হিউম্যান রাইটস বা মানবাধিকার..পুলিশ ও আদালতের কিতাবে আছে কিন্তু বাস্তবে নেই
লিখেছেন লিখেছেন চেয়ারম্যান ১৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:২৮:০৫ সন্ধ্যা
মানবাধিকার একজন মানুষের সার্বজনীন অধিকার।
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী মানবাধিকার হলো-----
মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে দারুনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আজকে কোনো এক কারণে বাংলাদেশের পুলিশের ওয়েবসাইটে গেলাম। সেখানে দেখলাম লাল কালিতে মানবাধিকার নিয়ে অনেক কথাবার্তা লেখা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে পুলিশ কতৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখে বুঝা যায় পুলিশ হয়তো নিজেরাই এগুলো সম্পর্কে জানে না , অথবা নিজেরা জেনে বুঝে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
পুলিশের ওয়েবসাইটে মানবাধিকার নিয়ে বলা হয়েছে :
Bangladesh Police aims to enhance the capacity and willingness of all its members to contribute in a collaborative manner to the creation of a safer and securer environment based on respect for human rights, equitable access to justice, and rule of law in accordance with the spirit of our constitution and the principles of the universal human rights. We always attach paramount importance to uphold the cause of human rights. Members of our law enforcement agencies are well conversant with the Constitutional Guarantees regarding the‘Inherence’ and ‘Inalienability’ of human rights.
যার সারমর্ম হলো ,বাংলাদেশে পুলিশের লক্ষ্য হচ্ছে , পুলিশের সকল সদস্যদের সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জার্তিক মানবাধিকারের নীতি ও সংবিধানের স্পিরিট অনুযায়ী সবার জন্য ন্যায়বিচার , আইনের শাসন , মানবাধিকারের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। এবং আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাংবিধানিক নিশ্চয়তার মাধ্যমে মানবাধিকার সমুন্নুত করার ব্যাপারে জ্ঞাত/ পরিচিত থাকবে।
সূত্র : http://www.police.gov.bd/humanrights.php?id=65
কিন্তু বর্তমানে পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখলে বুঝা যায় পুলিশ নিজেদেরই মানবাধিকারের এই সব নীতিকথা মানছে না। নারী পুরুষ কেউ আজ পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
রিমান্ডে করছে অমানবিক নির্যাতন। মানছেনা সুপ্রিম কোর্ট কতৃক দেওয়া নির্দেশনা। সুস্থ সবল মানুষ পুলিশী নির্যাতনে হয়ে যাচ্ছে পঙ্গু।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রিমান্ডের নির্দেশনা হচ্ছে -----
১) আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।
২) কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
৩)গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে।
৪) গ্রেফতারকৃতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য নিয়ে ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ।
৫) গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে।
৬)বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতারকৃতের নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে।
৭) গ্রেফতারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
৮)গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন।
৯) কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।
১০) জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
১১)পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
১২) পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে। ড. পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয় ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে এবং নির্দেশনার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয়। কিন্তু আপিল বিভাগ নির্দেশনাগুলো স্থগিতাদেশের আবেদন নাকচ করে দেয়।
সুতরাং হাইকোর্টের ওই নির্দেশনা মান্য করা সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকার, পুলিশ এমনকি খোদ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই নির্দেশনাগুলো মানছে না।
আদালত যে মানছে না , তার প্রমান অতীতের মত আজকে ও দেখা গেছে। শফিকুল ইসলাম মাসুদ নামের জামায়াতের এক নেতাকে ৪ দিনের রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের পর অসুস্থ অবস্থায় আবারো ২ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত।
এতে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে
সূত্র-- :http://www.onbangladesh.org/newsdetail/detail/200/87562
এই নিয়ে ইত্তেফাকের এক রিপোর্টে ও বলা হয়েছে , রিমান্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না নিম্ন আদালত।
সূত্র : http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMjhfMTNfMV8xXzFfMjk0NTE=
তাহলে এই অপরাধে শুধু পুলিশ না , আদালত ও জড়িত।
শুধু রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব না , পুলিশ ও র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেরাও বাদ যাচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের কথা কেউ ভুলে যাওয়ার কথা নয়। র্যাব যাদেরকে গুম করে সরাসরি নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
এই হত্যাকান্ডে বর্তমানে সরকার দলীয় মন্ত্রীর মেয়ের জামাইকে র্যাব থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
মিরপুরে জনি নামের এক যুবককে থানায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে পুলিশ। ৯ ফেব্র“য়ারি মিরপুরের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের হলুদের অনুষ্ঠান থেকে দুই ভাই জনি ও রকিকে আটক করে নিয়ে যান এসআই জাহিদ। নির্যাতনের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জনি মারা যান। - See more at: http://www.jugantor.com/news/2014/08/08/131707#sthash.xDcIFjcB.dpuf
এই রকম হাজারো ঘটনায় পুলিশ জড়িত।
নিউজ ইভেন্টের গত মাসে এক খবরে জানা যায় , গত চার মাসে পুলিশের হাতে নিহত ৪৯.
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় র্যাবকেও ছাড়িয়ে গেছে পুলিশ। যদিও পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে খুব কমই আলোচনা হচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৮৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জন, মার্চ মাসে ১৬ জন এবং এপ্রিল মাসে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অধিকার এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, এই চার মাসে নিহতদের মধ্যে পুলিশের হাতে মারা গেছেন ৪৯ জন, র্যাবের হাতে ১৫ জন, যৌথ বাহিনীর হাতে ২১ জন, র্যাব ও বিজিবির হাতে দুইজন ও কোস্টগার্ডের হাতে তিনজন। - See more at: http://www.newsevent24.com/2014/05/22/country/crime/132771#sthash.PTb9sfXk.dpuf
এগুলো হলো গুম খুনের একটি সংক্ষিপ্ত হিসাব। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। মানবাধিকার নিয়ে পুলিশের কথাগুলো শুধু কাগজে থাকলে হবে না , অথবা আদালতের নির্দেশনা থাকলেই চলবে না। দরকার তার যথাযথ বাস্তবায়ন। মিডিয়াগুলোকে ও রাজনীতিক বিভক্তি ছাড়িয়ে সোচ্চার হতে হবে মানবাধিকার রক্ষার্থে
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ চেয়ারম্যান-কে মানবাধিকারের বিষয়ে উপযুক্তি তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন