আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(৩০)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৬ জুলাই, ২০১৩, ১১:১৭:৩৬ সকাল



আগের পর্ব :......২৯... Click this link

দুপুর ঠিক বারটায় পৌঁছার কথা ছিল কলেজ গেইটের পাশে বাস ষ্ট্যান্ডটাতে, কলেজে যাবার প্রয়োজন নেই কেননা কলিগদের কাছে আমার কি পরিচয় দেবে সেটা নিয়ে একটু দ্বিধা ছিল রুমির আর কেনইবা কলেজে গেলাম ব্যাপারটা সবার কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিতে পারে, তাই আমাকে বাস ষ্ট্যান্ডেই অপেক্ষা করতে হবে, রুমি ক্লাশ শেষ করে ওখানেই আসবে।

আমার তর সইছিলনা এগারটায় গিয়ে হাজির হলাম, কিছুক্ষণ পায়চারী করলাম, এবার দেখছি সময় আর এগুচ্ছেনা, ঘড়ির কাটা যেন ঘুরছে কিন্তু সময় এগুচ্ছেনা, একটু সামনে হেঁটে গিয়ে বাজারের একটা চা দোকানে বসলাম, টাইম পাস করার জন্য এটা করতে হল, চা আর সিঙ্গাড়ার অর্ডার করলাম, দোকানের টেলিভিশনে বাংলা ছবি চলছে, নায়ক মান্না, সবাই হা করে মান্নার ডায়ালগ গুলো গিলছে আর আমি ছবি না দেখে দর্শকগুলোর কান্ডকীর্তি দেখছিলাম

আাবার আসলাম বাস ষ্ট্যান্ড এ, এবার সঠিক সময়, আর অপেক্ষা করতে হবেনা, আমি গিয়ে দাঁড়ালাম এক সাইডে, চাইলে সিট আছে বসা যায় কিন্তু বসলামনা, একপাশে কিছু ষ্টুডেন্ট বসে গল্প করছে, হয়তো বাস আসলে চলে যাবে, দু'জন মেয়ে ষ্টুডেন্ট ও আছে, আমার সাথে তাদের দু'একজনের চোখাচোখি হল বেশ কবার, কি জানি হয়তো ভাবছে তাদের কোন সহপাঠির মজনু সাহেব এসেছেন দেখা করতে, তাই অপেক্ষা করছে

একটু আনইজি লাগছিল এভাবে দাঁড়িযে থাকতে, ষ্টুডেন্টগুলো নিশ্চিত আমাকে সন্দেহ করছে, হয়তো এসে জিজ্ঞেসাও করতে পারে আমি কি জন্য এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছি, কেননা জায়গাটা সিটিতে পড়লেও মূল সিটি থেকে বেশ দূরে এবং এখানে গ্রামের পরিবেশটা এখনো পাকাপোক্ত, তায় এভাবে কেউ সন্দেহমূলক দাঁড়িয়ে থাকলে অন্যের কিছু যায় আসেনা বলা যাবেনা

দুপুর একটা, এক ঘন্টা ওভার, আমি তখনো ঠাই দাঁড়িয়ে, বুকের মধ্যে হঠাৎ ধপ করে উঠলো, আবার কি হারালাম রুমিকে! এতক্ষণতো লাগার কথা না, ত্রিশ মিনিট এদিক ওদিক হতে পারে কিন্তু এক ঘন্টার ব্যাবধান কেন হবে? মন আবার অস্থির হতে থাকলো, দেরী হচ্ছে কেন! কোন কারনতো মাথায় আসছেনা, রুমির বাসায় প্রবলেম হয়নিতো আমার প্রসংগটা তোলার জন্যে? কিন্তু তার জন্য কি ওর কলেজ আসা অফ করে দেবে তাতো মনে হয়না, সেতো ষ্টুডেন্ট না যে বখাটের উৎপাতের জন্য কলেজ আসা বন্ধ করবে

হাজার দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করছিল তখন বেলা দুইটা, আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি, কলেজ এর দিকে তাকালাম, অনেকটা ফাঁকা, কলেজ মাঠে এবং বারান্দায় ষ্টুডেন্টদের কোলাহল থেমে গেছে, বাস ষ্ট্যান্ড এর ষ্টুডেন্টরাও আর নেই, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশটা যেন কেমন নির্জীব নিস্তব্ধ হতে থাকল, দুপুরের ভাপসা গরমে আমিও কিছুটা হাপিয়ে উঠেছি, রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে রুমলটা ভিজে গেছে, রুমি কি তাহলে আজ আসেনি!

এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয়না, এবার চললাম কলেজ এর দিকে, কনফার্ম হতে হবে রুমি কি আজ কলেজ আসছে কিনা, কলেজ মাঠ পেরিয়ে অফিস এর দিকে আসতেই মুখোমুখি হলাম ক্লাশ শেষে ঘরমুখি কিছু স্টুডেন্ট এর, এক্সকিউজমি বলে প্রশ্ন করলাম রুমি মেডাম আছে কিনা অফিসে, একটু হ্যাংলা লম্বাটে ষ্টুডেন্ট বলল, "না আজ রুমি মেডাম ক্লাশ করেননি, সম্ভবত কলেজে আসেননি আজ।" তারপর আমার পরিচয়টাও জানতে চাইল, সহপাঠী বলতেই সে প্রশ্ন করল " আপনি কি ইকবাল নামে কাউকে চিনেন? আপানাদের সহপাঠী ছিল" হুম ইকবাল চিনেছি, রুমির সাথে একসাথে প্রায়ই যাওয়া আসা করত, ওদের বাড়ী রুমিদের বাড়ীর পাশেই, এবার ভাল করেই পরিচয় পর্ব সারা গেল, ইকবাল হল মারুফ এর চাচা, ভালই হল, হয়তো কোন ইনফর্মাশান পাওয়া যাবে মারুফ এর কাছ থেকে, মারুফরা বিদায় নিল আমি তবুও টিচার্স রুম এর দিকে গেলাম আরো একটু কনফার্ম হবার জন্য

টিচার্স রুম, প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর রুম, লাইব্রেরী সবখানে উকিঝুকি মারলাম, না রুমি সত্যিই আসেনি, তার পরের রুমটা সম্ভবত মেয়েদের কমন বা ওয়টিং রুম, কিছু মেয়ে তখনও গল্প গুজব করছিল, আমি বারান্দায় হাটার ছলে বুঝার চেষ্টা করছিলাম কোথাও রুমির উপস্থিতি আছে কিনা, খুব যে নিঃসংকোচে ছিলাম তা না, লজ্জ্বা আর ভয় ও লাগছিল, কেউ যদি সন্দেহ করে! লাইব্রেরী কক্ষে এক মেডাম বসে নি যেন লিখছে একা, ভাবলাম টিচার্স রুমে জিজ্ঞেসা করার চাইতে ওনাকেই প্রশ্নটা করা যায়, তাতে আমার জড়তাটা অনেক লাঘব হবে, সালাম দিয়ে আসতে পারি বলে প্রশ্নটা করে ফেললাম, হতাশ হতে হল, রুমি আজ আসেনি

চলবে.........

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File