আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে.....(২০)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৪ মে, ২০১৩, ১২:৫১:৩৩ দুপুর



আগের পর্ব : ১৯..Click this link

মাস এক পরের ঘটনা, আমাদের আর দেখা হয়নি, কথা হয়েছে ফোনে দু'একবার, রমযান মাস ছিল, মধ্য রমযান, সবাই ব্যাস্ত ঈদের কেনা কাটায়, ঈদের কেনাকাটার প্রতি আমার তেমন একটা আগ্রহ কাজ করেনা সেটা অনেক বছর ধরে, ছোট বেলায় মধ্যবিত্তের টানাপোড়নের সংসারে ঈদ এর নতুন জামা কাপড় নিয়ে মান অভিমানের হরেক কথা মনে পড়লেও যখন বুঝতে শিখেছি এটাই বাস্তবতা তখন থেকে বিষয়গুলো আমার কাছে স্বাভবিকই বলে মনে হয়। এখন যদিও ঈদে নতুন জামা কাপড় কেনা হয় তবুও এগুলো নিয়ে কোন অতি আগ্রহ কাজ করেনা।

ছোট বেলার ঈদ এর একটা ঘটনা শেয়ার করা যাক, আমাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের দর্জী দোকান ছিল আমাদের ঘরের খুব কাছেই, আমাদের নূর ভাই, গ্রাম থেকে শহরে এসে প্রথম যখন দর্জি দোকানটা দিলেন আমার মা খুব হ্যাল্প করেছিলেন সেটা একটু অন্যভাবে, দোকানে রান্নার সমস্যা হলে প্রায়ই দেখতাম বাজার করে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিতেন, আম্মা রান্না করে রাখতেন, ওনি এসে নিয়ে যেতেন, দোকানে মেশীনের শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত হলে আমাদের ঘরে এসে ঘুম দিতেন, এধরনের ছোটখাট টুকিটাকি বিষয়ে মা হ্যাল্প করতেন এবং কখনো দেখিনি বিন্দু পরিমাণ বিরক্তবোধ করছেন।

আমাদের ঘরের সবার কাপড় শেলাই ওখানেই হতো এবং বিনে পয়সায়, সম্পর্কটা এতো আপন ছিল যে, সেখানে টাকা পয়সার আর ব্যাপার ছিলনা, আমাদের প্রায়ই জামা কাপড় সেলাই করে দিতেন নিজ থেকেই, আসলে কাষ্টমার এর দেয়া অতিরিক্ত খুচরো কাপড় ছিল মূল উৎস।

একবার ঈদে নূর ভাই বাবাকে বললেন আমার জন্য যেন শার্ট প্যান্ট কেনা না হয় উনি দেবেন, উনার কাছে ভাল কাপড় আছে, আমি তো অপেক্ষায় আছি কখন আমার জামা কাপড় আসবে।যেহেতু ঈদ মৌষম কাজের খু্ব চাপ থাকে তায় জিজ্ঞেস করলে দেব দেব বলতেন কিন্তু ঈদ চলেই এলো আমার শার্ট প্যান্ট আর শেলাই হয়নি, ঈদ এর আগের দিন দোকানে গিয়ে বসে রইলাম, নূর ভাই বলল তুমি বাসায় যাও আমি নিয়ে আসছি কিন্তু আর আসলেননা রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠেই মাকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার জামা কাপড় নূর ভাই দিয়ে গেছে কিনা, মা বলল না দিয়ে যায়নি, তুই এক কাজ কর, সম্ভবত নিয়ে আসার টাইম পায়নি তুই গিয়ে নিয়ে আয়

আমার খুব কান্না পাচ্ছিল আর রাগ হচ্ছিল, তবুও দৌড়ে গেলাম নূর ভাই এর দোকানে, দোকান বন্ধই ছিল, তবে ভেতরে তখনো ওরা কাজ করছে, ব্যাপারটা আমি তখন বুঝিনি কিন্তু বড় হয়ে যখন আমার ঘটনাটা মনে পড়ে তখন বুঝলাম কেন এমন হল, ওরা সারা রাত ধরে কাপড় শেলাই করেছে, কেউ ঘুম যায়নি, ঈদ এর দিন সকালেও দু'চার জন কাষ্টমার এর কাপড় ডেলিভারী দেয়া হবে, আমি গিয়ে দরজা নক করতেই আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়া হল, আমি বসে বসে দেখছি, এক কর্মচারী আমার শার্ট আর প্যান্টে বোতাম লাগাচ্ছে, অন্যরাও খুব দ্রুত মেশীন চালাচ্ছে গরর গরর শব্দে, এখনই ক্লায়েন্ট এসে চিল্লাচিল্লি করবে যদি এসে দেখে তাদের কাজগুলো শেষ হয়নি

আমার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে বোতাম লাগানো শেষ হয়না কেন! দরজার ফাঁকে দেখতে পেলাম সবাই ছুটছে মসজিদ এর দিকে নামাজ পড়ার জন্য, আমার তাহলে আর নামাজ পড়া হবেনা! এখনো গোসল করা বাকি, বোতাম লাগানো হলো এবার আয়রন করার পালা, আয়রন মেশীন এর প্লাগ লাগানো হল, গরম হবার অপেক্ষা, মনে মনে ভাবছিলাম আয়রন না করে নিয়ে যাই, এরই মাঝে দু'একজন কাষ্টমার তাদের কাপড় নিয়ে গেছে, সবশেষে শুধু আমারটাই বাকি

দরজার ফাঁকে দেখতে পেলাম সবাই নাময শেষে ঘরমুখি, আমার খুব মন খারাপ হলো, বাসায় গিয়ে খুব করে কেঁদেছিলাম, নূর ভাইয়ার তখন ঘুমের আয়োজন আর দোকানের কর্মচারীরা ব্যাগ গুছানো শুরু দেশের বাড়ীতে যাবে।

রুমির ফোন এলো, তুমি কি একটু আসতে পারবে? তোমার অফিসের পাশের মার্কেটটায়?

চলবে..........

বিষয়: বিবিধ

১৭৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File