(নির্মম) সামাজিকতা বনাম ইসলাম(-এর মহানুভবতা)
লিখেছেন লিখেছেন রাবেয়া বসরী ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:২২:৩০ রাত
আমাদের এলাকার এক আঙ্কেল কিছুদিন আগে মারা গেলেন। ওনার দুই মেয়ে। মৃত্যুর সময় কেউই বাবা-মায়ের কাছে এসে থাকেনি বা থাকতে পারেনি। অথচ দুই মেয়ে ই ঢাকায় বাসা নিয়ে থাকতো। আঙ্কেলের কিডনী ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল দুইটাই, সপ্তাহে ৩ দিন ডায়ালাইসিস করানো লাগতো। শেষের দিকে ছোট মেয়েটা তার ছয় তলার উপরের ভাড়া বাসায় নিয়ে গেল বাবা কে। প্রতিবার ডায়ালাইসিস এর সময় বাবাকে কোলে করে ধরে নামানো হত আবার কোলে করে ধরে উঠানো হত। এত ঝামেলার কারণে মাঝে মধ্যে ডায়ালাইসিসে নেয়াও হত না। এতকিছুর পর ও দুই মেয়ের কেউ ই বাবা-মায়ের কাছে এসে একসাথে থাকলো না। তাদের সংসারের এটাসেটা নানানরকম সমস্যা হবে বলে।
আজকে আমার পরিচিত একজন ইসলামী মনা ব্যক্তির সাথে কথা হচ্ছিল। ইসলামী বিষয়ে ওনার গ্গ্যান, অধ্যয়ন অগাধ। ওনার পারসনালিটি, ফিলসপি সবসময় ই আমাকে মুগ্ধ করেছে। যথেষ্ট ম্যাচিউরড এন্ড এ্যাডাল্ট একজন পার্সন। আমার সাথে পরিচয় অনেক বছরের। এখন পর্যন্ত ওনার সব চিন্তাভাবনাগুলোর সাথেই যখনই পরিচিত হয়েছি মনের গভীরে কোথাও নতুন সূর্য উদিত হয়েছে, গ্গ্যানগর্ভ এবং মহানুভব আদর্শগুলো মনের অন্তঃস্থলে মিশে গিয়েছে। কিন্তু একটা বিষয়ে ওনার সাথে তর্ক সবসময় চলেই আসছে। আজও এই বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছিল। উনি আমাকে বললেন, " তোমার বাবাও তো ডায়ালাইসিস রুগী, মৃত্যু পথযাত্রী। তাদেরকে দেখার মত ও তো কেউ ছিল না। তুমি কেন বাংলাদেশে থাকতে তাদের সাথে থাকনি। কারণ তুমি থাকতে পার নি। পরিস্থিতি তোমাকে থাকতে দেয়নি, সামাজিকতা বলে একটা জিনিস আছে। এটাকে মেনে চলা লাগে। বাস্তবতার সাথে মিল রেখেই আমাদেরকে চলতে হয়। "
হ্যা আমি থাকতে পারিনি। প্রচন্ড আয়রনিক সত্য একটা কথা। সমাজের প্রতিকূলতাকে আমি প্রতিরোধ করতে পারিনি। কিন্তু ইসলাম তো অন্য জিনিস। বাস্তবতাকে সহনীয় করার জন্য ই তো ইসলাম এসেছে। অনেকে বলে ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যা সহজাত ভাবে আসে তাই ইসলাম। আমি ওনাকে জবাব দিলাম, " কিন্তু ইসলাম তো সামাজিকতা দেখে চলে না, সব পরিস্থিতিকে সঠিক পথে পরিবর্তন করার জন্য ই তো ইসলাম এসেছে।"
পরিস্থিতির চাপে ইসলাম চলে না, বরং ইসলামের চাপে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়।
সামাজিকতার কারণে ই মানুষ যৌতুক দিচ্ছে/নিচ্ছে , পরিস্থিতির কারণেই মেয়েরা নিজের উপার্জিত টাকা বাবা-মা কে না দিয়ে স্বামীর হাতে তুলে দিচ্ছে। এসব সামাজিকতা এবং পরিস্থিতিকে পরিবর্তন করার জন্য ই তো ইসলাম এসেছে।
আমাদের এলাকার সেই আঙ্কেলের সন্তান দুটি মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হত তাহলে সমাজ কি পরিমাণ সমালোচনার ঝড় তুলত আর এখন কি পরিমাণ বেহায়ার মত নীরব হয়ে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু একটা কথা বলি যে সমাজ কখনো সঠিকতার মনদন্ড হতে পারেনা। সমাজ সবসময় অন্ধের মত চলে, এক চোখ বন্ধ রেখে চলে। সে কখনো মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার দেয় না, এক পক্ষকে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা দেয় আর আরেক পক্ষ কে অনেক কম সুবিধা দেয়, অনেক ক্ষেত্রে কিছুই দেয় না।
অনেক আগে একটা স্ট্যাটাস আমি প্রায়ই দিতাম- "অভ্যস্ততা খুব খারাপ জিনিস। অনেক অস্বাভাবিক জিনিসও সবসময় দেখতে দেখতে একসময় মানুষের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়। "
তখন এই আন্টি ই আমাকে সাপোর্ট দিতেন, নির্মম সামাজিকতার বিরুদ্ধে ইসলামের মহানুভবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রেরণা দিতেন। আর আজকে তনিই আমাকে সামাজিকতার দোহাই দিলেন !
এই আন্টিকে হয়তো আমি বুঝাতে সক্ষম হব কারণ উনি চিন্তাশীল মানুষ। কিন্তু আমাদের সমাজের আর সব সাধারণ মানুষকে কে বুঝাবে ? আমরা কেউ ই নিজেরা ভুক্তভোগী না হওয়া পর্যন্ত অন্যের সমস্যা বুঝি না। আমি নিজেও একসময় সমাজের দোহাই দিতাম। আর চিন্তাহীন ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী হওয়ার পরও বুঝিনা। আর বেশিরভাগ ই নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়গুলোকে মেনে নেই, একারণে অন্য কারো সাথে সেই অন্যায়গুলো হতে দেখেও চুপ করে থাকি। আবার কেউ মেনে না নিলেও উল্টা বিরোধিতা করি, বলি যে "আমরা তো মেনে নিয়েছি, সে কেন মেনে নিচ্ছে না?"
বিষয়: বিবিধ
১৯১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন