২০৩২ সালে, যেমন হতে পারে জাফর ইকবালের "কিন্তু"
লিখেছেন লিখেছেন চেয়ারম্যান ০৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৯:৪৫ রাত
২০৩২ সাল.. ১৯৭১ সালের যুদ্বাপরাধীদের বিচারের পর দেশ আজ কলঙ্ক মুক্ত। ৬ মাস আগের নির্বাচনে বিশাল মেন্ডেট নিয়ে,বিএনপি,আওয়ামিলীগ ও জামায়াতের বাহিরে,একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এসেই সরকার স্বাধীনতার সময় আরো যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে কিন্তু বিচার হয়নি,তাদের ও তার পরবর্তী যেই সব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেগুলোর বিচার করার জন্য ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার আন্তর্জার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালকে আবারো সচলকরা হলো ।
একই আইনে যেহেতু আগে ও বিচার হয়েছে। যদি ও বলা হয়েছে যুদ্বাপরাধীদের বিচার। কিন্তু এটি ছিলো আসলে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার। তাই এখনো মানবতাবিরোধীদের বিচার করতে এই ট্রাইবুনালের সমস্যা হবে না।
বিচারপতি আব্বাসকে প্রধান করে এই ট্রাইবুনাল বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো।
প্রথমেই ২৮ শে অক্টোবরের লগি বৈঠা তান্ডবের জন্য বাপ্পাদিত্য বসু , ডাক্তার ইকবাল , হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হলো। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিডিয়ার হত্যাকান্ডের জন্য শেখ হাসিনা , ফজলে নুর তাপস ,সাহারা খাতুন , টুকু।, মির্জা আজম,ইনু সহ আওয়ামীলীগের তত্কালীন মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলো।
৭১ এ মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় , শেখ হাসিনার বেয়াই , মোশারফ হোসেন , আওয়ামীলীগের ট্রেজারার আশিকুর রহমান সহ বেশ কিছু রাজাকারকে।
মডেল রাহা কে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় একাত্তর টিভির নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু , ও সাগর রুনির হত্যার জন্য জ,ই মামুন ও মাহফুজুর রহমানকে।
২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর গুম হত্যার জন্য গ্রেপ্তার হন আসাদুজ্জামান নুর ও শামিম ওসমান
হেফাজতের উপর গণহত্যার উস্কানি ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতার জন্য গ্রেপ্তার করা হলো , লাকি , ইমরান , আরিফ জেবতিক সহ আরো কিছু নেতাকে। পাকিস্তানিরা যেমন যুদ্বের সময় বিভিন্ন ক্যাম্প বানাতো , ঠিক একই ভাবে শাহবাগীরা লাল পর্দার ক্যাম্প বানিয়ে নারীদের জোর করে ধর্ষন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করতো। এই কারণেই গ্রেপ্তার করা হলো লালপর্দার নৃশংসতার গুরু অমি পিয়াল , গায়ক প্রিতম ও রাসেল রহমানকে।
হেফাজতের উপর অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করা হলো , তত্কালীন র্যাবের কর্নেল জিয়া , বিডিয়ার প্রধান আজিজ ও পুলিশ কমিশনার বেনজির ও সাবেক এডিসি মেহেদিকে।
২০১২ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী সাইদীর রায়ের পর একই দিনে ১৭০ জনকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কারণে গ্রেপ্তার করা হয় আরো কিছু সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাকে।
এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর জনমনে সন্তোষ দেখা দেয়। অন্যদিকে যারা প্রথম পর্যায়ের(২০১০-২০১৪) মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সমর্থক ছিলো , তারা বিপরীত পক্ষে অবস্থান নিলো। বিচার বন্ধ করতে বিদেশে লবিং করলো। বর্তমান লেবার এমপি (২০৩২ সাল খেয়াল কইরা ) শেখ হাসিনার ভাগনী টিউলিপকে দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রস্তাব তোলার জন্য আহবান করে যাতে এই বিচার বন্ধ করা যায়। শেখ হাসিনার ছেলে জয়কে দিয়ে আমেরিকার বিখ্যাত ল ফার্মকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে লবিং করা হলো যাতে এই বিচার বন্ধ করা যায়। বিচার কার্যে সাহায্যের জন্য লন্ডনের বাঘা বাঘ আইনজীবিদের নিয়োগ দেয় আওয়ামীলীগের নেতারা।
কিন্তু সরকার সব কিছুকে তোয়াক্কা না করে বিচার শুরু করলো। সবার বিরুদ্বে বিভিন্ন অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করা হলো। এবং সরকার ঘোষণ দিলো সবার বিচার হবে প্রকাশ্যে এবং সম্প্রচার হবে টেলিভিশনে।
বিচার শুরুর পর বিচারপতি আব্বাস ভুল করলেন। মানবতা বিরোধী বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া লন্ডন প্রবাসী এক আইনজীবীর সাথে বিচার নিয়ে স্কাইপে ও ইমেইলে কথা বলতেন। সাক্ষী কেমন হবে , রায় কেমনে লেখা হবে। আগামী কাল কোর্টে কি আপিল করবে। আপিল করার আগে আপিল খারিজ করে দেওয়া হবে। এই ধরনের কথা বলতো আব্বাস ।
জাজমেন্টের ড্রাফট লিখে দেওয়ার জন্য ও বলতেন। বলতেন সরকার থেকে প্রেসারের কথা ও।
হটাত একদিন লন্ডনের বিখ্যাত ইকনমিস্ট পত্রিকায় এই কথোপকথন ফাস হয়ে যায়। পরের দিন দৈনিক জনকন্ঠ ও প্রথম আলো পত্রিকায় , সরকার গেছে পাগল হইয়া , তারা একটা রায় চায় এই শিরোনামে পুরো স্কাইপে কনভার্সেশন ছাপা হয়। পুরোদেশ হটকেকের মত গিলে নেয় পত্রিকা। ২০ টাকার পত্রিকা বিক্রি হয় ২ হাজার টাকা।
পরের দিন আবার ছাপা হয় , রথীন্দ্রনাথ বাবু কইছে , হাসিনা ও তার বেয়াইয়ের ২ টা রায় দিয়ে দিতে তাহলে আপিল বিভাগে নিয়ে নিবে।
সারা দেশে হুলুস্থুল কান্ডের পর বিচারপতি আব্বাস পদত্যাগ করলে বিচারপতি বেলায়েতুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ দেওয়ার কয়েক দিন পর, স্কাইপে সংলাপ ছাপানোর কারণে, বিচার কার্যক্রম বানচালের অযুহাতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রথম আলোর মালিক লতিফুর , সম্পাদক মতি ও জনকন্ঠের আতিকুল্লাহ খান মাসুদকে।
শেখ হাসিনার বেয়াইয়ের পক্ষের এক গুরুত্বপূর্ন সাক্ষীকে আজ আদালতে উঠানোর কথা। সেই সাক্ষীর ভাইকে খুন করার অভিযোগে বেয়ায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই সেই সাক্ষীকে গুম করা হয়। পরে জানা যায় সেই সাক্ষী ভারতের কারাগারে আছে।
হাসিনা , বেয়াই , তাপস , বেনজির যাদের পক্ষেই যদি কোন আপিল করা হয় , সাথে সাথেই খারিজ করা দেওয়া হয়।
তারপর বিচারের বিপক্ষে অবস্থা নেওয়া আওয়ামীলীগ ও শাহবাগীরা ,ন্যায় বিচার হচ্ছে না বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারণা করতে থাকে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্বে সাক্ষী না দেওয়াতে এক সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করে ট্রাইবুনাল।
এইভাবেই চলতে লাগলো বিচার প্রক্রিয়া। সুশীল সমাজের কিছু লোক বিচারের বিরুদ্বে সরাসরি অবস্থান না নিলে ও আন্তর্জার্তিক মানের স্বচ্ছ বিচারের আহ্বান করতেন। আর যেহেতু অধিকাংশ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন ,তাই সারা দেশে আওয়ামী তান্ডবে একদিনে ১০০০ নিহত। অসংখ্য বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। কিন্তু কোনভাবেই এই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয় না। সরকার ও গেল আরো হার্ড পজিশনে। গোপালগঞ্জের অনেক ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হলো। আওয়ামীলীগ দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিল।
এরই মধ্যে হাসিনার বেয়াইয়ের মামলায় ফাসির রায় দেওয়া হয়। যদি তার সাক্ষী কিভাবে ইন্ডিয়ায় গেল তার সুরহা না করেই।
অমি পিয়ালের বিরুদ্বে লাল পর্দার ক্যাম্পে ২৭০ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফাসির রায় দেওয়া হয়। ফাসির রায় দেওয়া হয় লগি বৈঠার খুনি বাপ্পাদিত্যকে ও।
বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার পক্ষের আইনজীবিরা যেখানে সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য ২০ মাস সময় ও ৫০ জনের সাক্ষী দেওয়ার অনুমতি পায়, সেখানে পিয়ালের পক্ষে মাত্র ২ জনকে সাক্ষী দেওয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো ।
তারপর আওয়ামীলীগের সবাই আবার দাবি তুললো স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া চাই। আন্তর্জার্তিক মানের বিচার চাই। এই ট্রাইবুনাল চলতে পারে না। এখানে ন্যায় বিচার পাবে না।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললো। এর মধ্যে আপিল বিভাগে রায়ের পর অমি পিয়ালের ফাসির রায় কার্যকর করা হয়। কিন্তু তার আগে ঢাকাতে তরিকত ফেডারেশন দিয়ে বিশাল সমাবেশ করে সরকার পতনের ডাক দেয় আওয়ামীলীগ। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এর পরে আস্তে আস্তে শেখ হাসিনা , বেনজির , মির্জা আজম , মাহফুজ , মোজাম্মেল বাবুর ফাসির আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল।
শেখ হাসিনার মত একজন খুনিকে কিভাবে বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী বানালো,তা সারা দেশের জন্য কলঙ্ক হিসেবে পর্যবেক্ষণ দিলো আদালত। হাসিনার বিরুদ্বে একজন সাক্ষী দিয়েছিলেন যে , বিডিয়ার হত্যার রাতে তিনি দেখেছেন, হাসিনা ও সাহারা খাতুনের সরাসরি সহযোগিতায় কিভাবে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় । এই সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই হাসিনাকে ফাসি দেওয়া হয়। যদি ও হিসেব করে দেখা গেছে ওই দিন ছিল অমাবস্যার রাত। সাক্ষী তাদেরকে দেখার কথা না।
বিচার প্রক্রিয়া শেষে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল , অধিকাংশ রায় দেওয়া হয়েছে সাক্ষীদের সেইফ হাইজে রেখে শিখিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে । অর্থাত আদালতে কিভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে তা শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। অনেককে একটি বাড়ি ও একটি পুকুরের লোভ দেখিয়ে সাক্ষী করানো হয়। অধিকাংশ সাক্ষী ছিলেন , যারা ঘটনার প্রথ্যক্ষদর্শী ছিলেন না। তারা শুধু শুনেছেন। এই শুনা সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই তাদের ফাসি দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে চারদিকে দাবি উঠে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ব করার। এই ধরনের সংগঠন বাংলাদেশে থাকতে পারে না। তারা বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে নি। মেনে নিলে কিভাবে এত খুন , ধর্ষণ হত্যা রাহজানি করে ?
দেশের জনপ্রিয় লেখক, বিশিস্ট বুদ্বিজীবি , মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ভিতরে ভিতর ফুসলে ও এত দিন আকারে ইঙ্গিতে এই বিচারের বিপক্ষে বলতেন। সরাসরি কিছু বলতেন না। যদি ও ভিতরে ভিতরে এই বিচার বন্ধের জন্য আমেরিকায় লবিং করতেন ।
এরপর হাসিনা সহ সবার ফাসির রায় হওয়ার পর তিনি বিডি নিউজে
কিন্তু
শিরোনামে এক বিশাল লেখা লিখলেন।
লেখার সারাংশ হলো , ৭১ ও তার পরবর্তী সময়ে দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের অপরাধে আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত ছিলেন না। যদি ও জড়িত থাকে আমরা তাদের বিচার চাই। কিন্তু বিচার হতে হবে আন্তর্জার্তিক মানের।
প্রথম পর্যায়ের বিচারের সময় জাফর ইকবালের কিন্তু শিরোনামের লেখার সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিচারের পর কিন্তুর বিষয়বস্তুর ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলের বৈপিরত্য দেখে জাফর ইকবালের বউ ইয়াসমিন আত্মসম্মানবোধে আত্মহত্যা করে।
ভিজিট করতে পারেন আমার ব্লগে
বিষয়: বিবিধ
৩০৫০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু শেখ হাসিনা যখন বলেন, " আমার বেয়াই রাজাকার কিন্তু যুদ্ধাপরাধী না। ইন্ডিয়া আমাদের সীমান্তে হয়ত কিছু মানুষ মারে কিন্তু তারা আমাদের বন্ধু"
তখন "কিন্তু" শব্দটা খুব শ্রুতিমধুর লাগে। মনে হয়, এটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শব্দ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন