আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(৩৩)
লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ১৯ জুলাই, ২০১৩, ০৮:১৭:০০ রাত
আগের পর্ব :.........(৩২)Click this link
জীবনের গল্পটা যেন সিনেমার পর্দায় ভেসে উঠা কাহিনী হয়ে গেল, তাই ভাবলাম শেষ চেষ্টা করা যাক পরিসমাপ্তিটাও সিনেমার সাতে মিলে যায় কিনা, শুনতে অবাক লাগতে পারে কিন্তু আমি সত্যিই কাজটা করেছিলাম, সিনেমায় হয়না, নায়ক নায়িকার মাঝখানে থার্ড পার্সন চলে আসে নায়ীকার জীবনে আবার যখন সত্য উদ্ভাসিত হয় তখন সেই থার্ড পার্সনই ক্ষমা চেয়ে নায়ীকার হাত তুলে দেয় নায়কের হাতে, আমার ভাবনার আশ্রয়টা ঠিক তেমনটায় হয়েছিল, ভেবেছি হতেওতো পারে, ট্রাই করে দেখতে তো সমস্যা নেই, রুমির হাজবেন্ডকেই একটু ইংগীত দিয়ে বুঝিয়ে বলা যাক, দেখা যাক কি হয়
রিমিকে ফোন দিলাম, এবার খুব বেশী ট্রাই করতে হয়নি, সে হয়তো অনুধাবন করতে পারছে আমার মানসিক অবস্থা, তিন চারবার ট্রাই করে পাওয়া গেল, জানতে চাইলাম রুমির হাসব্যান্ড এর ব্যাপারে, এ ব্যাপারে কথা বলার রিমির আগ্রহ পেলামনা, কেননা, রুমির আকদ এর সময় সবার আগে যার উপস্থিতি থাকার কথা ছিল সেই রিমি উপস্থিত ছিলনা, তাই তার দেখা হয়নি রুমির বরকে, রুমির বাবা একদিন রিমিকে ডেকে বকা দিয়েছিল, রুমি যে প্রেমে জড়িয়েছে সেটা কেন তাদের জানানো হয়নি সে জন্য, তাই রিমি উপস্থিত ছিলনা রুমির প্রোগ্রামটাতে, রিমি আমাকে রিকোয়েষ্ট করেছে, "প্লিজ শাকিল ভাই এই প্রসংগে প্রশ্ন করবেননা, আমি তেমন কিছুই যানিনা," তবুও তাকে বললাম বরের নামটা অন্তত বল, আর কি করেন সেটাও একটু জানতে খুব মন চাইছে, নাম জানা হল, সাইফুল, আর জব করছে একটা জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে আছেন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে, যার মালিক আসলে সাইফুল সাহেব এর জেঠা, শুধু এই টুকুন রিমির সাথে কথা বলে জানা গেল
জামাল ভাইকে ফোন দিলাম, আমার আগের অফিসের ফোন অপারেটর, বললাম জামাল ভাই, সাইফুল সাহেব এবং ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে আছে ঢাকায়, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে, কোন ব্র্যাঞ্চ জানা নেই, আপনি খুঁজে বের করে দিন, খুব দরকার, এসব ব্যাপারে জামাল ভাই খুব এক্সপার্ট, আচ্ছা দেখছি বলে ফোন রেখে দিলেন, মাত্র ত্রিশ মিনিট ব্যাবধানে জামাল ভাই কল ব্যাক করলেন ল্যান্ড ফোনে, বললেন, কথা বলুন আমি লাইন ট্রান্সফার করছি, আপনার সাইফুল সাহেব লাইনে আছেন
অবাক হলাম, আমরা দুইজন দুই অফিসে, ইন্টারকম বা পিএবিএক্স না যে ফোন ট্রান্সফার করবে, আর এতো তাড়াতাড়ি পেলইবা কি করে, পরে অন্য একদিন বলেছিল, ঢাকা কোয়েরীত ফোন করে বের করেছে, যাই হোক আমি সাইফুল সাহেবের সাথে কথা বললাম
-হ্যালো সাইফুল স্যার বলছেন?
-জ্বি বলছি, বলুন
-যদি কিছু মনে না করেন, আপনার মোবাইল নাম্বারটা কি দেয়া যাবে? আমি আপনাকে এখনই কল করছি, হাতের কাজটা সেরে, একটু জরুরী কথা ছিল
-ঠিক আছে নিন ০১৮.................
মোবাইল নাম্বারটা নিলাম এজন্য যে, আমি শিউর ছিলাম জামাল ভাই ওদিকে আড়ি পাতছেন, এসব ব্যাপারে জামাল ভাই হ্যাল্প যেমন করেন আবার ওনার কৌতুহলটাও একটু বেশী, তাই চালাকিটা করতে হল
- স্যার কিছু মনে করবেননা, ভনিতা না করেই প্রশ্নটা করছি, যদিও এটা আপনার পারসোনাল বিষয়, শুনলাম রুমির সাথে আপনার এনগেইজডম্যান্ট হয়েছে? এনগেইজডম্যান্ট শব্দটা আমি ইচ্ছে করেই বলেছি, কেননা ওরা হয়তো আমার কাছে বিষয়টা গোপন করে থাকতে পারে, রুমির গত দুই বছরে বিয়ে হয়নি, কিন্তু এক সপ্তাহে কন্যা দেখা এবং দান দুটোই হয়ে যাবে সেটা আমার বিশ্বাস হতে চাইছিলনা
-জ্বি, আমাদের আকদ হয়েছে, এনগেইজম্যান্ট না, তবে আপনাকে তো চিনলামনা, পরিচয়টা কি জানতে পারি?
-আামার নাম শাকিল, রুমির ফ্র্যান্ড, আমরা একসাথেই পড়েছি, হঠাৎ করে নিউজটা শুনলাম তাই উৎসুক হয়ে আপনার কাছেই জানতে চাইলাম
-ও আচ্ছা, আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
-রিমির কাছ থেকে শুনেছি আপনার কথা, রিমির সাথে পরিচয় নিশ্চয় হয়েছে আপনার
-আপনিতো দেখি ওদের সবাইকে চেনেন, খুব ভাল জানাশোন বুঝি?
-অনেকটা তাই
-তাহলে আপনাকে ওরা আগে জানাইনি ব্যাপারটা? পরে শুনতে হলো কেন?
- তাইতো কিছুটা অবাক হলাম, যাই হোক, আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগল, আপনাদের জীবন সুখী এবং সমৃদ্ধময় হোক সেই কামনাটা পৌছে দেবার জন্যেই আপনাকে ফোন করেছি, আজ রাখি, আসসালামুআলাইকুম....
আমি তখন উদভ্রান্ত ছিলাম, কি করছি না করছি ওসব নিজেই বুঝতে পারছিনা, কোন কিছু চিন্তা করতে পারছিলামনা, মনটা খুব অস্থির হয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ খেয়াল করলাম সাইফুল সাহেব এর মোবাইল নাম্বারটা একটেল জয়, এক ডিজিড আগে পরে করে ফোন দিলাম, পেয়ে গেলাম রুমিকে, সে ঘাবড়ে গেল, প্রশ্ন করল, "আমার মোবাইল নাম্বার কোথায় পেলে?" জবাব দিলামনা, উল্টো প্রশ্ন করলাম তুমি কথা দিয়েছ ছবি দেবে, কখন দেবে, কিভাবে দেবে প্লিজ বল, রুমি উত্তর দিলনা, বলল মা ডাকছেন কি একটা কাজে, এখন রাখি বলে কেটে দিল
আমি চাইছিলামনা রুমিকে ফোনে ডিস্টার্ব করব, কিন্তু দুই একদির পর পর কেন যানি ফোন করে বসি, ছবিটার কথা বলি, রুমির একই কথা, ওটা পেলে তোমার ভুলতে কষ্ট হবে, এখন একটু কষ্ট হলেও একটু সহ্য কর, তবুও দুই একদিন ব্যাবধানে আমি ফোন করতে থাকলাম
আমার মোহ ভংগ হল যেদিন রুমি বলেছিল, "আমি মুক্তি চাই, আমাকে মুক্তি দাও শাকিল," সাথে সাথে আমি ফোন কেটে দিয়েছিলাম, সেইদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি আমার গন্ডী পেরিয়ে যাচ্ছি, নিশ্চয় রুমি একটা জগৎ তৈরী করে ফেলেছে সেখানে আমার প্রবেশ নিশেধ, কেন আমি বারবার সেখাবে উকি ঝুকি মারছি, আমিতো এমন ছেলে নই, কখনো এমন ছিলামনা, আজ কেন আমি এতো নিচু নামলাম, খুবই অনুচিত হচ্ছে এভাবে রুমিকে জ্বালাতন করাটা, সেই থেকে আর কখনো রুমিকে ডিস্টার্ব করা হয়নি, আমি মেনে নিয়েছি আবার আমার নিয়তিকে, রুমির কথাগুলো বার বার আমার কানে বাজছিল, আমি মুক্তি চাই, আমাকে মুক্তি দাও, দিলাম মুক্ত করে, তবে আমি কার কাছে চাইব মুক্তি? নিজের কাছে? আমি কি নিজেকেই বলব? আমি মু্ক্তি চাই, আমাকে মুক্তি দাও!
চলবে........
বিষয়: বিবিধ
১৬৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন