আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(৩২)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:৫০:২২ সকাল



আগের পর্ব :.........(৩১)Click this link

রুমির আকদ হয়ে গেছে, পাত্র পক্ষ এখনো বউ তুলে আনেনি, এখন আয়োজন চলছে সেই অনুষ্ঠানের, আমি কোন ভাবেই নিজেকে মানাতে পারছিলামনা, রুমি কি জন্য আমার সাথে এমন একটা জঘন্য কাজ করল, আমিতো তার বিয়ে কোন ভাবেই ঠেকিয়ে রাখার অধীকার প্রাকাশ করিনি, সে যখন ইচ্ছে করেই হারিয়ে গেছে আমিতো খুঁজতে যাইনি, আমিতো নিয়তিকেই মেনে নিয়েছিলাম, তবে কেন আমার সাথে এমন আচরণ করল রুমি! শনিবার আমাদের দেখা হবার কথা, আমি ঠাঁই দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তায় আর তখন রুমি তার বিয়ের আয়োজন নিযে ব্যাস্ত ছিল, এমন কি অপরাধ ছিল আমাকে এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে সে বিয়ের মন্ত্র পড়বে!

নিজের উপর ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি এবার, পৃথিবী, সমাজ, সংসার এসব মূল্য হারাচ্ছে আমার কাছে, আমি যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান চলাচল দেখতাম তখন খেয়াল করতাম বড় গাড়ীগুলো যখন সবেগে চলে যায়, তখন পেছনের চাকাটা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, আমি সেকেন্ড এর হিসেব মিলাতাম চলমান গাড়ীর প্রথম চাকা আমাকে ছেড়ে যাবার কত সেকেন্ড পর দ্বিতীয় চাকাটা আমাকে ছেড়ে যায়! এই অনু সময়টায় কি পারা যায় দ্বিতীয় চাকাটাকে আপন করে নিতে!

হঠাৎ মনে হল রুমির বিয়ে হয়নি, আমার সাথে মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে, হয়তো রুমিকে বুঝিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেছে তাই আমাকে এভয়েড করার জন্য এমন করা হচ্ছে, তাই ভাবলাম যে করেই হোক একবার রুমির মুখোমুখি হওয়া চাই, পরের শনিবার আবার গেলাম কলেজে, বাস থেকে নামতেই রুমির মুখোমুখি, সে ক্লাশ সেরে ঘরমুখি, কলেজ গেইটে দেখা, আমাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেল কিন্তু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল

প্রথম কথাটা আমিই বললাম, রুমি তোমার হাত দেখতে চাই বলে, রুমি বলল কেন? "এখানে সবাই আমার ষ্টুডেন্ট চল যেতে যেতে কথা বলি," আমি বললাম কোথায় আর যাব, আমি শুধু তোমার হাতটা একটু দেখব তারপর চলে যাব, সে দুই হাত বাড়াল

-মেহেদী নেই কেন হাতে?

-দেয়া হয়নি

-আমার সাথে মিথ্যে বলছ নাতো?

- না সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গেছে

-আমাকে জানালে কি খুব ক্ষতি হত?

-থাকনা ওসব, যা হবার তাতো হয়েই গেছে

আমরা হাটছিলাম রাস্তার পাশদিয়ে, আর চোখ রাখছিলাম খালি সিএনজি টেক্সি পাওয়া যায় কিনা, রুমি বিয়ের আগে যদিও বাসে করে যাতায়াত করত এখন সে সিএনজি করেই আসা যাওয়া করে, পাওয়া গেছে একটা, রুমি নিজেই দরদাম করল, এবং গাড়িতে উঠে বসল

-কই এসো

-তুমি এখন অন্যের স্ত্রী, এভাবে তোমার সাথে গাড়ীতে চড়াটাকি ঠিক হবে? তুমি একা যাও আমি বাসে করে চলে যাব

- না, তুমি এসো কিছু হবেনা, আমার বাসা পর্যন্ত একসাথে যাব, তারপর তুমি ওখান থেকে চলে যে-ও

গাড়ীতে উঠে বসলাম, দুইজন দুই প্রান্তে বসার চেষ্টা করলাম যাতে মাঝখানে ফাঁকা থাকে, দুইজনই চুপচাপ, আমাদের আসলে আর কিইবা কথা থাকতে পারে, আমাদের দুরুত্ব এখন দুই সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ আগেও রুমির প্রতি হয়তো আমার কিছুটা অধীকার ছিল আজ আমার খালি হাত, নদীর তীরে দাঁড়িয়ে যদিএকটা কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দেয়া হয়, দৃশ্যটা কেমন হতে পারে! ঢেউ এর সাথে দোল দিয়ে নৌকাটা ধীরে দূরে সরতে থাকবে, তারপর আরো একটু দূর, আরো দূর, আরো দূর তারপর দৃষ্টি সীমানা পেরিয়ে হারাবে সেই নৌকা, রুমি আজ আমার কাছে সেই কাগজের নৌকা, দূরত্ব এখন দুই সপ্তাহের, তার ঢুলতে ঢুলতে হারিয়ে যাবে দৃষ্টি সীমানার বাইরে, হয়তো দেখা হবেনা আর কোনদিন, মৌনতা ভাঙ্গালাম, একটা অনুরোধ করে

- একটা অনুরোধ ছিল রাখবে?

-কি বল

-আমার কাছে তোমার কোন ছবি নেই, একটা ছবি দেবে? তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলার অধীকার আমার নেই, অতীতে তো ছিল, আমাকে একটা ছবি দেবে অতীতের? আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে ওটা ফিরিয়ে দেব, কখন দেব সেটা এখন বলতে পারছিনা, তবে আমি নিশ্চিত তোমাকে ওটা ফিরিয়ে দেব, কিংবা সময় হলে ছিড়ে ফেলে দেব, অথবা নদীতে ভাসিয়ে দেব, তবে এখন একটা ছবি খুব প্রয়োজন, দেবে?

-না দেবনা, তোমার কাছে আমার ছবি থাকলে, তোমার কষ্ট আরো বাড়বে, আমাকে ভুলতে কষ্ট হবে তোমার, ছবি দেয়া যাবেনা

-তুমি কি বুঝতে পারছ আমি ভাল নেই, তুমি কি বুঝতে পারছ আমি অসুস্থ, আমি ছবিটা চাইছি কারণ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার দম যখন বন্ধ হয়ে আসে তখন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, তাই ছবিটা এখন আমার খুব দরকার, আমাকে দিতেই হবে, আমিতো কথা দিচ্ছি, আমি সুস্থ হলে ওটা আর রাখবনা, আমাকে কি বিশ্বাস হয়না? আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই, আমার কাছে তুমি এখন মৃত, আমি ধরে নেব রুমি আর জীবিত নেই, ছবিটা আমার ঠিক ততদিন দরকার যতদিন আমি স্বাভাবিক না হচ্ছি, ছবি থাকলেই যে আমি ওটা দেখব তা-ও না, আমি ওটা রাখব যখন খুব যন্ত্রণা হবে আমার মৃত রুমিকে একবার দেখার তখন সেটা লাঘব এর জন্য একবার হয়তো দেখব, প্রয়োজন না পড়লে দেখা হবেনা তারও নিশ্চয়তা দিচ্ছি, রুমি তুমি যাননা, মনের মধ্যে যখন তোলপাড় চলে সেটা যে কি ভয়ানক, আমি অতীতে এমনটার মুখোমুখি হয়েছি, আর হতে চাইনা, আমার পক্ষে আর সম্ভব না এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া, আমি চাইনা আমার দম বন্ধ হয়ে আসুক, আমি চাইনা আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হোক, এসব ধারণ করার বিন্দু পরিমাণ শক্তি আমার নেই, তাই ছবিটা দেখে যদি পরিস্থিতিগুলো এড়ানো যায়,ছবিটা আমার লাগবে, তোমার অতীতের যেকোন একটা ছবি, অবশ্যই সেটা বিয়ের কিংবা বিয়ের পরের না, এসব নিয়ে আমার কিছু যায় আসেনা

-আচ্ছা দেব

-কখন দেবে?

-জানাবো পরে

-আমার কাছেতো তোমার কোন ঠিকানা নেই, আমাকে কি আবারও অপেক্ষায় থাকতে হবে?

-জানিনা, আমার কাছে তোমার মোবাইল নাম্বার আছে, সময় হলে আমি জানাব

আমি নেমে গেলাম রুমিদের বাসার কিছুটা আগে মেইন রোডে, ওদের বাসা কোথায় আমার জানা নেই এবং প্রয়োজনও নেই, মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে যেতে হয়ে, গাড়ীটা থামিয়ে হয়তো শেষবারের মতো চোখাচোখি, খোদাহাফেজ বলে বিদায় জানালাম

আমি যে মাঝের মধ্যে নিজের সাথে নিজেকেই বলতাম রুমির বিয়ে হয়না কেন? বিয়েটা হলেইতো আমার যন্ত্রণাটা হয়তো মুক্তি পাবে, অন্তত অপেক্ষার দিনতো আর গুণতে হবেনা, এখন বুঝতে পারছি কত বেদনা দায়ক ব্যাপারটা, নিজেকে ধীক্কার দিচ্ছি আমি কেন এতদিন অপেক্ষায় থাকলাম, সরাসরি ওদের বাসায় গিয়ে একবার মুখোমুখি হলেইতো পারতাম, হোক না হোক একটা চেষ্টাতো করতে পারতাম, আমার অবহেলার জন্য হারালামনাতো! আমিতো আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলাম, আমার সবকিছু আল্লাহইতো পুরণ করে দিচ্ছিল, আমার চাকরী চেন্জ হল, রুমি নিজ থেকেই ফিরে আসল, তাই আমি আর সরাসরি মুখোমুখি হইনি, আমার ধারণা বিষয়টা সরাসরি আল্লাহ গুছিয়ে দিচ্ছে আামাকে, তাই আমি তাড়াহুড়ো করিনি, কিন্তু আজ একি হল! রাগটা গিয়ে পড়ল সৃষ্টি কর্তার উপর, আমার সাথে সেই বেঈমানী করেছে, এমন উল্টাপাল্টা চিন্তা আসছিল মনে, নাহিম ভাই শুনে আমাকে রিকোয়েষ্ট করেছিল, এমন কিছু যাতে না বলি কিংবা না করি যেটা ঈমাণ এর সাথে সাংঘর্ষীক, একটা মেয়ের জন্য নিজের ঈমাণকে জলাঞ্জলি দেয়াটা বোকামী ছাড়া অন্য কিছুই নয়

অঞ্জন দত্তের গানের খুব ভক্ত ছিলাম তখন, এই গানটা খুব শুনটাম সেই সময়টাতে............

আমি বৃষ্টি দেখেছি

বৃষ্টির ছবি এঁকেছি

আমি রোদে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে

অনেক কেঁদেছি

আমার আকাশ কুশুম স্বপ্ন দেখার

খেলা থামেনি....

শুধু তুমি চলে যাবে

আমি স্বপ্নেও ভাবিনি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

চার দেয়াল মানেই নয়তো ঘর

নিজের ঘরেও অনেক মানুষ পর

তখন কিসের টানে মানুষ

পায়যে খুঁজে বাঁচার মানে

ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর

আমি অনেক ভেঙ্গে চুরে

আবার শুরু করেছি

আবার পাওয়ার আশায়

ঘুরে মরেছি

আমি অনেক হেরে গিয়েও

হারটা স্বীকার করিনি

শুধু তোমায় হারাব

আমি স্বপ্নেও ভাবিনি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

হারিয়ে গেছে তরতাজা সময়

হারিযে যেতে করেনি আমার ভয়

তখন কিসের টানে মানুষ

পায়যে খুঁজে বাঁচার মানে

ঝাপসা চোখে দেখা এই শহর

আমি অনেক স্রোতে বয়ে গিয়েও

অনেক ঠকেছি

আমি আগুন থেকে ঠেকে শিখে

অনেক পুড়েছি

আমি অনেক কষ্টে অনেক কিছু

দিতে শিখেছি

শুধু তোমায় বিদায় দিতে হবে

স্বপ্নেও ভাবিনি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

আমি বৃষ্টি দেখেছি

.......অঞ্জন দত্ত.....Click this link

চলবে..............

বিষয়: বিবিধ

১৯১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File