আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.........(৯)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৩:১৯ দুপুর



আগের পর্ব : ৮...Click this link

মা কে আর ধরে রাখা গেলনা, চলে গেলেন পরপারে, বড় ভাইয়া মাষ্টার্স দিয়েই জয়েন্ট করলেন একটা স্কুলে, ওনার এমনিতেই অনার্সে ভাল রেজাল্ট ছিল, সেকেন্ড ক্লাস ফাস্ট, পরে মাষ্টার্সে সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড হলেন, আসলে মা এর চিকিৎসার ব্যাপারে এতো খাটুনি আর ব্যাস্ত ছিলেন যে, ইয়ার ড্রপ করবে কিনা ভাবছিলেন, প্রস্তুতি ভাল ছিলনা, তবুও বাবা বললেন যা হবার হবে পরীক্ষায় এটেন্ড কর, আমি চেষ্টা করছিলাম ছোটখাট কোন জব করা যায় কিনা, তন্দ্রা টিউশানি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নিচ্ছিল

বাবা একা হয়ে গেলেন, এমনিতেই বাবার চিন্তা চেতনাগুলো মিলতনা সবার সাথে, কোথাও বসে আড্ডা বা গল্প করা ওগুলো বাবার ধাচে ছিলনা, নামাজ, পত্রপত্রিকা বই পড়া এসব নিয়ে থাকতেন, এখন আরো বাড়িয়ে দিলেন, অনেকেই বাবাকে ইংগিত করতে লাগলেন এখন কি করবেন, আপনার সেবা শশ্রুষার ব্যাপার আছে ইত্যাদি, বাবা বলতেন আমার কোন প্রবলেম হবেনা, আমার এতো কাজ যে এমনিতেই সময় পাইনা, প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ে শেষ করতে পারিনা, এই বয়েসে অন্য কিছু করে আমি আর ঝামেলা বাড়াতে চাইনা, তারচে বরং বড় ছেলের জন্য বউ নিয়ে আসি, ওটাই ভাল

ঘরে ভাবি আসল, সবার চোখ ভাবির দিকে, কেমন হয় নাহয়, শ্বাশুড়ী নেই, পারবেতো ঘর সামলাতে? নাকি দুইদিন পর জামাইকে বুদ্ধি দিয়ে আলাদা হয়ে যাবে, সবার চোখে তাক লাগিয়ে দিয়ে ভাবি নিয়ে নিলেন আমার মা এর দায়িত্ব, গুছিয়ে নিলেন সব কিছু, আশে পাশের মা খালাদের কাছে ভাবী হয়ে উঠলেন সত্যিকার বউ এর আদর্শ প্রতিক, মা খালারা এসে গল্প করে যায় ভাবীর সাথে, ভাবী পান বানিয়ে দেয়, পানটা মুখে দিয়ে ওরা বলে, বুঝলে বউ, তোমার শ্বাশুরী ছিল এমন, এটা ওটা ইত্যাদি, আশে পাশে নতুন বউ আসলে সব শ্বাশুড়ী আমার ভাবিকে দেখিয়ে দেয়, বলে বউ কেমন একবার দেখে আসো, লাখে এক, বউরাও ননদ নিয়ে বেড়াতে আসে ভাবীকে দেখতে, "শ্বাশুড়ী আপনার এতো প্রশংসা করে যে, দেখতে এলাম, আর আমাদের একটু হিন্টস দিবেন কি করে মন যোগাতে হয় হা হা হা"

আমার প্রথম বর্শ অনার্স ফাইনাল এর রেজিষ্ট্রেশান চলছে, আমার খবর ছিলনা, তেমন একটা ক্লাশ করতামনা, সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খেত কিছু একটা করতে হবে, বাবার একাউন্টে তখনো কিছু টাকা ছিল, ভাইয়া সেলারী পেয়ে যতবেশী সম্ভব বাবার হাতে তুলে দিতেন, হিসেব করে দেখা গেল, যা খরচ হচ্ছে ভাইয়া তার অর্ধেক যোগান দিচ্ছে আর বাকী অর্ধ্যেক বাবার একাউন্ট থেকে, ব্যাপরটা নিয়ে আমার খুব চিন্তা হতো, একাউন্ট শেষ হয়ে গেলে কি হবে? ভাইয়া ভাবীর জন্য কষ্ট হতো খুব, নতুন বিয়ে করে কোথাও যে ঘুরতে যাবে তাও না, আমাদের জন্য তাদের সেক্রিফাইস কখনো শোধ করা যাবেনা, আসলে পারা যায়না এসবের প্রতিদান হয়না

বন্ধু জয়নাল, আমরা হাই স্কুল থেকেই একসাথে এবং অনার্সেও সেইম সাবজেক্ট নিয়েছি, আমার পাশের বাড়ির ল্যান্ড ফোনে কল করে বলল কিরে, তোর তো কোন খবরই নেই, আজ রেজিষ্ট্রেশান এর শেষ দিন, তাড়াতাড়ি কলেজ আয় ' রেজিষ্ট্রেশান ফি আর ছবি লাগবে, বাসে আসিসনা, টেক্সি নিয়ে আয়, আমি পড়লাম বিপদে, হাতে তো টাকা নেই, ভাবি এদিক ওদিক যার কাছে যা পেলেন যোগাড় করে নিয়ে আসলেন, কলেজে গিয়ে শুনি ক্লাস টিচার আমাকে দেখা করতে বলেছেন, গেলাম ওনার অফিসে, ওনি আমাকে ভাল করে দেখলেন, তারপর বললেন আমাকে চেন? জি সার চিনি, কিন্তু আমি তো তোমাকে চিনিনা, মোট কয়দিন ক্লাশ করেছ? দাড়াও আমি রেজিষ্ট্রার খাতা নিই, খাতা উল্টিয়ে দেখলেন অনেকগুলো এবসেন্ট চিন্হ স্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেন, আমাকেও দেখিয়ে বললেন, আমি কি করে তোমাকে পরীক্ষা দিতে দিই বল, তুমিতো ক্লাশই করনি, নেক্সট এ এমন হবেনা কথা দিয়ে সেবার ছাড় পেলাম

অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে চেষ্টা করছিলাম নিয়মিত ক্লাশ করতে কিন্তু এক নতুন বিপত্তি, প্রায়ই শুনি স্যার ক্লাশ নিবেনা কিন্তু উপস্থিত সবার রোল নাম্বার লিখে স্যারকে দিয়ে আসলে ওনি রেজিষ্ট্যারে প্রেজেন্ট দেখিয়ে দেবেন।

ক্লাসে কারো সাথে খুব একটা পরিচিতি ছিলামনা একমাত্র জয়নাল ছাড়া, আমার ব্যাগে বই থাকতো, লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকা ইত্যাদি, স্যার ক্লাশ নেবেনা সবাই বসে গল্পগুজব করছিল, আর আমি যেহেতু কারো সাথে সহজে মিশতে পারতামনা সেই সময়টা আমার বইগুলো আমাকে সংগ দিত,

চলবে.......

বিষয়: বিবিধ

১১৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File