আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.........(পর্ব-৫)
লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৪৯:৪৭ দুপুর
আগের পর্ব : ৪...Click this link
একটা চুম্বকিয় আকর্ষণ বিকর্ষণে শাকিল সুমাইয়ার জার্নি বাই মেসেজ্ঞার হটমেইল চলতে থাকল, যদিও সেটা রেল লাইনের সমান্তরাল পথের মতো নয়, শাকিল যেন পথ পানে চেয়ে থাকে আর সুমাইয়া দক্ষিণা হাওয়ার মতো একটা দোল দিয়ে যায়
সুমাইয়া: আচ্ছা আমাকে আপনার ভাল লাগেনা?
শাকিল: হুম লাগে খুব, শরতের রৌদ্রের মতো, কাশফুলের দোলার মতো, ঘাসফুলের রং এর মতো, হারিয়ে যাওয়া সিকিটা খুঁজে পাওয়ার আনন্দের মতো.....
সুমাইয়া: একটা রিকোয়েষ্ট করব?
শাকিল: করতে পারেন
সুমাইয়া: রাখবেনতো?
শাকিল: না শুনে কি করে বলি রাখব কি রাখবনা
সুমাইয়া: না শুনেই বলতে হবে আপনি রাখবেন, তারপর আমি বলব কথাটা
শাকিল: ঠিক আছে রাখবনা তবুও বলুন
সুমাইয়া: শুনেন, আমি কবিতা বুঝিওনা পড়িওনা, আমাকে দয়া করে এসব কবিতা টবিতা লিখবেননা
শাকিল: আচ্ছা ঠিক আছে, কবিতা হবেনা, আজ শুধু গল্প হবে, পুষির গল্প, আপনি শুরু করেন আমি চুপ করলাম
সুমাইয়া: পারবনা মুড খারাপ
শাকিল: ঠিক আছে আমি চা বানিয়ে আনছি, চা হবে এককাপ, চিনি দুই চা চামচ, আমরা দুইজনে মিলে খাব, একবার আপনি চুমুক দেবেন আর একবার আমি দেব, সাথে কিছু লাগবে? এই যেমন বেলা বিস্কিট বা মুড়ি......
সুমাইয়া: চিনি দুই চামচে হবেনা, তিন চামচ লাগবে, আপনার মতো তিতা মানুষের হাতের চা দুই চামচে মিষ্টি হবেনা....
শাকিল: জো হুকুম মহারাণী, এই নিন ~O)
সুমাইয়া: তখনো আমি ষ্টুডেন্ড ছিলাম, একদিন শীতের রাত, রাতে ঘুমোতে যাব, বাইরে দরজার পাশে একটা বিড়ালের কান্না শুনতে পেলাম, কান্নাটা আমার কাছে খুব করুণ মনে হলো, মনে হল অসহায় কোন বিড়াল বিপদে পড়েছে, দরজা খুলে দেখলাম সত্যি সত্যে একটা বিড়ালের বাচ্ছা শীতে জড়োসড় কাঁদছে, একটু নাড়া দিলাম, মনে হল পায়ে ব্যাথা পেয়েছে একটু দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়লো, কান্না থামছেনা, আমার মায়া হল খুব, আমি ঘরে নিয়ে আসলাম, ড্রয়িং রুমে সোফার পাশে পেপার বিছিয়ে পুরোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলাম, কান্নাটা আস্তে আস্তে কমে আসল, একটা বাটিতে ভাত আর কিছু তরকারী রেখে দিলাম, সেই রাতে আমার আর ঘুম হয়নি, কি যেন একটা মায়া পড়ে গেল অসহায় বিড়ালটার প্রতি, কিছুক্ষণ পরপর এসে দেখে যাচ্ছি
পরের দিন আপা দুলাভাই দিল বকা আমাকে, সারা রাত বিড়াল নিয়ে এসব কি! বিড়ালটা এখনো দেখছি ঘরে, যাও ছেড়ে দাও বাইরে, ওর পথ ও খুঁজে নেবে
আমি বল্লাম না, বিড়ালটা অসুস্থ, ওর পায়ে ব্যাথা, ভাল না হওয়া পুর্যন্ত আমি ওকে ছেড়ে দেবনা, রেখে দিলাম ঘরে, নাম দিলাম পুষি, সেই থেকে বিড়ালটা আমার কাছে
ধীরে ধীরে ওটা সবার প্রিয় হয়ে গেল, সেও এখন একজন ঘরের মেম্বার, বেড়ে উঠতে লাগল, পা এর ব্যাথাটাও আর নেই, সে এখন আর ছোট নেই অনেক বড় হয়ে গেল, তারপর হলো এক বিপত্তি
কান্না করছে শুধু শুধু, রাতে কাউকে ঘুমোতে দিলনা, সবাই বিরক্ত আমার উপর, ভেভেছিলাম ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না, দুই তিন দিন হয়ে গেল বিড়ালের কান্না থামেনা
শাকিল: আবার কি হল, পায়ে ব্যাথা পেল নাকি?
সুমাইয়া: গাধা, ওর এখন সংগী দরকার
শাকিল: ও ও তাই নাকি, আমারও তো এখন সংগী দরকার তাহলে আমারও কি কাঁদতে হবে!
সুমাইয়া: জ্বি আপনি কাঁদেন বসে বসে আমি গেলাম
শাকিল: আরে না এখন কাঁদতে পারবনা, আগে শেষ করেন
সুমাইয়া: তারপর দুলাভাইকে বল্লাম ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে, দুলাভাই বলল ওনার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তারপর দিলাম আমি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে, ওকে ডাক্তার না দেখালে আমি খাবনা, রুমের দরজা বন্ধ, কথা হবেনা কারো সাথে, অবশেষে দুলাভাই রাজি হলো, নিয়ে গেলাম স্থানিয় হাসপাতালে, ডাক্তাররা শুনে হাসল কিন্তু কেউ ট্রিটমেন্ট করাতে রাজি হলনা, এখানে পশুর চিকিৎসা করানো হয়না, সরি, জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাব, কেউ উত্তর দিতে পারলনা, চলে এলাম
ঘরে এসে ইন্টারনেটে ঢু মারলাম কি করা যায়, ঘাটতে ঘাটতে পেয়ে গেলাম পশু হাসপাতাল এর ঠিকানা দুলাভাইকে সংগে নিয়ে আবার গেলাম ওখানে, একজন ইউরোপিয়ান ডাক্তার ঘটনা শুনে হাসল, তারপর বলল সার্জারী করাতে হবে, করালাম, তারপর ওকে অনেক সেবা শুশ্রুষা করে সুস্থ করলাম, এই হলো বিড়াল কাহিনী।
তারপর আমার এই চাকরীটা হলো, আপার বাসা থেকে ডিস্টেন্ট অনেক বেশী তাই আমি চলে আসলাম অফিসের মহিলা হোষ্টেলে, বিড়ালটা আপার কাছে রেখে আসলাম, আমি প্রতি বৃহষ্পতিবার আপার বাসায় যাই, যাওয়ার সময় বিড়াল এর জন্য বিস্কিট, গোসলের সাবান এসব নিয়ে যায়, শনিবার চলে আসি শোজা অফিসে, মাঝের মধ্যে আমি যদি বৃহষ্পতিবার আপার বাসায় না যায় তাহলে ওইদিন রাতে বা পরের দিনে আপা দুলাভাই রান্না করা খাবার নিয়ে আসে আমার এখানে তিনজন মিলে খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব করি, আমার দুলা ভাইটা খুব ভাল, ওনি যেন আমাদের ঘরের বড় ছেলে, আমাদের ঘরের কোন ডিসিশান ওনি ছড়া হয়না
আজ অনেক বক বক হলো, আমার ছুটির সময় হলো টাটা বাই বাই, টেক কেয়ার এন্ড বি গাধা এন্ড সো এন্ড সো
চলবে....
বিষয়: বিবিধ
১৪০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন