শাবির প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শিবির ক্যাডার মিসবাহ উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

লিখেছেন লিখেছেন শাবিপ্রবি ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩০:৪৭ সকাল



মিসবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। গত সোমবার প্রথম আলোর ৫-এর পাতার সিলেট সংস্করণে ‘শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা লঙ্ঘন’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসের নির্বাহী আদেশে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। গতকাল এই বহিষ্কারাদেশ মিসবাহ উদ্দিনের হাতে এসেছে। বহিষ্কারের কারণ সম্পর্কে আদেশে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি লঙ্ঘন করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণ প্রদর্শনের বিষয় প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলো।’

মিসবাহ উদ্দিনের অপকর্মঃ

১১ জানুয়ারী মানহানি, অপবাদ ও মিথ্যাচারের জন্য বিচারের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট এবং ম্মারকলিপি প্রদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী চিন্ময় সরকার ও সুদীপ্ত কর বলেন, ফেইস বুকে মিজবাহ উদ্দিন নকল ডকুমেন্টের মাধ্যমে আমাদেও (১৮ জন হিন্দুসহ) শিবির বানিয়ে ‘মুখশ উন্মোচন-১’ নামে সিএসই ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করে। আমাদের অবস্থান কর্মসূচী মিজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার এই তালিকা প্রকাশের পেছনে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত রয়েছে। অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, যে এই কাজটি করেছে সে আজগবি নকল ডকুমেন্ট ছড়িয়ে আমাদের সবাইকে এক ধরনের গালি দিয়েছে। সিএসই বিভাগের ছাত্র শিক্ষকদের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। যেহেতু ঘটনার সাথে মিজবাহ উদ্দিনের নাম উঠে এসেছে তাই অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রথম আলোর সম্পাদককে বলব বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার এমন একজন প্রতিনিধি রয়েছে যে কিনা শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। কর্মসূচী চালাকালীন শিক্ষার্থীরা মুন্সী মিসবাহ উদ্দিনকে ‘আদু ভাই’ এবং শিবিরের সাংবাদিক আখ্যায়িত করে তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও প্রকাশ্যে ছাত্র-শিক্ষকের নিকট ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানায়।

মিসবাহর শিবির কানেকশানঃ

শাবির বন্ধু সভার সভাপতি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এনে উপাচার্য, প্রথম আলো বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগে স্মারকলিপি প্রদান করে বন্ধুসভার কার্যকরী সদস্যরা । মিসবাহ উদ্দিন নয় বছর ধরে অধ্যয়নরত থাকালেও এখনো স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারে নি। ক্যাম্পাসে সে আদু ভাই হিসেবে পরিচিত বলে শিক্ষার্থীরা জানান। মিসবাহ উদ্দিনের পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়, জামাতী নিয়ন্ত্রিত মিরা বাজার জামেয়া ইসলামীয়া মাদ্রসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করে শাবিতে ভর্তি হয়। অভিযোগ সম্পর্কে মিসবাহ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে কল কেটে দেয়।

জনকন্ঠের সাংবাদিক আবু তাহের টোটন বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের কর্মকান্ড সমর্থনকারী মুন্সি মিসবাহ প্রগতিশীল শিক-সংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। সংবাদিকের নাম ভাঙ্গিয়ে মূলত সে জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলে আমি মনে করি।’

জানা যায়, জামায়াতী প্রতিষ্ঠান শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়াতে পড়ুয়া মুন্সি মুহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের গুপ্তচরবৃত্তি, বিভিন্ন পত্রিকার ভুয়া পরিচয় দিয়ে শিবির ক্যাডারদের ক্যাম্পাসে একত্রকরণ, দু’ছাত্র হত্যাকান্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য “চেতনা’৭১ ভাঙ্গতে প্রকাশ্যে ইন্ধন দেওয়ার প্রামাণিক অভিযোগ রয়েছে।Click this link

মিসবাহ উদ্দীনের বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে শাবি শিবির নেতারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন যা কিনা আজকের নয়াদিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যা থেকে তার শিবির কানেকশান প্রমানিত হয়।

শাবি সাংবাদিকদের প্রতিবাদঃ

এদিকে সংবাদ প্রকাশের কারণে প্রতিবেদককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার বিষয়টিকে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের নজিরবিহীন ঘটনা’ অভিহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে গতকাল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।



বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। এ ব্যাপারে গতকাল একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বলেন, উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রতিবাদী অবস্থান:

‘মুক্ত-স্বাধীন সাংবাদিকতায় ক্ষমতার কালো থাবা—রুখে দাঁড়াও’ ব্যানারে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষিত ছয় দফা দাবি হচ্ছে—মিসবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও তথাকথিত হয়রানিমূলক তদন্ত কমিটি বাতিল, দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত মোস্তফা কামাল মাসুদের নিয়োগ বাতিল, ছাত্রী নিগ্রহে জড়িত কর্মচারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং রক্ষাকর্তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান, মুক্তচিন্তা ও গণমাধ্যমবিদ্বেষী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রতিবাদী সাংবাদিকদের পক্ষে ডেইলি স্টার-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখব।’ এই ছয় দফা দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ছাত্রলীগের কয়েকটি পক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট।

প্রথম আলোর বক্তব্য:

প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৭৪তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে প্রভাষক পদে নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪। কিন্তু সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মোস্তফা কামাল মাসুদ এসএসসিতে ৩ দশমিক ৭৫ এবং এইচএসসিতে ৩ দশমিক ৯০ পেয়েছেন।Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৯৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File