আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(১১)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ১৬ মার্চ, ২০১৩, ১১:৩১:৪৩ সকাল



আগের পর্ব : ১০...Click this link

রুমি কি কোন ব্যাপার চাইছে আমার কাছে! খুব উৎসুক হয়ে বলল "নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে"

আমিও হতাশ করতে চাইলামনা, "হুম আজ আমার জন্মদিন তায় মনে হলো আজ পাঞ্জাবীই পড়ি, যেখানে যায়না কেন"

আশ্চর্য আমাকে আগে বলনি কেন!

কেন বললে কি হতো?

ওইস করতাম। চলো আজ আর ক্লাশ করবনা, তোমাকে নিয়ে ঘুরবো

তখন বইমেলা চলছিল, আমরা গিয়েছিলাম বই মেলায়, আমার জীবনে এমন কোন নারী বন্ধুর সাথে ঘুরতে যাওয়া বা একসাথে রিকশায় চড়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথম সম্ভবত, সেইদিন দ্বিধা আর শংকার বাইরে আমি আরো কিছু একটা অনুভব করেছিলাম তবে সেটা কি আমি সেদিন বুঝিনি কিংবা আজও বুঝা হয়নি আর কখনো বুঝা হবেনা তা নিশ্চিত বলা যায়

বই মেলায় আমরা খুব একটা সময় ছিলামনা, দু'একটা ষ্টল ঘুরে রুমি একটা বই কিনেছিল "শেষের কবিতা" এইতো সেদিন আমি এই উপন্যাসটার খুব প্রশংসা করেছিলাম রুমির কাছে, "ভাষা, চরিত্র, কাহিনী, বর্ণনাশৈলী সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের এই উপন্যাসটি আজও আমার কাছে আধুনিক এবং সমসায়িক, উপন্যাসটি পড়লে আমার কখনো মনে হয়না আমি রবীন্দ্রযুগের কোন লিখা পড়ছি, মনে হয় বর্তমান সময় এবং প্রেক্ষাপটে লিখা

আবার রিকশা নেয়া হল, আমি নেমে যাব মাঝপথে বাস ষ্টেন্ডে আর রুমি যাবে তার নানু বাড়ীতে, আসলে সে নানু বাড়িতেই থাকে, বড় মামার মেয়ে মামাতো বোন রিমি আর রুমি সম বয়েসি, এমনকি তাদের নাম ও রাখা হয়েছে মিল রেখে, কলেজ থেকে রুমিদের বাড়ীর দুরুত্ব বেশী হওয়াতে সে মামা বাড়ীতেই থাকে রিমির সাথে

রিমির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আরো অনেক পরে, একদিন কলেজে এসেছিল, কলেজের সেদিকটায় কোন এক কাজে যাচ্ছিল আর যাবার পথে ভাবল রুমিকে ও সংগে নেবে তাই কলেজে চলে এল রুমির খোঁজে, সেই সূত্রে আমার সাথে পরিচয়, তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম রিমি সেদিন আমাকেই দেখার ছলে এসেছে, রুমি নিশ্চয় তাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেছে, কেননা তারা দু'জনের ভাবটা এমন যে, একজনের পেটে একটা কথা ঢুকলে সেটা নিমিষেই অন্যের পেটে চলে আসে, যতক্ষণনা কথার এই ট্রান্সমিশনটা না হচ্ছে ততক্ষণ অস্থিরতা বোধ করে বলা যায়

আমরা তিনজন সেদিন কলেজের পাশেই একটা রেষ্টুরেন্টে কিছুটা সময় পার করেছিলাম, সেই দিনের একটা দৃশ্য আমার চোখে এখনো ভাসে এবং মাঝের মধ্যে মনেও পড়ে, "রিমি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল আবার রুমির দিকে, রুমি ব্যাপারটা খেয়াল করেনি কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম রিমি একটু চাপা হাসি মুখে এই কান্ডটা করছিল" জিজ্ঞাসা করেছিলাম "হাসছেন কেন" বলেছিল কিছুইনা, এমনি

রুমি বইটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল, "এই নাও তোমার বার্থ ডে গিফ্ট" আমি বলেছিলাম কিছু একটা লিখে দাও, সে বলল কি আর লিখব, এখন কিছুই মনে আসছেনা, আমিও জেদ ধরলাম, লিখতে হবে না হলে নেবনা, এই রিকশা থামাও বলে থামিয়ে দিলাম রিকশাটা, না লিখা হলে রিকশার চাকাও ঘুরবেনা, রুমি বাধ্য হয়ে লিখেছিল

"পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি

আমরা দু'জন চলতি হাওয়া পন্থি"

বইটা আমি ঘরে এসে বড় ভাইয়ার বুকসেল্ফে রেখে দিয়েছিলাম আর রুমির লিখা পৃষ্ঠাটা ছিড়ে রেখেছিলাম, কেননা আমি চাইছিলামনা অন্য কেউ বইটা পড়তে গিয়ে আবার কোন উপন্যাসের প্লট খুঁজে পাক, পৃষ্ঠাটা আমি যতনে রেখে দিয়েছিলাম

চলবে.............

বিষয়: বিবিধ

১২৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File