বাহ্যিক সৌন্দর্য্য বনাম মনের ভেতেরের সৌন্দর্য্য
লিখেছেন লিখেছেন রাবেয়া বসরী ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:২০:৫৫ দুপুর
বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় অন্তরের সৌন্দর্য্যের দিকে মনোযোগ কমে যায়। এই ধরনের মানুষ অনেক সময় দেখা যায় সংকীর্ণ মন মানষিকতায় ভোগে, যদিও তারা বাইরে দিয়ে অনেক স্মার্ট । তাই যারা পোষাক-আশাকের সৌন্দর্য্য, কথাবার্তার সৌন্দর্য্য, ঘরবাড়ীর সৌন্দর্য্য নিয়ে *বেশি* সচেতন তাদেরকে আমার কম ই ভাল লাগে। তাদের মধ্যে (মানুষের প্রশংসা পেতে পেতে) এক সময় লোক দেখানো মানষিকতার জন্ম হয় যাকে ইসলামে রিয়া বলা হয়। দেখা যায় যে মানুষের বাহবা পাবার জন্য তারা সচেষ্ট হয়ে ওঠে, যেই পরিমাণের চেষ্টা হয়তো আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার জন্য করে না। দেখা যাচ্ছে নিজের স্বার্থে তারা কোন অন্যায় করছে, কেউ তাদের আচরণে কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তারা সেটার ভ্রূক্ষেপ করছে না।
তাদের উদ্দেশ্যে হাদীসে কিছু কথা বলা হয়েছে যা মোটামুটি এইরকম যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যারা কাজ করে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টিও পায় এবং মানুষও তাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা মানুষের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে চলে আল্লাহ তাদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষও তাদেরকে খারাপ জানে।
এবারের রোযার ঈদে অনেকের মধ্যেই এরকম মানষিকতা দেখা যায় যে ঈদের দিন সানি লিওন ড্রেস পরতে না পারলে মনে হয় মান সম্মানই থাকবে না। ইন্ডিয়ান লেটেস্ট শাড়ী বা অন্যান্য নতুন ফ্যাশনের ড্রেস কিনতে না পারলে মনে হয় ঈদটাই মাটি।
কিন্তু আল্লাহর কাছে রোযাগুলো কবুল হল কিনা, অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ হল কিনা এই ব্যাপারে তাদেরকে সেই পরিমাণ উদ্বিগ্ন দেখা গেল না। অথচ আল্লাহ বলেছেন , "যে রমজান মাস পেল কিন্তু তার অতীত জীবনের গুনাহ গুলো মাফ করিয়ে নিতে পারলো না তার উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়।" রমজান শব্দটার অর্থ জালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া। এখানে মানুষের আমলনামা থেকে গুনাহ গুলো মাফ করে দেওয়া অর্থাৎ পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ মাসে কদরের রাত দেওয়া হয়েছে যে রাতে রয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে যে কোন কিছু আদায় করে নেবার মোক্ষম সুযোগ। রোযা রেখে আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজ করলে রোযা মাকরূহ হয়ে যায় বা ভেঙেও যায়, কবুল হয় না। সারা মাস রোযা রাখার পর চাদ রাতে আল্লাহ রোযাদারদের জন্য পুরস্কার নির্ধারিত করেন অর্থাৎ ফলাফল ঘোষণা করেন। ঈদের চাদ ওঠার পর পৃথিবীতে অবতরণ করেন অজস্র অগণিত ফেরেশতা এবং ঈদের নামায পর্যন্ত তারা অবস্থান করেন। তাই এই রাত হচ্ছে রোযাদারদের জন্য এক বিশেষ রাত। সারা সেমিস্টার কষ্ট করে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেবার পর রেজাল্টের দিন আমাদের যে পরিমাণ টেনশন হয় (প্রকৃত)রোযাদারদের এই দিনে সে পরিমাণ টেনশন হয়।
কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যে দেখা যায় সারা মাস রোযা রাখার পর তারা ঈদের দিন এমন উশৃঙ্খলতায় লিপ্ত হয় যে তা আর বলার না। ফুল ভলিউমে হিন্দি গান ছেড়ে দেয় (যেগুলোতে অনেক সময় অশ্লীল কথাবার্তা থাকে), অশালীন পোষাক-আশাক পরে ফাটাফাটি সাজ দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কম্পিটিশন চলে কাকে কার থেকে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। ছেলেমেয়ে একসাথে বসে আড্ডা মারে, হাসাহাসি করে, হাত ধরাধরি করে, ধাক্কাধাক্কি খায়, গাড়ীতে করে, রিকশায় করে ঘুরে বেড়ায়। ছেলেমেয়ে একসাথে ছবি তুলে নিজেরা নিজেরা আলাপ করে কাকে কার সাথে বেশি মানায়! আত্মীয়-স্বজনরা একত্রিত হয়, কে কার থেকে বেশি ম্যাচিং করে পরেছে, সুন্দর অর্নামেন্টস কিনেছে তার প্রতিযোগীতা চলে। আর একসাথে আড্ডা মারতে বসলে যা হয়, এর ওর নামে গীবত।
তারা বিলকুল ভুলে যায় আল্লাহ সব দেখছেন, আজকে আল্লাহ তাদের ফলাফল ঘোষণা করবেন। ঈদের দিন আনন্দ করতে বলা হয়েছে, নতুন জামা পরতে, ভাল ভাল খাবার রান্না করতে বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষজন এই দিনে আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের জোয়ার ভাসিয়ে দেয় !
বিষয়: বিবিধ
২০৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন