আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.........(পর্ব-৩)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:০৪:৫৮ দুপুর



আগের পর্ব : ২...Click this link

পরের দিন সুমাইয়া অফিস এসেই লগ ইন হল...

সুমাইয়া :হ্যালো আপনি কি আছেন!

শাকিল :হুম আছি

সুমাইয়া : গাধার ছবি দিন, এখানে চিড়িয়া খানায় গাধা আছে কিনা জানিনা, কখনো যাওয়া হয়নি, আমার গাধা দেখার খুব শখ

শাকিল : সব গাধার কিন্তু লেজ থাকেনা

সুমাইয়া : গাধার লেজ কিভাবে লাগাতে হয় সেটা আমার জানা আছে, চিন্তা করবেন না, আমি লাগিয়ে নেব

শাকিল : ওয়েট বস আসছে এদিকে, মনে হয় কোন কাজ দেবে.........

সুমাইয়া : বস গেছে? ছবি কোথায়?

শাকিল : ছবি তো দেয়া হল, আপনি রিসিভ না করলে কি করতে পারি

সুমাইয়া : কি দিলেন কিছুইতো আসেনি

শাকিল : আমিতো দিলাম, না গেলে কি আর করা, মেইল করে দেব?

সুমাইয়া : আাপনাকে গাধা তো এমনি বলেনি, ছবি আসবে কি করে, আমি আছি এম এস এন হটমেইলে, আর আপনি আছেন ইয়াহুতে, আসার তো কথা না, মেইল করে দিন, আর শুনেন হটমেইলে আইডি না থাকলে একটা খুলে নেবেন

শাকিল :ছবি মেইল করা যাবে তবে নুতন একাউন্ট খোলা যাবেনা

সুমাইয়া : কেন?

শাকিল : আমার অত অকাজের টাইম নাই, তারচে বরং আপনি ইয়াহু একাউন্ট করেন

সুমাইয়া : ওয়েট প্লিজ, একটা কাষ্টমার কমপ্লেইন আসছে ওটা একটু সলভ করে দিই..........

সেদিন আর তাদের কথা হয়নি, সুমাইয়ার আইডি সাইন আউট হলো দেখতে পেল শাকিল।

এভাবে না বলে চলে যাওয়া কি উচিৎ! শাকিল ভাবে, কি জানি হয়তো খুবই ব্যাস্ত ছিল।

পরের দু'একদিন তাদের আর যোগাযোগ হয়নি। শাকিল অবশ্য চোখ রাখছিল ইয়াহু মেসেঞ্জারের ফ্রেন্ড লিষ্ট, সুমাইয়ার আইডি টা ইন আউট হচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল নক করবে কিনা, পরে ভাবল না থাক, দেখি সে কি করে।

অবশেষে সুমাইয়াকেই নক করতে হল

সুমাইয়া: কি ব্যাপার আপনি নক করছেননা কেন? আপনি কি দেখতে পাননা আমি অনলাইনে থাকলে?

শাকিল: এমনিতে করা হয়নি

সুমাইয়া: আপনার ছবি কোথায়? ওটাতো মেইল করেননি

শাকিল: না, করা হয়নি

সুমাইয়া: আইডি খুলতে বলেছিলাম, নাকি ওটাও করেননি

শাকিল:আমিতো আপনাকে বলেছি, ইয়াহু ছেড়ে যাবনা

সুমাইয়া:আমিতো প্রথম দিনই বুজেছি আপনি একটা অকর্মার ঢেকি, আপনাকে গাধা নামটা এমনিতেই দেইনি, এই নিন আপনার আইডি, ওটা খুলে ছবি শেয়ার করেন

শাকিল:পাসওয়ার্ড?

সুমাইয়া:imgadha

শাকিল:আপনি গাধা নন, আপনি গাধী, আমি যে গাধা ওটা আমি বুঝি, আপনি যে গাধী ওটাও বুঝেননা হা হা হা, সেই যাই হোক, পাসওয়ার্ড দিন

সুমাইয়া:ওটাই পাস ওয়ার্ড

শাকিল:কোনটা

সুমাইয়া:imgadha

শাকিল:হবেনা, আমি এই আইডি নেবনা, পাসওয়ার্ড চেন্জ করেন

সুমাইয়া:নিজে বানাতে পারেননা, আমি বানিয়ে দিলাম এখন আর ঢং দেখাতে হবেনা, ওটাতে আসুন

সাইন আওট.....

সাইন ইন.......

শাকিল:ছবি দিলাম নিন....

শাকিল:এবার আপনারটা দিন

সুমাইয়া:দিচ্ছি, একটু ওয়েট করুন....



শাকিল:এটা কি দিলেন

সুমাইয়া:ছবি

শাকিল:এটাতো একটা বিড়ালের ছবি

সুমাইয়া:আমাকে বিয়ে করা মানে বিড়ালকেই করা, সুতরাং এটা দেখেই বিয়ে করতে হবে, রাজি না থাকলে বলেন, আমার জন্য পাত্রের অভাব নাই

শাকিল:বুঝলাম

সুমাইয়া:কি বুঝলেন

শাকিল:আমি পাগলির পাললাই পড়েছি

সুমাইয়া:শুনেন, এই বিড়ালটা আমার, আমার পুষি, এটা আমার সাথে থাকে, আমার বিয়ে হলেও এটা আমার সাথে থাকবে, সুতরাং আমি তাকেই মেনে নেব যে আমার পুষিকে মেনে নেবে, অন্যথা টাটা বাই বাই

শাকিল:নিলাম মেনে। বিড়াল পোষার সখটা কিভাবে? আর কি কি পোষেন

সুমাইয়া:পুষির একটা বিরাট হিস্ট্রি আছে, শুনবেন?

শাকিল:হুম শুনব

সুমাইয়া:আচ্ছা আপনার ওখানে আযান দেইনি?

শাকিল: আযান! মাত্র পরিচয় হল এতো তাড়াতাড়ি আযান কেন! আযান তো হবে আরো অনেক পরে, বিয়ে হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে তারপর আযান..

সুমাইয়া:ফাজলামো রাখেন, আমি বলছি মাগরিব এর আযান হল কিনা ওখানে

শাকিল:না আরো ত্রিশ মিনিট বাকি আছে

সুমাইয়া:নামাজ পড়েন?

শাকিল:হুম, তবে.....

সুমাইয়া:তবে কি?

শাকিল:ফজরটা কাযা হয়ে যায়

সুমাইয়া:কেন?

শাকিল:চাইলে অনেক অযুহাত দাঁড় করানো যায়, তবে সত্যি কথা বললে বলা যায় আলশেমি করে উঠিনা, আর আমার অফিস আওয়ার একটু বেশী তাই সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায় ভোরে উঠলে, আযান দেয় চারটা ত্রিশ এ, তখন উঠলে আর ঘুম হয়না, এদিকে লেইট করে ঘুমায়, সব মিলিয়ে উঠা হয়না

সুমাইয়া:এতসব বুঝিনা কাল থেকে যেন ফজর আর কাযা না হয়, আমি কাল প্রথমেই আপনাকে এটা জিজ্ঞাসা করব, যদি শুনি কাজা হল, তাহলে আর কথা নাই....

আমি গেলাম মাগরীবটা পড়ে আসি, আপনি কি করবেন? আমি আসতে আসতে তো আবার আপনার যাবার সময় হবে

শাকিল: আমি সাইন আউট করছি, আজ সারাদিনতো এমনিতেই গেল, অনেক কাজ জমে গেছে, ওগুলো সারতে হবে, এমনিতে মাসের দশ থেকে বিশ তারিখ পর্যন্ত একটু ব্যাস্ত থাকতে হয়, প্রতি মাসে আমাকে মান্থলি সেইল্স ষ্ট্যাটমেন্ট জমা দিতে হয়, আমাদের সব কাজ ম্যানুয়ালি হয়, এম এস ওয়ার্ড আর এক্সেলে করতে হয় সব, তাই এক ঘন্টার কাজ দশ ঘন্টা লাগে।

বেশ কিছুদিন আর যোগাযোগ হয়নি শাকিল, সুমাইয়ার। শাকিল ইচ্ছে করেই নক করেনা, একটা নির্মোহ ভাব নিয়ে থাকবে বলে মনে মনে কল্পনা করে রাখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওটা ধরে রাখা যায়না, নকটা যদিও প্রতিবার সুমাইয়াকেই করতে হয় তবুও কথার ব্যাপ্তি কিছুটা বাড়তেই ধরা পড়ে যায় শাকিলের দূর্বলতা কাজ করছে সুমাইয়ার প্রতি।

শাকিল অফিসের কাজ করছিল কিন্তু আজকাল কাজে মন বসছেনা, বার বার অন্য মনস্ক হয়ে যাচ্ছে, সামনে ছুটিতে যাবে, বিয়ের কথাবার্তা চলছে টুকটাক হয়তো এবার ছুটিতে গেলে বিয়ের কাজটাও সেরে আসতে পারে ইত্যাদি। যারা প্রবাসে থাকে তারা দেশে যাবার দুই একমাস আগে থেকেই দেশের জন্য একটা টান অনুভব করে কখন পৌছবে দেশে, সবার সাথে দেখা হবে, কার কার জন্য গিফ্ট কিনতে হবে ইত্যাদির একটা মিশেলে দুই এক মাস আগে থেকেই মন উচাটন হয়ে যায়, শাকিলেরও তাই হচ্ছে এখন। কাজের ফাঁকে শাকিল ভুলেই গিয়েছিল ঘন্টা খানেক আগে তার মোবাইলে ম্যাসেজ টোন বেজেছিল, ভেবেছিল ইনভয়েসটা শেষ করে দেখবে কিন্তু আর মনে নেই, এখন মনে পড়ল

তন্দ্রা পাঠিয়েছে ম্যাসেজ, " ভাইয়া সালাম নেবেন, বড় ভাইয়া বলেছে সময় করে ফোন করতে, জরুরী কথা আছে", তন্দ্রা।

আজ বুধবার, আগামীকাল বৃহষ্পতি, হাফ ডে, কাল ফোন করা যাবে ভেবে শাকিল আবার কাজে ডুব দিল.....

কাল ফোন করবে সেই পর্যন্ত কিছু সময় আছে এই ফাঁকে শাকিল এর ফ্যামিলি সম্পর্কে একটু ধারণা দিলে কেমন হয়!

শাকিলরা দুই ভাই তিন বোন, সবার বড় বোন তাহছিনা আপা, দুঃখ জিনিসটা উনার ডিকশেনারীতে নেই, সবসময় হাসির উপর থাকবে, শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, যখন শাকিল এর মা মারা গিয়েছিল তার চার/পাঁচ দিন পর বাসার সবাই মিলে যখন বসে আলাপ করছিল তখন তাহছিন আপার কথায় সবাই এমন জোরে হেসে উঠল যে, পাশের বাড়ির খালাম্মা দৌড়ে এসে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে মনে করিয়ে দিল যে মাত্র পাঁচ দিন আগে এই ঘর থেকে একজন বিদায় নিয়েছে তাই এমন হাসির শব্দ বাইরের কেউ শুনলে সমালোচনা করবে। তারপর বড় ভাই সায়িদ শিক্ষকতা করেন, শাকিল যাকে খুব পছন্দ করে এবং গুরুর মতোই সম্মান করে, তারপর ছোট আপা তাহমিনা সংসার এবং চাকরী ও করছে, খুব বদ মেজাজী, ছোট বড় সবাইকে শাসন করার দায়িত্বটা নিজ থেকেই যেন নিয়ে নিয়েছে, বাকী রইল শাকিল এবং তন্দ্রা এখনো লিখাপড়া করছে অনার্স থার্ড ইয়ার।

চলবে..................

বিষয়: বিবিধ

১৯৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File