আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.........(৬)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:১৬:০৩ দুপুর



আগের পর্ব: ৫ ..........Click this link

শাকিল দেশ ছেড়েছে তিন বছর হয়ে এলো, এতদিন দেশে যাবার তেমন তাগাদা অনুভব করেনি, দেশের প্রতি তার কিছুটা অনিহা কাজ করে, বড় ভাই বারবার তাগাদা দিচ্ছিল কবে আসবি কবে আসবি, একনাগাড়ে এভাবে বেশিদিন থাকাটা ভাল না, কিছুটা মাইন্ড রিফ্রেশ এর ব্যাপার আছে ইত্যাদি, যখন সে ঘোষণা দিয়েই দিল সামনের মার্চে ছুটিতে যাবে তার পর থেকে একটু একটু দেশের প্রতি মায়া হতে লাগল, প্রথম প্রথম বড় ভাইয়ার ছেলে দুটোর কথা বেশ মনে পড়তো, বিশেষ করে, ছোট ইয়াসিন এর কথা, তখন ওর ২ বছর বয়েস ছিল, শাকিল যখন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরতো, তখন ঘরে ঢুকার সাথে সাথে ইয়াসিন দৌড়ে আসতো, স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতনা, এসেই উপরের দিকে তাকিয়ে একটা হাত বাড়িয়ে বলত চা..চু..টাকা, শাকিল পকেট থেকে এক টাকার কয়েন বের করে দিত, সে খুব খুশি হয়ে দেখতো কয়েনটা, তার পেছনে ওত পেতে থাকত ইয়ামিন, ছো মেরে কয়েনটা নিয়ে ভো দৌড়, সে কান্না জুড়ে দিয়ে পেছন পেছন দৌড়াতো, শাকিল আবার আর একটা কয়েন বের করে দিলে তারপার শান্ত হতো।

কাছে থাকলে বুঝা যায়না এসব ছোট খাট বিষয়গুলো যে কি মায়াকর, এতদিন পর দেশে যাবে সেই ইয়াসিন আর আগের মতো থাকবেনা, দৌড়ে আসবেনা চাচু টাকা বলে, বাড়িয়ে দেবেনা হাতটা, গালের মধ্যে শব্দ রেখে আর কথা বলবেনা, এখন সে স্কুলে যায়, এইতো সেদিন ফোনে কথা হল তার সাথে, চাচ্চু তুমি কবে আসবে, আমার জন্য রং পেন্সিল আনবে....ইত্যাদি

মনিটরে এর ডানে নিচের দিকে একটা নাম ভেসে উঠলো, সুমাইয়া,সাইন ইন হল, তার মানে সুমাইয়া এখন অফিসে আসল আর ঠুস করে নক করে বসবে, কিন্তু না নক করেনি, বেশ কবার সাইন ইন আউট হল কিন্তু নক করেনি, করেছে, তবে পরের দিন

সুমাইয়া:মন ভাল নেই

শাকিল:কার? আমার নাকি আপনার?

সুমাইয়া:আপনার মন ভাল আছে কি নেই সেটা আমি কি করে জানব! আমি আমার মনের কথা বলছি

শাকিল:আপনার মন আছে সেটাইতো জানতামনা, যাক খারাপ হলো সেই সূত্রে অন্তত জানা গেল আপনার মন আছে

সুমাইয়া: ধ্যুর আপনাকে নক করলাম মনটা একটু ভাল করব বলে এখনতো দেখি মেজাজটাও খারাপের পথে

শাকিল: আমার কাছে তো মন ভাল করার অষুধ নেই, কবিতা শুনবেন? গতরাতে লিখেছি, একদম টাটকা, এখনো ধোয়া বের হচেছ

সুমাইয়া: ওকে দিন, আজ শুনব

শাকিল: কবিতার শিরোনাম হলো, অসমাপ্ত প্রেম

মনে পড়ে?

সেদিনের সন্ধ্যায়

আমি ছিড়লাম ঘাস

ভাংলে তুমি কান্নায়।

সেই দিন শুরু

সেই দিন শেষ

সেই থেকে তুমি আমি

দু'জনই নিরুদ্দেশ।

দেখা হয়নি

কথা হয়নি আর

তুমিও নিতে চাইলেনা

ভালবাসার ভার।

কাঁদলে তুমি

সে কি কান্না

এইটাই প্রেম

সেইটাই সান্তনা।

সুমাইয়া: সুন্দর হয়েছে, খুব সুন্দর, ইচ্ছে করছে বুকে জড়িয়ে ধরি

শাকিল: জ্বিনা, এটা বুকে জড়িয়ে ধরতে হবেনা, পানি দিয়ে গুলিয়ে খেতে চাইলে রাজি আছি

সুমাইয়া: আচ্ছা ছেড়া ঘাসগুলো কি করেছেন পরে, খেয়েছেনতো!

শাকিল: হুম ঘাস খেয়েইতো বেঁচে আছি

সুমাইয়া: ঘাসের সাথে আরো কিছু খেয়েছেন মনে হচ্ছে

শাকিল: তাই নাকি? কি সেটা!

সুমাইয়া: ওই যে লিখলেন, এইটাই প্রেম / সেইটাই সান্তনা।

শাকিল: এটা একটা কবিতা, আজকে এক রকম লিখব কালকে লিখব অন্য রকম, এসব দিয়ে কি জীবনের ব্যাখ্যা চলে!

সুমাইয়া:জানিনা আপনার এসব মারফতি ভাষা আমি বুঝবনা, আচ্ছা আপনার জব ষ্ট্যাটাস বলছে আপনার পক্ষে সংগে ফ্যামিলি রাখা সম্ভব কিন্তু আপনি বলছেন পারবেননা কারণ কি?

শাকিল:কারণ হচ্ছে আমি বাংলার মানুষের প্রতি প্রচন্ড বিতৃষ্ণা হয়ে দেশ ছেড়েছি কিন্তু এখানে এসে দেখি মিনি বাংলাদেশ, আমার বস যে কিনা পুরো কোম্পনীটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছে সেও বাংগালী, কোম্পানীর বেশীর ভাগ এম্পলয়ী বাংগালী, আমাদের কোম্পানীর ওনার এক ব্রিটিষ যিনি পুরো কোম্পানী পরিচালনা ভার দিয়ে রেখেছেন বাংগালী বস এর হাতে, যে কিনা এক সময় ওয়ার্কার ছিল, ড্রাইভারও ছিল, অবশ্য তার মেধার তারিফ করতে হয়,তার স্মরণশক্তিটা এক্সেপশনাল বলা যায়, বর্তমানে এখানে ধনী বাংগালীদের মধ্যে অন্যতম তিনি, কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে তার মন মানসিকতা গ্রো করেনি,ওয়ার্কার লেভেলে রয়ে গেছে, আমাদের সব সুযোগ সুবিধা ওনার হাতে, আমি ফ্যামিলি আনব সেটা হয়তো উনি মেনে নিবেননা কেননা ওয়ার্কাররা যেমন ফেমিলী আনতে পারেনা, ওনি সবাইকে ওয়ার্কার ফ্রেমে ভাবতে অভ্যস্থ, আমাদের এক রিয়েল সমান বাংলাদেশি ২০ টাকার মতো কিন্তু আমাদের ইনক্রিমেন্ট বা অন্য কিছুতে উনি বাংলায় চিন্তা করেন, মাত্র এক রিয়াল না ভেবে উনি চিন্তা করেন ২০ টাকা!! শুতরাং বুঝতেই পারছেন ফ্যামিলি আনতে হলে আপনিতো জানেন অনেক ডকুমেন্ট এর ব্যাপার, ওনি ওসব ব্যাপারে হেল্প করবেন বলে মনে হয়না, তাছাড়া এখানে ইউ এ ইর চাইতে হাউজরেন্ট একটু বেশী ইত্যাদি..

সুমাইয়া:তাহলে আপনি এই কোম্পানী ছাড়ছেননা কেন?

শাকিল:ছাড়ছিনা এই জন্য যে, দেশে যাবার কোন ইচ্ছে আমার নেই, দেশ আমাকে টানেনা, আর এই দেশের নিয়ম কানুনটা ইউ এ ই থেকে একটু ডিফরেন্ট, এখানে স্পন্সর থেকে এন ও সি না নিতে পারলে অন্য কোম্পানীতে জব করা যাবেনা, সে ক্ষেত্রে দেশে চলে যেতে হবে এবং দুই বছর পর অন্য একটা কোম্পানীতে জয়েন্ট করা যাবে, শুতরাং বুঝতেই পারছেন, দাশ প্রথাটা এখানে একটু বেশীই পাকাপোক্ত

সুমাইয়া:তাহলে ওখানেই কি মরবেন ধূকে ধূকে!

শাকিল:আমি ধূকে ধূকে মরছি এটা আপনাকে কে বলল?

সুমাইয়া:আপনি ওখানে পড়ে না থেকে ইউরোপেও তো ট্রাই করতে পারেন, একটু চেষ্টা থাকলে কিন্তু সম্ভব

শাকিল: দেখুন আমি আসলে ফিক্সড হয়ে গেছি, আমার চিন্তা চেতনা সব ফ্রিজ হয়ে গেছে, আর স্ট্রাগল করতে মন চায়না

সুমাইয়া:বিয়ের পর হাজব্যান্ড ওয়াইফ সেপারেট থাকবে সেটা আসলে আমি মেনে নিতে পারিনা, ব্যাপারটা আমার পছন্দ না, তাহলে আর বিয়ে করেই বা লাব কি?

শাকিল: তা অবশ্য ঠিক, কিন্তু কি আর করা, তবে আপনি চাইলে আমি আপনার জন্য এখানে জব সার্চ করতে পারি কিংবা আমিও ওখানে শিফ্ট হতে পারি কিনা দেখা যেতে পারে, দুবাইতে আমার খুব ক্লোজড ফ্রেন্ড এক্স কলিগ আছে, ওকে বললে হ্যাল্প করবে নিশ্চয়

সুমাইয়া:শুনেছি আপনিতো দেশেই ভাল যব করতেন, ছাড়লেন কেন?

শাকিল:ওটা আজ না বলি... অন্যদিন বলি? আজ ইচ্ছে করছেনা

সুমাইয়া:ওকে

তারপর শাকিল সুমাইয়া দু'জনই কাজে ডুব দিল সেদিন আর কথা হয়নি তাদের

চলবে....

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File