ছোট গল্প - ১
লিখেছেন লিখেছেন হারানো ওয়াছিম ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:২৮:১৯ দুপুর
সে কেবলই ছবি
কথাটি শোনার পর ইচ্ছা করলেই হেসে উড়িয়ে দিতে পারতাম। অভ্যাস গত ভাবে যে কোন কথা প্রথেমে হেসে উড়িয়ে দেওয়াই আমার কাজ। কঠিন পৃথিবীর কোন কিছুই সহজে আমার মধ্যে আলোরন সৃষ্টি করতে পারে না। বুঝতে পারলাম পরিবর্তন হচ্ছে। তরল থেকে কঠিনে।
আজ অনন্যার বিয়ে। বিয়েতে আমি উপস্থিত হয়েছি বিষটি রজনিগন্ধা আর একটি গোলাপ নিয়ে। অনন্যাকে বলেছিলাম একদিন তোমাকে আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহারটি দিব। হৃদয় থেকে। আজ উপহার নিয়ে বসে আছি। কতক্ষন হবে বলতে পারবো না। বসে আছি তবুও। সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন? এমন তো হবার কথা ছিলো না। আজ অনন্যা যে বিয়ের আসরে বসে আছে সে তো আমার ইচ্ছাতেই। সে তো আমার কাছে এসেছিলো। আমি চেয়েছিলাম শূন্যতা। অনন্যা আমাকে শূন্যতা দিয়েছে। আর আমি এখন শূন্যতা নিয়ে বসে আছি। হঠাৎ হৈ-চৈ করে একদল ছেলে মেয়ে অনন্যাদের বাসার গেটের সামনে এসে দাড়ায়। হয়তো বর এসেছে তাই।
ঢাকা শহরের রাস্তায় সহজে কাউকে খালি পায়ে হাটতে দেখা যায় না। কোন এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় আমি খালি পায়ে হাটতে ছিলাম। তখন কবিতার দুটি লাইন মাথার মধ্যে–
তবুও এ সন্ধায় সখি
বুষ্টি ভেজালো তোমার দু আঁখি।
আগে পিছে কোন লাইন ই দাড় করাতে পারছি না। তাই লাইন গুলো খুজে চলছি রাস্তায় রাস্তায়। হাটতে হাটতে চলে এলাম রহিম মামার দোকানের সামনে। মামা এক কাপ চা দাও বলেই যখন বেঞ্চে বসলাম সহসা কানে এলো
- চেপে বসেন ভিজে যাচ্ছি
তাকিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম – সখি তোমার আখিতে জ্বল। মেয়েটি উঠে দাড়ালো। হয়তো ভাবছে পাগল। হয়তো গায়ের পোশাক দেখে তা মানতে পারছে ন।
- আপনি কি হিমু?
- কোন হিমু?
হিমুকে চেনেন না?
চিনবো না কেন, ভার্চুয়াল হিমু এবং নাটক করে যে হিমু দুই হিমুকেই আমি চিনি। তবে আমি এ দু-জনের কেউই নই।
- তাহলে আপনার পা খালি কেন?
- সেটা এ বৃষ্টির অবদান, ছিড়ে গেছে।
- আপনি এ সন্ধায়, এখানে?
- তাও এই বৃষ্টির অবদান।
তারপর আমি দোকান থেকে একটি ছাতা তাকে ধার দিলাম। পরদিন সে ছাতা ফেরত দিতে এলো দোকানে। সেই থেকে অনন্যার সাথে আমার একই পথে হেটে চলা। আর তখন থেকেই আমার কবিতা মোর নেয় অপেক্ষা থেকে ভালোবাসার দিকে। যে কবিতার জন্য অনন্যা পাগল ছিলো কিছুদিন পর থেকে সেই কবিতা আমার কাছে আসা বন্ধ করে দিলো। দিনের পর দিন যায় আমার কবিতার খাতা শুন্য পরে থাকে। তাই আমার শুন্যতার দরকার হয়ে পরলো। আমার শুন্যতা চাই। আমার কবিতার জন্য।
অনন্যা বললো তাকে দেখতে আসবে। আমি বললাম পছন্দ হলে বিয়ে করে ফেলো। ও কষ্ট পেলো কিনা তা বুঝতে পারলাম না। হয়তো ভেবেছে এটা আমার হেয়ালিপনা। আমি বললাম আমার বিরহ দরকার। আমি কবিতা লিখতে চাই। অনন্য চলে গেল। বললো আমার বিয়েতে তুমি এসো। তার চলে যাওয়া আমার কাছে অন্য রকম লাগলো। শূন্যতা কি তা তখন থেকেই বুঝতে শুরু করলাম।
এখন যদি বৃষ্টি হতো তাহলে হয়তো ভিজিয়ে দিতাম আমার শূন্যতাকে। ইচ্ছা করছে অনন্যাকে গিয়ে বলি – ক্ষমা কর আমায়। তোমাকে হারিয়ে যে শূন্যতা আমি পেয়েছি তাতে কিচ্ছু নেই। না তুমি, না একটা কবিতার লাইন।তুমি ফিরে আস। অনন্যা ফিরে আসে না। সে হারিয়ে যায়। অদৃশ্যে মিশে যায়। আর আমি রাস্তায় রাস্তায় হেটে চলি।
বিষয়: সাহিত্য
১৯১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন