আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে........(১৩)

লিখেছেন লিখেছেন অন্য চোখে ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:০৪:৩৯ দুপুর



আগের পর্ব : ১২..Click this link

আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি একজন ছাত্র, কোন ফাঁকে অনার্স শেষ করে মাষ্টার্স এর শেষের দিকে এসে পড়লাম, পরীক্ষা দোড় গোড়ায়, ছুটির এপ্লিকেশান জমা দিয়ে রেখেছি, পরীক্ষা যেহেতু এক নাগাড়ে ছিলনা আমিও তাই দুই দিন করে ছুটি নিয়েছি, যেদিন পরীক্ষা সেদিন এবং তার আগের দিন

@

পরীক্ষার আগে আমার স্বভাব চরিত্রের বেশ কিছু পরিবর্তন হতে থাকল চোখে পড়ার মতো, আমি অন্য মনস্ক হয়ে পড়ছি, আচরনে কিছুটা অস্বাভাকিতা এবং কথাবার্তা কমিয়ে দিয়ে এমন এক আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল যে সবাই বুঝতে পারছিল আমি নিশ্চিত কোন একটা সমস্যায় আছি

@

ইমতিদা আর নাহিম ভাই আমাকে ডেকে পাঠালেন কনফারেন্স রুমে, ওখানে কেন যেতে বলল খটকা লাগার কথা কিন্তু আমার মাথায় তখন কিছু কাজ করছিলনা চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার উপর, রুমে গিয়ে দেখলাম ইমতিদা আর নাহিম ভাই বসে আলাপ করছে, আমি ঢুকে বললাম কি ব্যাপার মিটিং কিসের, ওরা বলল মিটিং হচ্ছে আপনাকে নিয়ে, বললাম আমাকে নিয়ে! ! আমি আবার কি ঝামেলা পাকালাম!

@

দু'জনই আমাকে চেপে ধরল, আমার কি হয়েছে বলতেই হবে, বললাম আমারতো কিছুই হয়নি, কি বলব! ছাড়া পেলামনা কিছু একটা বলতেই হলো, সেই কিছু একটা বলতে গিয়ে আমি সেদিন বুঝতে পারিনি ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু,

আমি সেদিন ওনাদের বলেছিলাম, " দেখুন আমি মনে করি আমার তেমন কিছু হয়নি, তবুও আপনারা যখন চাপাচাপি করছেন এবং একটা কিছুই বলতে হচ্ছে, তাহলে বলা যায় একটা কারন হতে পারে, রুমি।" এই প্রথম রুমি শব্দটা আমি দ্বিতিয় কিংবা তৃতীয় কারো সাথে শেয়ার করলাম, " আমি নিজেকেই কখনো জিজ্ঞাসা করে দেখিনে রুমি নামের কাউকে আমি পছন্দ করি কিনা কিংবা আজকাল যেটাকে ভালবাসা বলে তেমন কিছু, কিন্তু কেন জানিনা ইদানিং আমার কাছে মনে হচ্ছে মাঝের মধ্যে কলেজে গেলে রুমির সাথে আমার দেখা হতো, কথা হতো সেটা আর হবেনা আমাদের পরীক্ষার পর, সবাই যে যার পথে চলে যাবো, কোথায় যাব আমি আমরা জানিনা, রুমির গন্তব্যও আমার জানা নেই তবুও আমি ওকে না দেখার কিংবা যোগাযোগ না হবার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিনা, আর যেহেতু আমার ভাবনাটার কোন শেকড় নেই তায় এটার কোন সমাধানও নেই, জীবনতো এমনই, সব কিছুর সমাধান হতে হবে তারতো শিওরিটি নেই, আমি জানি আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি এবং সেটা কাটিয়ে উঠা আমার খুব দরকার এবং আমি সেটা কাটিয়ে উঠবো তাও জানি কিন্তু সবতো আর বললেই হয়ে যায়না, একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে সময় আমাকে ঠিক করে নেবে, এই হল অবস্থা...

@

সব শুনে ইমতিদা আর নাহিম ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন আমি যদি অনুমতি দেয় তাহলে ব্যাপারটা নিয়ে এগুতো চান, এ ক্ষেত্রে ইমতিদা আমার আপাত গার্জিয়ান এর ভূমিকাটা নেবেন, সরাসরি রুমির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হবে, নাহিম ভাই থাকবেন সাথে, আমি শুধু বলেছিলাম আমার মাথায় কিছু আসছেনা, তবে এটা বলেছিলাম, "আপনারা যদি মনে করেন আপনারা সাকসেস হতে পারবেন তা হলে এগুতে পারেন তবে মাঝপথে এসে যদি হাল ছেড়ে দেন আমি নিশ্চিত আমার মনোজগতে একটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ব যেটা সামলানো আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়বে, এখন যেটা পারছি তখন সেটা নাও পারতে পারি

@

আমার ভয়টা ছিল রুমির মা এর ব্যাপারে, ওনি মেয়ের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এবং আমার মতো একটা ছাপোষা ছেলের ব্যাপারে ওনার ন্যুনতম আগ্রহ থাকবেনা সেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম কিন্তু ইমতিদা তা মানতে নারাজ, ইমতিদা আমাকে বুঝালেন আমি নিজেকে নিজে আন্ডার স্টিম্যাট করছি, নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সবকিছু ছক বাঁধা নিয়মে হয়না

@

ইমতিদার ঘটনাটা এমন, ওনি আর ভাবি সহপাঠি ছিলেন, ভাবির পরিবারের সবাই থাকে ইউ এস এ, ইমতিদাও ভাবিকে পছন্দ করতেন কিন্তু বলার আর সময় হয়ে উঠেনি, ভাবিও পড়ার ফাঁকে হুট করে চলে গেলেন স্বপ্নের দেশে, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ব্যাবসার হাল ধরলেন আর পড়ালিখাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন, একসময় ছুটিতে দেশে এলেন, ইমতিদা দ্বিধা সংকোচহীন বলে দিলেন, ভাল লাগে পছন্দ করি, ভাবি প্রথমে একটু অপ্রস্তুত ছিলেন এবং ব্যাপারটা অভিভাবকদের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন, ইমতিদা নিজে স্মার্টলি সব ফেইস করেছিলেন এবং বিয়েটা হয়ে গেল, ভাবি চলে গেলেন ইউ এস এ, এবং ইমতিদা যাবার কাগপজত্র প্রসেসিং হচ্ছে, যে কোনদিন হয়তো বিদায় নেবেন আমাদের কাছ থেকে, ইমতিদা শুধু উপদেশটা দিলেন স্মার্টলি ফেইস না করলে হাতের মুঠোয় থাকার পরও ফসকে যেতে পারে যে কোন কিছুই

চলবে.......

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File