আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(৩৫)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ২৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৭:৫২ দুপুর



আগের পর্ব :......৩৪Click this link

ফোরকান সাহেবকে প্রতিদিনই মনে করিয়ে দিতে হয় পান মুখে দিযে যাতে আমার ডেস্কে না আসে, পান খেয়ে জিহ্বা ঠোট সব খয়েরী কালার করে ফেলেছে, উনি সামনে বসলে আর এয়ার ফ্রেসনার কাজ করেনা, চারপাশে শুধু জর্দা পানের গন্ধ, কথা বলার ফাকে খিলাল দিয়ে দাতের ফাকে সুপারীর কনা খোঁচাবে, আর কি সব অদ্ভূত শব্দ করবে, তবে খুব মজা করে কথা বলেন, ফোরকান সাহেব কথাটা শুরু করেন মাঝখান থেকে, এই যেমন আমার ডেস্কে এসে বসে আমি কিছু বলার আগেই বলে বসবেন, নাহ ব্যাবসা আর করা যাবেনা, আমাকে একটা চাকরী জোগাড় করে দিন, পিয়ন টিয়ন হলে হবে, এভাবে একটা আকর্ষণ দিয়েই কথাটা শুরু করেন।

সেই দিন এসেই বললেন, বুঝলেন শাকিল সাহেব, দেশে লোক বেড়ে গেছে, মানুষ গিজ গিজ করছে, হাটতে বসতে ঢুস খাচ্ছি, ভাবলাম নিজের জন্যতো সারা জীবন করলাম, এবার দেশের জন্যই করি, ধরে ধরে আরব দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি, হাতে বেশ কিছু ভিসা আছে, বিশ্বস্ত আর ভাল কেউ থাকলে বলবেন পাঠিয়ে দেব, বললাম, কি ব্যাপার আদম পাচার ব্যাবসা কবে থেকে ধরলেন? বলল, আরে ধ্যুর আপনাকে বলাটাই ভুল হয়েছে, আপনিতো আমাকে চোর চাট্টার দলেই রাখবেন, একটু দেশের সেবা করব তা-ও বিশ্বাস হলনা আপনার, যাক আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, আমার চেক গুলো ক্লিয়ার হয়েছে কিনা একটু দেখে দিন, দিলদার এন্টারপ্রাইজ এর চেকটা বাউন্স হবার সম্ভবনা আছে, ব্যাবসার নাম দিয়েছে দিলদার ওদিকে আঙ্গুলের ফাকে পানি গলেনা, তিন চার বার চেক বাউন্স না করে চেক পাশ হয়না

কদিন যাবত মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল হেড অফিসের ডিকলারেশানটা, আফগানিস্থানে এসএমই ব্রাঞ্চ খোলা হচ্ছে, যারা যারা যেতে আগ্রহী তারা যেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার থ্রো এপ্লাই করে, তেমন শাড়া পড়েছে বলে মনে হয়না, সেইল্স থেকে শুনলাম দুই একজন আবেদন করেছে, হয়তো তারা এটা এডভেঞ্চার হিসেবে নিয়েছে, অথবা তাদেরতো চাকরী পার্মানেন্ট হয়না সহজে, তাই ওখানে যাবার সুবাধে পার্মানেন্ট করা যায় কিনা ওটাও হতে পারে, দুই একবছর পর আবার চলে আসল ট্রান্সফার হয়ে

বেশ কবার ম্যানেজার এর রুমে ঢুকতে গিয়েও ফিরে আসলাম, কথাটা কিভাবে বলি সংকোচে ভূগছিলাম, সবাই শুনলে হাস্যকর একটা ব্যাপার হবে, যাওয়াতো যাবেইনা তার উপর সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকারা করবে, কিন্তু দেশটা আমার কাছে বিষাক্তময় হয়ে গেছে, আমি যেন আফগানিস্তান না, আফ্রিকা বা আমাজান জংগলে হলেও চলে যাব যদি পথের সন্ধান পাই, মানুষের সাথে কথা বলাটাই যেন আমার কাছে বড় বিরক্তিকর ব্যাপার মনে হচ্ছে, সেখানে গিয়ে প্রকৃতির সাথে আর বনমানব এর সাথে আকার ইংগীতে একটা নতুন ভূবন গড়ে নেয়া যাবে

আল্লাহর প্রতি আমার যে একটা অনিহা চলে আসছিল সেটা বোধয় এবার রোধ করা যাবে, রুমির সাথে ব্যাপার অমিল দিযে সমাপ্তি হল সেটা নিশ্চয় কোন যৌক্তিক কারন আছে বলে মনে হল এবার, আল্লাহর প্রতি আবার সেই টানটা অনুভব করতে লাগলাম যেটা রুমির বিয়ের আগে অনুভব করেছিলাম, এবারের কারনটা হল ফোরকান সাহেব, আমার মনে হল, আল্লাহ বোধয় আমার কষ্টটা অনুধাবন করে ফেরস্তাকে বলেছে, বেচারা অনেক কষ্ট পেয়েছে, এবার ছোট একটা আবদার করেছে, দেশ থেকে মুক্তি চাইছে তাই তাকে আরব দেশে যাওয়ার একটা উপায় করে দিই

ফোরকান সাহেব প্রথমে একটু অবাকই হলেন, তবে উনি পাকা ব্যাবসায়ী মানুষ, নিজের প্রোডাক্ট এর বদনাম করবে সেই পাবলিক উনি না, বলে দিলেন, এক মাসের মধ্যে আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, পাসপোর্ট কপিটা দেন, টাকা পয়সা বেশী কিছু নেবনা শুধু আমার খরচটা দিলে হবে, আপনার সাথে ব্যাবসা করবনা, আপনি হলেন নিজের মানুষ, চিন্তা করবেননা অনেক ভাল থাকবেন, আমি বলে দেব, এটা হলফ করে বলতে পারি এখন যেমন আছেন তার চাইতে ভাল থাকবেন, কোম্পানীর ম্যানেজার আমার ছোট বোনের হাজব্যান্ড আপনি চাইলে কথা বলতে পারেন

সবাইকে অবাক করে দিয়ে সত্যি চলে আসলাম মরুর দেশে

চলবে..............

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File