অবস্থান না করে কর্মসূচী প্রদানে বাংলাদেশের নতুন শক্তি রুপে আবির্ভূত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন বর্ণক শাহরিয়ার ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪৬:৫১ দুপুর
মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছেই হাত পাতার নেই, তাদের।
গত দুই দিন দল-মত নির্বিশেষে সবার মাঝেই এক ধরনের প্রাণ চাঞ্চল্যতা বিরাজ করছিল। দলীয় মতানৈক্য কিংবা বাঁধা অথবা অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আ.লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাপাসহ রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষ সবাই অংশ গ্রহণ করেছে ইফাজতে ইসলামের লংমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচিতে।
সবাই শতভাগ মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে যে ইসলামী চত্ত্বর তৈরী করেছে, সেখানে অবস্থান করে নাস্তিক্যবাদীদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এটিকে আরো বস্তুনিষ্ঠ করেছে আলজাযিরার সাংবাদিক জামাল আলশায়াল টুইটারে যখন বললেন, মিশরের তাহরির স্কয়ারে আরব বসন্ত শুরু হয়েছে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল, তেমনি ২০১৩ সালে বালার ইসলাম পন্থি জনগণও বাংলা বসন্ত শুরু করেছে ৬ এপ্রিল।
চট্টগ্রামে মুসল্লিদের প্রস্ততি দেখে মনে হচ্ছিল, তারা সেখানে অবস্থনেই করবেন অনেক দিন। কিন্তু হঠাৎ করে আসর নামাজের পর মঞ্চ থেকে যখন ৮ তারিখ হরতালের ঘোষণা দেয় এবং এর কিছুক্ষণ পর মঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, তখন হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং মুসল্লিদের মুখে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সকলেই হতাশ হেফাজতের কর্মসূচীতে।
আমিও আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না, এত বিপুল সমর্থনকে কেন হেফাজতে ইসলাম প্রোপার ই্উজ করতে পারেনি! আশ্চর্যের পাশাপাশি কিঞ্চিত হতাশও বলা চলে। কিন্তু পরে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের ওপর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় প্রাণ ভরে ওঠে। তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া না করে পারলাম না। খুবই সময়োপযোগী আর বাস্তবধর্মীই মনে হয়েছে হেফাজতের কর্মসূচী। ইনশাআল্লাহ, তাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
হেফাজতে ইসলাম ইসলামী মঞ্চে অবস্থান না করে নতুন কর্মসূচী দিয়ে বরং অনেক বেশী লাভবান হয়েছে মনে হচ্ছে।
১। হেফাজতে ইসলাম অবস্থান না করে সাধারণ জনগণের আরো অনেক বেশি সমর্থন অর্জন করেছে এই বিষয়ে মতানৈক্য হওয়ার সুযোগ নেই।
২। অবস্থান কর্মসূচী দিলে ২/১ দিন পর শাহবাগের মত ঐটাও বিতর্কিত হওয়ার সুযোগ ছিল অনেক বেশি, আর এত মানুষ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম বিপাকেই পড়তো বলে মনে করি।
৩। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি জনমানুষের কাছে পরিষ্কার হয়েছে, সেটি হল সরকার ও বাম মিডিয়াসহ নাস্তিকদের ধারক-বাহকরা এতদিন ধরে বলে এসেছিল, হেফাজতে ইসলাম মূলম হেফাজতে জামায়াতে ইসলাম। তাই এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। কিন্তু কাল হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীতে এইটি এখন দিনের মত পরিষ্কার, যারা হেফাজতে ইসলামকে জামায়াত ট্যাগ দিয়েছিল তারা এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই করেছিল।
৪। হেফাজতে ইসলামের পেছনে জামায়াত-বিএনপি নেই, এটি খোলাসা হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের কর্মসূচী গুলোতে জন সমর্থন আরো অনেক বেশি বাড়বে।
৫। হেফাজতে ইসলামের মাস ব্যাপী কর্মসূচীর ফলে পুরো মাস জুড়েই তারা মিডিয়ার আলোচ্য বিষয় থাকবে।
৬। হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচীতে বাঁধা দিয়ে হরতাল দেয়ায় নিন্দিতই হয়েছে নাস্তিকরা।
৭। হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর কারনে জনগণের মনে বিরাট একটা সফ্ট কর্ণার তৈরী হয়েছে। আগামীতে এরকম কর্মসূচীতে সরকার গংদের বাঁধা তাদের পতন ডেকে আনবে।
৮। আগামী ৫ মে ঢাকা অবরোধে সরকার বাঁধা দেয়ার আগে কয়েকবার ভাববে।
৯। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক দল নয়। তাই তাদের দাবীও রাজনৈতিক নয়। অতএত অবস্থান করে সরকারকে বিপদে না পেলে আরো একমাস সময় দিয়ে ১৩ দফা দাবী পূরনে সময় দিয়ে তারা নৈতিক ভাবে সরকারকে পরাজিত করে আরো অনেক বেশি চাপে ফেলে দিয়েছে। তাই এখন যদি সরকার তাদের দাবী মেনে না নেয় তাহলে সরকারেই ক্ষতি।
১০। হেফাজতে ইসলাম এইটা প্রমাণ করেছে নাস্তিকরা তাদের শত্রু নয়, বরং ইসলাম বিদ্বেষীরাই তাদের দেশ, জাতি ও ইসলামের দুষমন। তাই তাদের বিচার হেফাজতে ইসলাম চাইতেই পারে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে নতুন এক শক্তি রুপে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের গতকালের কর্মসূচীটি সারা দুনিয়ার আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো লীড নিউজ করার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত। আগামীতে মহান আল্লাহ তাদের বিজয় সুনিশ্চিত রেখেচেন। তবে এরজন্য তাদেরকে ইস্তেকামাত তথা অবিচল থাকতে হবে। জাতি তাদের বিজয় চাক্ষুস দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন