আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(১০)
লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৩৫:৪৯ দুপুর
আগের পর্ব : ৯...Click this link
অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে চেষ্টা করছিলাম নিয়মিত ক্লাশ করতে কিন্তু এক নতুন বিপত্তি, প্রায়ই শুনি স্যার ক্লাশ নেবেনা, উপস্থিত সবার রোল নাম্বার লিখে স্যারকে দিয়ে আসলে ওনি রেজিষ্ট্যারে প্রেজেন্ট দেখিয়ে দেবেন।
ক্লাশে কারো সাথে খুব একটা পরিচিতি ছিলামনা একমাত্র পুরোনো বন্ধু জয়নাল ছাড়া, আমার ব্যাগে বই থাকতো, লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকা ইত্যাদি, স্যার ক্লাশ নেবেনা সবাই বসে গল্পগুজব করছিল, আর আমি যেহেতু কারো সাথে সহজে মিশতে পারতামনা তাই টাইম পাস করার জন্য আমি ব্যাগ খুলে হাতে নিলাম একটা সাহিত্য পত্রিকা
বড় ভাইয়ারা একটা মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের করতো, মাত্র দুই পাতার দামও ছিল দুই টাকা, কেউ চাইলে না কিনে দোকানে বই ঘাটার ছলে পড়ে রেখে আসতে পারে, পত্রিকাটা ভাইয়ারা বের করতেন একটা দায়িত্ববোধ থেকে, ওগুলো পড়ে যদি দুই একজন পাঠক বাড়ে কিংবা দুই একজন ভাল লেখক বের হয়ে যায় বলাতো যায়না, আমি ভাইয়াদের সেই সাহিত্য পত্রিকাটা বের করে পড়ছিলাম, চারপাশে হৈ হুল্লোড় চেচামেচির শব্দ, তবুও একাকিত্ব কাটানোর জন্য এটাই উত্তম পন্থা বলে মনে হলো
মাসিক সাহিত্য পত্রিকাটায় প্রথম পৃষ্ঠায় নাজির ভাইয়ার একটা প্রবন্ধ থাকতো, যেটা প্রথম কতটুকু পড়ে আবার বেক করতে হতো, কেমন যেন কঠিন কঠিন বিষয়,ইসলামরে একেবারে ভেতরকার কথাবার্তার সাথে ইউরোপের চলমান জীবনদর্শণ ইত্যাদির তুলনামুলক লিখালিখি ইত্যাদি, তারপর ভাইয়ার এবং আরে দুই একজনের কিছু কবিতা তারপর শেষে থাকতো পলাশ ভাইয়ার একটা ছোট গল্প, আমি ভাইয়াদের কবিতাগুলোও খুব একটা বুঝতামনা কিন্তু ভাল লাগতো পলাশ ভাইয়ার গল্পগুলো, দৈনন্দিন এর ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে খুব সহজ এবং সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতেন পড়লে মনে হত চেষ্টা করলে বোধয় আমিও লিখতে পারব, চেষ্টা করিনি তা না, কিন্তু লিখতে গিয়ে বুঝলাম কত কঠিন!
আমার পাশে বশা সেলিম এবং আরো দুই একজন সহপাঠি গল্প করছিল, একটু খেয়াল করলাম বিষয় ছিল উপন্যাস, রুমি জিজ্ঞেস করছিল সেলিমকে, আচ্ছা ওটা পড়েছিলে চোখের বালি, নৌকাডুবি ইত্যাদি, সেলিম আসলে এসব উপন্যাস খুব একটা পড়েছে বলে মনে হলনা কিন্তু সে এমন একটা ভান করছে যে সবগুলিইতো পড়েছে তবে কাহিনী মনে আসছে আবার ছুটে যাচ্ছে এমন একটা ভান করে রুমির কাছে নিজেকে জাহির করার একটা প্রবণতা লক্ষ করলাম
রুমি যখন জিজ্ঞেস করল লোটা কম্বল পড়েছো? তখন সেলিম একেবারে চুপসে গেল, সে লোটাকম্বল নামটাই শুনেনি, আমিই জববা দিলাম হুম, সজ্ঞিব চট্টোপাধ্যায় এর, পড়েছি, খুব ভাল লেগেছে যদিও দ্বিতীয় খন্ডটা পড়া হয়নি এখনো, সেইদিন বেচারা সেলিম আর জমাতে পারলনা আমি আর রুমি দুজনে বলছি সেলিম শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে উঠে চলে গেল, ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে একে একে সবাই চলে যাচ্ছে, ফাকা হতে হতে আমরা দুই একজন রয়ে গেলাম আর আমি সেদিন রুমিকে কিছু উপন্যাস এর লিষ্ট দিয়ে দিলাম যেগুলো পড়ে আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল, হুমায়ূন আহমদ এর প্রথম গল্প যেটা ছাপিয়ে জানান দিয়েছিল বাংলা সাহিত্যে একজন নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে সেই নন্দিত নরকে গল্পটা, অনুবাদ মক্কার পথে, নট উইদআওট মাই ডটার এসব বইগুলো অবশ্য আমিই পরে রুমিকে ধার দিয়ে পড়িয়েছিলাম
তারপর আমি আবার অনিয়মিত ক্লাশ করতে লাগলাম, মাঝের মধ্যে যেতাম, আর জয়নালকে বলে রেখেছিলাম স্যার যদি ক্লাশ না করে রোল নাম্বার লিখে জমা দিতে বলে আমার নাম্বারটা যেন লিখে দেয়, এদিকে রুমি ও খুব একটা ক্লাশ করতনা, তবে জয়নাল থেকে জানতে পারলাম মাঝের মধ্যে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করতো আমার কথা, আমি আসছি কিনা, ক্লাশ করিনা কেন এসব
আসলে আমার পকেটে কলেজ যাবার যে ভাড়া তাও থাকতনা, আর যখন গিয়ে দেখতাম ক্লাশ হয়না তখন খুব খারাপ লাগত, মনে হতো বাস ভাড়াটায় জলে গেল, একদিন কলেজ যাব কি যাবনা ভাবতে ভাবতে চলেই গেলাম পড়নে ছিল পাজ্ঞাবী, রুমি দেখে বলল কি ব্যাপার পাজ্ঞাবী পড়ে কি কলেজে আসে কেউ! নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে
চলবে...........
বিষয়: বিবিধ
১২০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন