৷ (সূরা বাকারা, ১৫৪)
শাহাদাত মুসলমানদের তার রবের কাছাকাছি চলে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও সহজ পথ। এ নিয়ে মতানৈক্য হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের সবাই অসম আন্দোলন করছেন; সেটা কতটুকু যুক্তি যুক্ত? সূরা তওবার আয়াত অনুযায়ী আন্দোলন করতে আসলে আমাদেরকে অবশ্যই মারার প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সবাই আসছে শুধু মরার প্র্তিুতি নিয়ে। এটাতো লড়াই বা জীহাদ হতে পারে না।
তাই ইসলামী আন্দোলন কারিদের এমূহুর্তে অবশ্যই লক্ষ্য হতে হবে গাজী হওয়া। তবে উদ্দেশ্য হওয়া চাই শহীদ হওয়া। কিন্তু তারা সবাই মনে হচ্ছে, দুটোই নির্ধারণ করে রেখেছে শহীদ হওয়া। এটাকেতো ভাই নিজের পায়ে কুঠার মারা বয়কী!
পরিশেষে বলবো, বর্তমানে ষড়যন্ত্রকারি সেক্যুলারদের বিজয় দেখে হীনবল হয়ে গেলে চলবে না। বিজয় মুসলমানদের হবেই। ইনশাআল্লাহ। এটা মাহান আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা। , ا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী ঈমানদারদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট৷
বিষয়: বিবিধ
১৮০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন