আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(৩১)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৮ জুলাই, ২০১৩, ১১:৩৬:৩৬ সকাল



আগের পর্ব :......৩০... Click this link

রুমি আবার লাপাত্তা, ইকবালকে আমি ফোন নাম্বার দিয়ে রেখেছিলাম যদি কলেজ আসে তাহলে আমাকে একটু ইনফর্ম করার জন্য আর রুমিকেও যেন বলে রাখে আমি এসে খোঁজ করেছিলাম, ইকবাল এর ফোন পাওয়া যায়নি, সে হয়তো তেমন গুরুত্ব দেয়নি আর আমিও সংকোচ বোধ করে ইকবালকে আর ফোন করিনি, পরের শনিবার আবার গেলাম কলেজে, ইকবালকে খোঁজে বের করলাম, কথা বলে জানা গেল রুমি পুরো সপ্তাহ অনুপস্থিত, কলেজে আসেনি

বাধ্য হলাম রিমিকে ফোন দিতে, রিং পড়ে কিন্তু রিসিভ হয়না, তিন চারদিন ধরে ট্রাই করছি, সে রিসিভ করছেনা আবার ফোন কেটেও দিচ্ছেনা, আমার অস্থিরতা বাড়তেই থাকল, নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে, সেদিন ছিল বৃহষ্পতিবার, আমি পুরোদিন ওকে কল করেছি, সেই সকাল থেকেই অফিস কাজের ফাঁকে অনবরত তাকে রিং করেই চলেছি, সন্ধ্যার দিকে আমি যখন অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম আবার ট্রাই করলাম, তিন চারবার ট্রাই করার পর রিসিভ হল

রিমি কিছু বলার আগেই আমি বললাম, আমি সত্যিই দুঃখিত তোমাকে এভাবে বিব্রত করছি বলে, তবে আমি নিরূপায়, রুমি আমাকে দেখা করতে বলে লাপাত্তা, ওর কোন নিউজ পাচ্ছিনা, আমি চাইলে অন্য কোন উপায়ে খবরটা নিতে পারি কিন্তু সেভাবে শোভন হবেনা ভেবেই তোমাকে বিরক্ত করছি, আমাকে কি কাইন্ডলী বলা যাবে? রুমির কি হয়েছে?

- রিমি বলল, "কেন শাকিল ভাই আপনি কি কিছুই জানেনা!"

- বললাম সত্যিই জানিনা

- "কেন রুমি কি আপনাকে কিছুই জানাইনি?"

- নাতো! কি হয়েছে রুমির?

- "গত শনিবার রুমির আকদ হয়ে গেছে"

আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম, মোবাইলটা কানে ধরেই রইলাম, সম্ভবত রিমি হ্যালো হ্যালো করে নিজেই কেটে দিয়েছে লাইনটা,আমার আর মনে পড়েনা, আমি অফিস থেকে বের হয়ে এলাম, রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে লাগলাম, আমার মাথায় তখনো শব্দগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে রুমির আকদ হয়ে গেছে, এই শব্দগুলোর কি অর্থ দাঁড়ায় সেটা আমার মাথায় কাজ করছিলনা, আমার শরীর কাঁপছে, তখনো চোখের জল বুঝতে পারেনি কি ঘটে গেল

আর হাঁটা যাচ্ছেনা, আমি তালগোল পাকাচ্ছি, কোন পথ দিয়ে হাটব বুঝতে পারছিনা, কোথায় যাব আমি! কোথায় যাওয়া উচিত? আমার গন্তব্য কোথায়! মাথাটা ঘুরছে, কতদূর সামনে হেঁটে আবার উল্টো পথ ধরছি, মাথায় এলো নাহিম ভাই এর কাছে যাব, এই মুহুর্তে নাহিম ভাই ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে আপন মনে হলনা, আমার হাত কাঁপছে, কাঁপা কাঁপা হাতে অনেক কষ্টে নাহিম ভাই এর নাম্বারটা খুঁজে বের করলাম, বললাম নননাহিম ভভভাই আআপনি ককোথায়! খখুব দদরকার, আসলে আমার শব্দগুলো জড়িয়ে যাচ্ছিল, স্পষ্ট করে বলতে পারছিলামনা

নাহিম ভাই তখন ওনার বাসাই ছিলেন, কথা আর না বাড়িয়ে আমাকে বললেন, "বাসায় চলে আসেন, সিএনজি নিয়ে আসেন, বাসে করে আসার প্রয়োজন নেই," নাহিম ভাই তখনই ধারনা করেছিল, ঘটনাটা, আমি সিএনজি ভাড়া করে চলে গেলাম, নাহিম ভাই এর বাড়ীটা মেইন রোড থেকে একটু ভেতরে, আমি আর চিনতে পারছিনা, সেন্স তখন কাজ করছিলনা, ড্রাইভার আমাকে মেইন রোডেই নামিয়ে দিয়ে চলে গেল

মোবাইল হাতড়ে আবার ফোন দিলাম নাহিম ভাইকে, বললাম আমি বোধয় মেইন রোডে আছি, বাকি পথটা চিনতে পারছিনা, এখন কি করব? নাহিম ভাই বললেন, "আপনি যেখানে আছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন, আর পারলে যে কোন দোকানএর সাইবোর্ড থেকে একটা নাম পড়ে বলেন," একটা ডিসপেনসারী ছিল পাশে, নামটা বলে ওখানেই দাঁড়ালাম

নাহিম ভাই নিতে আসলেন, আসা মাত্রই আমি জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু, রাস্তায় আমি উচ্চস্বরে কাঁদছি আর নাহিম ভাইকে জড়িয়ে ধরে রেখেছি, নাহিম ভাই কিছুই বললেননা, আমাকে একটা অন্ধ গলির ভেতরে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলেন, আমি তখনও উচ্চস্বরে কাঁদছিলাম আর রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মানুষগুলো কান্নার শব্দ শুনে আবার পেঁছনে ফিরে তাকাচ্ছিল, কান্না আর থামেনা, আমি কেঁদেই চলেছি

"অনেক হয়েছে এবার কাইন্ডলী থামেন, তা না হলে কিন্তু আমি বকাবকি করব, আমি আপনাকে সোজা পথ দিয়ে না এনে ঘূর্ণী পথ দিয়ে নিয়ে আসলাম কারণ আপনাকে কেঁদে হালকা হবার একটা উপায় করে দিলাম, আপনারতো দেখি থামার আর নাম নেই, বাসায় যেতে হবে, এবার দয়া করে থামুন, বাসায় বলে রেখেছি আজ আপনি খাবেন এবং থাকবেন আমার সাথে, সব আয়োজন শেষ, এখন গিয়ে দুজন মিলে খাব, তারপর ঘুম দেব"

আমি খেতে চাইনি তবুও যেহেতু আয়োজন করাই আছে তাই খেতে বসতে হলো যদিও আমার গলা দিয়ে নামছিলনা কোন খাবার, সারা রাত পায়চারী করলাম ঘুম হলনা, নাহিম ভাইকেও ঘুমাতে দিলামনা, ওনি আমার পাশেই শুয়েছিলেন ইচ্ছে করে, আমার মাথায় হাত বুলিযে দিয়েছিলেন সারা রাত, আমি তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম

চলবে...........

বিষয়: বিবিধ

১৫১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File